মধ্যম থেকে উচ্চ-আয়ের পথে যাত্রা: বাংলাদেশ যেভাবে জয়ী হতে পারে
কোভিড-১৯ মহামারি আঘাত হানার আগে ২০২৬ সালের নভেম্বরে এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে চমৎকারভাবে এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মহামারির কারণে গত এক দশকের টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও অন্যান্য অর্জন স্থবির হয়ে পড়ে। মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা শুরু করতেই নতুন করে আবারও বাধা আসে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে — ওলটপালট হয়ে যায় পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট বইয়ে ভারসাম্যের হিসাব ও উন্নত প্রবৃদ্ধি অর্জনের কৌশলগত প্রচেষ্টা।
আগামী বাজেট এলডিসি থেকে উত্তরণের বছরের আগে শেষ বাজেটের আগের বাজেট। বছর শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথাও রয়েছে। মহামারি ও যুদ্ধের কারণে দুইবার ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষদের সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের দুর্বল আর্থিক সক্ষমতা দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে মহামারিপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে আগামী বাজেট তৈরি করা সরকারের জন্য একটি নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জ হবে। এ কাজটা ভয়ংকর কঠিন, তবে একেবারে অসম্ভব কিছু নয়। যেটা দরকার তা হলো, অর্থনীতির সব খাতে বড় একটা ধাক্কা — যেমনটা করে দেখিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশের প্রায় ৪৫ বছর লেগেছে। স্বাধীনতার সাড়ে পাঁচ দশক পরে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার পথে রয়েছে এখন বাংলাদেশ। দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে। এ মাইলফলক অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে দুই দশকের কম সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নির্ধারিত ৮ শতাংশের ওপরে ধরে রাখতে হবে এবং মাথাপিছু আয় বর্তমানের ২ হাজার ৮২৪ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৩ হাজার ডলারে নিয়ে যেতে হবে।
এই বড় স্বপ্নের পেছনে ছোটার সময় একটি দেশের এক আয়সীমা থেকে পরবর্তী আয়সীমায় পৌঁছাতে কতটুকু সময় প্রয়োজন, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন চিন্তাবিদদের মধ্যে চলমান বিতর্কেরও নিরসন করতে হবে বাংলাদেশকে। উত্তরণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। তবে বিশ্ব-অর্থনীতির ইতিহাসে চোখ বোলালে দেখা যায়, এ যাত্রাটা কখনো এক শতকের হতে পারে আবার এক দশকের মধ্যেই একটি রাষ্ট্র মাথাপিছু আয়ের উত্তরণ ঘটাতে পারে। বিষয়টি নির্ভর করে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তার ওপর। নিম্ন মাথাপিছু আয় থেকে উচ্চ মাথাপিছু আয়ে পৌঁছাতে এশিয়ার দেশগুলো ইউরোপের দেশগুলোর চেয়ে কম সময় নিয়েছে। আবার অনেক দেশ আছে যেগুলো মাথাপিছু আয়ের একটি পর্যায়েই পড়ে আছে কয়েক দশক ধরে — এহেন পরিস্থিতিকে অর্থনীতির ভাষায় বলা হচ্ছে 'মধ্যম আয়ের ফাঁদ'।
এ ধরনের ফাঁদ কি আদৌ আছে? যদি সত্যিই থাকে, তাহলে কিছু দেশ একে এড়াতে বা সামলাতে পারলেও, অন্যরা পারেনি কেন? বাংলাদেশও কি এ ফাঁদ এড়িয়ে নিজ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে?
