যারা সন্তানদের অভিজাত স্কুলে ভর্তি করাতে পারে না: দেশে দেশে ঋণখেলাপিদের শাস্তি
ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ যাওয়া, বাড়ি-গাড়ি ও কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ তাদের রাজনৈতিক দলের কমিটিতে না রাখার বিধান রেখে ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২৩ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এক পরিবার থেকে তিনজনের বেশি ব্যাংক পরিচালক হওয়া যাবে না বলেও বিধান রয়েছে এতে।
৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে আইএমএফের কাছে আর্থিক খাত সংস্কারের নতুন অঙ্গীকার করে বাংলাদেশ। সেই প্রতিশ্রুতি অনুসরণেই মন্ত্রিসভা খসড়াটির অনুমোদন দিয়েছে। এই অনুমোদনকে ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান হিসাবে দেখা হচ্ছে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকা পাঠাতে পারবে এবং তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, গাড়ি ও বাড়ি রেজিস্ট্রেশনে নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা, আরজেএসসি এর নিকট কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
কেউ নিজের বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণ নেওয়ার পর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণের অংশ বা অর্জিত সুদ পরিশোধ না করলে তিনি ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবেন।
ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন সম্মাননা পাবার বা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না এবং কোন পেশাজীবী, ব্যবসায়িক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক সংগঠনের কোন কমিটিতে থাকতে পারবে না বলে উল্লেখ রয়েছে খসড়া আইনটিতে।
আসলে কোনোভাবেই যেন নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না অসাধু ঋণখেলাপিদের। এরই সর্বশেষ উদ্যোগ হিসাবে ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২৩ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিলো মন্ত্রিসভা।
এমন উদ্যোগ শুধু বাংলাদেশেই নয়, ঋণখেলাপিদের সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ নানান সময় বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে।
ভারতে যেসব ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণের মেয়াদ বাড়িয়েছে তাদের মাধ্যমে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের নাম একটি সরকারি ডেটাবেজে প্রকাশ করা হয়। ফলে খেলাপিদের ক্রেডিট স্কোর বা ভবিষ্যতে ঋণ পাওয়ার সক্ষমতায় গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। কিছু ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগসহ আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে তাদের পাওনাদার বা ঋণদাতারা মামলা করতে পারে। মামলায় খেলাপি বলে প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে একটি রায় দেওয়া যেতে পারে। যার আওতায় তাদের আয়, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা বা ঋণ সংগ্রহের অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।
সাধারণ নাগরিকরা যেসব সামাজিক সুবিধা সহজেই ভোগ করে, ঋণ খেলাপিদের ক্ষেত্রে সেগুলোর ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ দিয়ে শাস্তি প্রদান করে চীন।
যেমন তারা বিমান, উচ্চগতির ট্রেনের টিকেট কিনতে পারে না। আবার বাণিজ্যিক সংস্থার নির্বাহী বা প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করতেও পারে না। এই কালো তালিকায় চীনের অনেক রাজনৈতিক সংস্থা, আইনসভা এবং সরকারি কর্মীও রয়েছে। এই শাস্তিতে কোন ব্যতিক্রম করা হয়নি। এমনকি তারা কোনো আবাসিক সম্পত্তিও কিনতে পারে না।
মালয়েশিয়াও ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। মালয়েশিয়ায় খেলাপিদের দেশ ছাড়ার অনুমতি নেই।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন টিবিএসকে বলেন, "আমি শুনেছি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সংশোধনীতে এসেছে। এর পাশাপাশি এসব ব্যক্তিদের সামাজিকভাবে চাপে রাখা উচিত, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করা উচিত।"
"চীন সহ অনেক দেশে এ ধরনের খেলাপিদের সন্তানেরা অভিজাত স্কুলে ভর্তি হতে পারে না। আমাদেরও সে পথ অনুসরণ করা উচিত। কেবলমাত্র বিদেশ ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা যথেষ্ট নয়, তাছাড়া এসব নীতির খুব বেশি বাস্তবায়নও আমরা দেখি নি।"