চাহিদার চেয়ে বাড়তি ছোলা আমদানি, লোকসানের আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা
এবারে রমজান শুরুর আগেই বাজারে কমতে শুরু করেছে ছোলার দাম। খুচরা বাজারে কেজি প্রতি ১০০ টাকা থেকে কমে এখন ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকায়। কয়েকদিনের মধ্যে ছোলার দাম আরো কমে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
দেশে এবার চাহিদার তুলনায় ছোলা বেশি আমদানি হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা তাদের লোকসান হচ্ছে বললেও ভোক্তারা স্বস্তিতে আছেন। ভোক্তারা বলছেন, বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য মন্দার কারণে যে হারে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে চলেছে এমন পরিস্থিতিতে রমজানে ছোলার দাম স্বাভাবিক থাকা ইতিবাচক।
রমজানকে কেন্দ্র করে একটি সিন্ডিকেট সব সময় দাম বাড়ানোর চেষ্টা করতো। প্রতিবছর রমজানে নিত্য ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিলেও এবার চিত্র ভিন্ন।
দেশে প্রতিবছর ছোলার বাার্ষিক চাহিদা ১ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। সেখানে ২০২৩ সালের আড়াই মাসে চট্টগ্রাম বন্দর সহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ছোলা আমদানি হয়েছে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন। রমজানের শেষ পর্যন্ত এই পরিমাণ প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টনে পৌঁছাবে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।
কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, "সম্প্রতি কেজিপ্রতি ছোলা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এখন সেটি আগের বছরের দামের সমতায় ফিরেছে। এটি নিঃসন্দেহে ভোক্তাদের জন্য স্বস্তির খবর।"
গত বছরের শুরুতে ছোলার কেজিপ্রতি গড় আমদানি মূল্য ছিল প্রায় ৫৬ টাকা। মানভেদে পাইকারি ছোলার কেজিপ্রতি দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। খুচরা বাজারে ছোলা বিক্রি হয়েছিল কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।
বর্তমানে আমদানিতে কেজিপ্রতি ছোলার গড় মূল্য পড়ছে ৮৮ টাকা। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। খুচরা বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকায়।
মিরসরাইয়ের খুচরা ব্যবসায়ী মানিক চন্দ্র দাশ টিবিএসকে বলেন, "গত বছরের তুলনায় ছোলার দাম খুব বেশি বাড়েনি। দুয়েক দিনের মধ্যে খুচরা পর্যায়ে ছোলার দাম আরো কমে যেতে পারে।"
সাধারণত দেশে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে রমজানে ছোলার চাহিদা থাকে বেশি। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে ডলার সংকটের কারণে ভোগ্যপণ্য আমদানি বিঘ্ন হয়। যে কারণে গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে মাত্র ২০ হাজার টন ছোলা আমদানি হয়েছে।
অন্যান্য বছর ছোলার চাহিদার ৮০ শতাংশ আসতো অস্ট্রেলিয়া থেকে। এছাড়া ভারত, মিয়ানমার, কানাডা, ইথিওপিয়া, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ছোলা আমদানি হয়।
ডলার সংকটের কারণে অস্ট্রেলিয়া থেকে ছোলা আমদানি ব্যাহত হওয়ায় এই সময়ে ভারত থেকে সেসব ছোলা আমদানি করছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। এতে গত জানুয়ারি থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত মাত্র আড়াই মাসে দেশে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন ছোলা আমদানি হয়, যা দেশের বার্ষিক মোট চাহিদার চেয়েও বেশি। এমনকি এখনো পর্যন্ত আমদানি অব্যাহত রয়েছে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম টিবিএসকে বলেন, "ভারত থেকে ব্যাপক হারে ছোলা আমদানির নজির গত ১৫ বছরেও দেখিনি। রমজানে ছোলার দাম ক্রেতার নাগালের মধ্যে থাকলেও ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়ছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার যে অভিযোগ রয়েছে সেটি এবার ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ব্যবসায় লাভ-লোকসান থাকবে। সবাইকে পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে হবে।"
ছোলা আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ব্যাংক থেকে ঋণপত্র খুলতে হয়েছে। কিন্তু আমদানির পর লোকসানে পড়েছেন তারা।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়ৎদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি মেসার্স তৈয়বিয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সোলায়মান বাদশা টিবিএসকে বলেন, "আমদানি মূল্যের চাইতে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা কম দামে ছোলা বিক্রি করতে হচ্ছে। ক্রমশ কমছে ছোলার দাম। রোজার আগে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ছোলার যে পরিমাণ বিক্রি হতো এখন তা কমে গেছে প্রায় অর্ধেক।"
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে ছোলার আমদানি মূল্য।
২০২১ সালের শেষ ছয় মাসে কেজিপ্রতি ছোলার আমদানি মূল্য ছিলো ৫৪.১২ টাকা। এরপর ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছোলার আমদানি মূল্য ৫৫.৫৪ টাকা, জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৭.৮০ টাকা এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত ছোলার আমদানি মূল্য পড়ে ৮৮.২৭ টাকা।