এমন অনেক উদাহরণ আছে যেগুলো দেখলে মনে হয় বাংলাদেশের পক্ষে তা করা সম্ভব। আবার উল্টোটি হওয়ার সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করার উদাহরণও কম নয়। অনেক দেশ নিজেদের তৈরি করা এ ফাঁদে আটকা পড়েছে। সব সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও মালয়েশিয়ার সফল অর্থনৈতিক শক্তিকে বাধাগ্রস্ত করার পেছনে যেসব প্রভাবক ছিল সেগুলোর মধ্যে সুশাসনের অভাব ও দুর্নীতির কথা উল্লেখ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।
মালয়েশিয়া নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয় ১৯৬৯ সালে। এর ২৭ বছর পর ১৯৯৬ সালে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের পর্যায়ে পৌঁছে। বর্তমানে এ আয়সীমানাতেই রয়েছে দেশটি। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার গল্পটি ভিন্ন। মালয়েশিয়ার সঙ্গে একই বছর নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হয় দক্ষিণ কোরিয়া। এর ১৯ বছর পরে পরের ধাপে এবং তার সাত বছরের মাথায় ১৯৯৫ সালে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হয় কোরিয়া।
ফাঁদ হোক বা না হোক, এ যাত্রাটি চড়াই-উৎরাইয়ে ভরপুর এবং সামনের কাজটা কষ্টসাধ্য। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছার পর আট বছর পার হয়েছে। আগামী আট বছরের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয় এবং ১৮ বছরের মাথায় উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে চায় বাংলাদেশ। এ প্রত্যাশিত দ্রুতগতিতে এগোনোর জন্য বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় কী কী পদক্ষেপ কত দ্রুত ও সুনির্দিষ্টভাবে নেবে, তার ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের এই যাত্রা কত দীর্ঘ হবে।
যেসব দেশ অতীতে এই যাত্রায় সফলকাম হয়েছে তাদের ইতিহাসের দিকে তাকালে কিছু ধারণা পাওয়া যাবে।
কিছু দেশ যেভাবে সাফল্য পেয়েছে
জাপান: আয় দ্বিগুণ করেছে
উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দৌড়ে নিজেদের প্রস্তুত করতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও নীতিমালা তৈরিতে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশকে প্রধান উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়।
শিক্ষা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উদ্ভাবন ইত্যাদি মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল পূর্ব এশিয়ার এই তিন দেশ। এসবের মাধ্যমে আয় বাড়ানো এবং ধনী ও গরিবের মধ্যে পার্থক্য কমিয়ে সামাজিক সম্পদের ভারসাম্য আনার কাজ করেছিল দেশগুলো।
জাপান ১০ বছরের মধ্যে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ করার উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিধ্বস্ত জাপান যখন এ পরিকল্পনা নেয়, তখন পরিস্থিতির বিবেচনায় তা অসম্ভব একটি মিশন বলে মনে হয়েছিল।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি জনগণের আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে একাধারে বেশ কিছু সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে যার সুফল পাওয়া শুরু হয় ১৯৬০-এর দশক থেকে। ১৯৬০-এর দশককে জাপানের 'সোনালি ষাট' বলা হয়। ছয় বছরের মাথায় মোট জাতীয় উৎপাদন (জিএনপি) দ্বিগুণ হয় দেশটির — মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ সাত বছরে।
কৃষি খাতে দেশটির সরকার খামারে উৎপাদিত পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং উৎপাদন দক্ষতার পৃষ্ঠপোষকতা করে। শিল্প খাতে কর কমানো হয় এবং ঋণগ্রহণ ও খরচ কমানোর সুবিধার্থে সুদহার হ্রাস করা হয়। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ উদারবাদ চালু করে ও বেতনের ক্ষেত্রে পার্থক্য কমায়।
জাপান সরকার অবকাঠামো, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও বিপুল বিনিয়োগ করে। এছাড়া শহুরে ও গ্রামীণ উন্নয়নে ভারসাম্য আনার ক্ষেত্রেও কাজ করে জাপান।
দক্ষিণ কোরিয়া: গ্রামাঞ্চলের উন্নয়ন
শহুরে ও গ্রামীণ এলাকায় জীবনমানের ক্রমবর্ধমান পার্থক্য দূর করতে ১৯৭০ সালে 'নিউ ভিলেজ মুভমেন্ট' শুরু করে দক্ষিণ কোরিয়া।
এ আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে মৌলিক জীবনমান ও পরিবেশ উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়। এরপরের প্রকল্পগুলোতে গ্রামীণ আবকাঠামো নির্মাণ ও কম্যুনিটি আয় বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়।
গ্রামীণ এলাকার সাফল্যের দরুন এ আন্দোলন দেশটির শিল্পোন্নত ও শহুরে এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে দেশজুড়ে আধুনিকায়ন আন্দোলনে পরিণত হয় এটি।
কয়েক দশকব্যাপী স্থায়ী এ অর্থনৈতিক আন্দোলনের কল্যাণে দক্ষিণ কোরিয়ার কৃষকদের আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যায়। এমনকি এক পর্যায়ে গ্রামীণ কৃষকদের আয় শহুরে বাসিন্দাদের চেয়েও বেশি হয়।
১৯৯০-এর দশকে দক্ষিণ কোরিয়ায় নগরায়নের হার ৭০ শতাংশে পৌঁছায়। দেশটিতে একসময় মোট জনগণের ৮০ শতাংশ গ্রামে বাস করত, ওই দশকে গ্রামীণ জনগণের সংখ্যা কমে ১০ শতাংশে নেমে যায়।
নিউ ভিলেজ মুভমেন্টের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করার মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষ ও সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীগুলোর ওপর বাড়তি মনোযোগ দেয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বৈশ্বিক থিংকট্যাংক টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল চেঞ্জ দক্ষিণ কোরিয়ার সাফল্যের পেছনে তিনটি প্রভাবকের কথা উল্লেখ করেছে। এগুলো হলো — কার্যকরী প্রয়োগসহ সুপরিকল্পিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ সরকারি নীতিমালা; রেন্ট-সিকিং পদ্ধতি কমানোর নিশ্চয়তা দেওয়া কোম্পানিগুলোকে শর্তসাপেক্ষে সহায়তা প্রদান; এবং প্রযুক্তিভিত্তিক শর্ট-সাইকেল খাতসহ উদ্ভাবনের দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার পাশাপাশি কার্যকরভাবে জনসম্পদ সরবরাহ করা।
সিঙ্গাপুর: শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ
১৯৬৫ সালে মালয়েশিয়া থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া সিঙ্গাপুর মেধা অন্বেষণ কর্মসূচি নেয়। দেশটি শিক্ষাকে সাফল্যের মূলমন্ত্র বিবেচনা করতে শুরু করে।
১৯৮০-এর দশকের পর থেকে সিঙ্গাপুরের সরকার শিক্ষা খাতকে জনগণের ওপর বিনিয়োগ হিসেবে বেছে নেয়। এর মাধ্যমে দেশটি মানবসম্পদ গড়ে তোলার ওপর প্রচুর জোর দেয়।
পরিসংখ্যান বলছে, সিঙ্গাপুরের বার্ষিক বাজেটের ন্যূনতম ১২ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে এ হার ৩৫ শতাংশেও পৌঁছায়।
দেশটিতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ও উচ্চশিক্ষা — বেশিরভাগক্ষেত্রেই রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। সরকার মৌলিক শিক্ষা, উচ্চতর শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের ওপর সমান গুরুত্ব দেয়। এটি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ও ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ে উৎসাহ দেয়, এবং দেশটিতে স্বায়ত্তশাসিত বিদ্যালয়গুলো নিজেদের মতো করে পাঠ্যক্রম তৈরি করতে পারে।
উচ্চশিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের জনগণ আরও বেশি দক্ষ ও পেশাদার হয়ে উঠেছে। এর ফলে তাদের চাকরির সুযোগ ও আয় দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। জনগণের এ অংশই ধীরে ধীরে সিঙ্গাপুরের মধ্যবিত্ত সমাজের সবচেয়ে সক্রিয় অংশ হয়ে উঠেছে।
সিঙ্গাপুর সরকার বিদেশি দক্ষ পেশাদার মানুষদের দেশটিতে কাজ ও বাস করতে বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা দিয়ে থাকে। এভাবে স্থানীয় ও বিদেশি পেশাদার মানুষেরা সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিতে তাদের জ্ঞান ও দক্ষতার মাধ্যমে অবদান রাখছে।
স্থিতিশীল ও মূলধারার মধ্যবিত্ত গোষ্ঠীর সমর্থনের মাধ্যমে তিনটি দেশ সফলভাবে উচ্চ আয়ের কাতারে পৌঁছেছে। তাদের এ যাত্রায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বা শূন্য সহনশীলতা ছিল একটি বড় নিদর্শক।
অন্যরা যে কারণে পারেনি
গত অর্ধশত বছরে অনেক সম্ভাবনামায় অর্থনীতি মধ্যম আয়সীমায় আটকে আছে। বিশ্বব্যাংকের বছর দশেক আগে প্রকাশিত 'চায়না ২০৩০' শীর্ষক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১৯৬০ সালের ১০১টি মধ্যম আয়ের দেশের কেবল ১৩টি ২০০৮ সালের মধ্যে উচ্চআয়ের দেশে পরিণত হয়।
পরিস্থিতি কি খুব একটা বদলেছে?
দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-এর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৯৬০ সালে মধ্যম আয়ের কাতারে থাকা দেশগুলোর মধ্যে ২৩টি দেশ ২০২২ সাল নাগাদ উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। এই ২৩টি দেশের এ উত্তরণকে অতীতের কঠিন দশকের সাপেক্ষে অপ্রত্যাশিত অগ্রগতি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। উত্তরণ ঘটানো এ দেশগুলো হলো — উপসাগরীয় দেশ বাহরাইন, ওমান ও সৌদি আরব; ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয়টি দেশ: ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, হাঙ্গেরি, মাল্টা, পোল্যান্ড ও স্লোভেনিয়া। আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র সিশেলস উচ্চ আয়ের দেশের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলেও ওই অঞ্চলের অন্য দুই দেশ নিরক্ষীয় গিনি ও মরিশাসকে ২০০৮ সালে উচ্চ আয়ের দেশ বিবেচনা করা হলেও শেষ পর্যন্ত দেশ দুটি লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি।
কয়েক দশক ধরে একই পর্যায়ে আটকে থাকা দেশগুলোর তালিকায় আছে নেদারল্যান্ডস এবং ইকুয়েডরও।
আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলোর এ যাত্রার গল্পগুলোও উচ্চ আয়ের কাতারে পৌঁছানোর চেষ্টারত রাষ্ট্রগুলোর জন্য সংস্কার উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়ার পর লক্ষ্যচ্যুত না হওয়া ও মধ্যম আয়ের ফাঁদে না পড়ার সতর্কবার্তা হিসেবে থাকবে।
টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল চেঞ্জ এক গবেষণায় এসব দেশের পরবর্তী আয়সীমায় যাত্রার বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার পেছনে কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো: কাঠামোগত পরিবর্তনের ঘাটতি ও দুর্বল শিল্পনীতি; মানবপুঁজির উন্নয়ন ও উদ্ভাবনের অভাব; এবং ত্রুটিপূর্ণ শাসন, দুর্বল প্রতিষ্ঠান ও শোষণমূলক রাজনৈতিক অর্থনীতি।
ওই গবেষণায় লাতিন আমেরিকার কিছু দেশ কেন মধ্যম আয় থেকে উচ্চ আয়ে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ব্রাজিলের উদাহরণ উল্লেখ করে সেখানে বলা হয়, ১৯৬০-এর দশকে অনুমান করা হয়েছিল ব্রাজিল এমন একটি প্রবৃদ্ধির মাত্রা অর্জন করবে যা তাকে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত করবে। তবে অল্প বিনিয়োগ, উচ্চ শিক্ষায় কম অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি প্রভৃতি ব্রাজিলকে গত অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে রেখেছে।
ঘানা ও কেনিয়ার গত দশকে তুলনামূলকভাবে উচ্চ অর্থনেতিক প্রবৃদ্ধি থাকা সত্ত্বেও এবং ওই অঞ্চলে প্রভাবশালী হাবে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও কেন দেশ দুটি নিম্ন-মধ্যম আয়ের কাতার থেকে এগোতে পারেনি, তা-ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে গবেষণাটিতে। দুই দেশের কৃষিখাতে নিম্ন উৎপাদনশীলতা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের প্রাধান্যপূর্ণ সীমিত রপ্তানির দিকে ইঙ্গিত করে ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়, 'তাদের বর্তমান প্রবৃদ্ধি অর্থনৈতিক পরিবর্তনমুখী নয়, এবং দুই দেশেরই মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে থাকার উচ্চঝুঁকির লক্ষণ রয়েছে।' এছাড়া দেশ দুটির মানবপুঁজি উন্নয়নের মাত্রাও স্বল্প এবং বেশিরভাগ কর্মসংস্থান নিম্ন-উৎপাদনশীল সেবা খাতে বলেও জানানো হয় গবেষণাটিতে।
ওই গবেষণায় বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশ মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকা পড়েছে বা সামনে পড়ার ঝুঁকিতে আছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়: আয়ের ধাপগুলো পার হওয়ার জন্য কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই যে যথেষ্ট নয় তা মালয়েশিয়া, ব্রাজিল, তিউনিসিয়া, মরোক্কো, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের অভিজ্ঞতা থেকে স্পষ্ট। শিল্পায়নের প্রতি অনুরাগ থাকা, আইনের শাসনকে শক্তিশালীকরণ এবং শোষণমূলক রাজনৈতিক অর্থনীতিকে এড়ানো খুবই প্রয়োজন, এবং এসব কিছু করতে হবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সমতাকে পটভূমিতে রেখে। পাশাপাশি একটি দেশের উন্নয়নের যাত্রাপথ নিরূপণ করা এবং মধ্যম আয়ের ফাঁদ বোঝার ক্ষেত্রে মানবপুঁজির উন্নয়ন ও উদ্ভাবন দুই ক্ষেত্রে বিনিয়োগের মাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ চলক বলে দাবি করা হয়েছে টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউটের গত বছরের মার্চ মাসে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটিতে।
বাংলাদেশ যেখানে দাঁড়িয়ে
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাধীনতা লাভের একশ বছর পর, ২০৪৭ সালে পাকিস্তানের উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্নে পানি ঢেলে দিতে পারে দেশটির মানবপুঁজিতে স্বল্প বিনিয়োগ।
পাকিস্তানের মানবপুঁজি সূচক এখন ০.৪১, যা বিশ্বের সর্বনিম্ন সূচকসমূহের একটি। এছাড়া কোভিড-১৯ মহামারি এবং গত বছর তীব্র বন্যার কারণে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির শিক্ষা খাত।
বাংলাদেশের মানবপুঁজি সূচক ০.৪৬, যা পাকিস্তানের চেয়ে কিছু বেশি। কিন্তু এটি দক্ষিণ এশিয়ার গড় সূচকের চেয়ে কম। এমনকি এ সূচকে নেপালও বাংলাদেশের চেয়ে ওপরে রয়েছে। মহামারির কারণে শিশুদের শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের শিক্ষাবিদেরা। ভবিষ্যতের জন্য মানবপুঁজি বিনির্মাণে শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ খাতে বেশি বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের গণটিকা কর্মসূচি প্রশংসা কুড়ালেও মহামারি দেশের সার্বিক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। এতে পরিষ্কার হয়ে গেছে, স্বল্প ব্যয়ে দেওয়া সেবার অবস্থা উন্নত করতে হলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে আরও বেশি ব্যয় করতে হবে।
অর্থনীতির জন্য দক্ষ কর্মশক্তি তৈরিতে ধনী ও গরিবের মধ্যে সমতা আনতে হবে। কিন্তু এ সমতা অর্জনে এখনো একটি বড় বাধা হচ্ছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সল্প বিনিয়োগ।
দ্রুত প্রবৃদ্ধির জন্য একটি প্রশাসনের যে কর্মদক্ষতা থাকা উচিত, বাংলাদেশের তা নেই। প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতাও বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও মন্দ সংস্কৃতির দরুন রুগ্ন।
অতীতে কিছু সংস্কার ভালো ফল বয়ে এনেছিল, কিন্তু অনেক সংস্কার উদ্যোগই মাঝপথে তাল হারিয়েছে। এর ফলে আর্থিক খাতের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
'ট্রানজিশন ফ্রম লো-ইনকাম গ্রোথ টু হাইয়ার ইনকাম গ্রোথ: ইজ দেয়ার আ মিডল ইনকাম ট্র্যাপ' শীর্ষক এক গবেষণায় ২০১৭ সালে এডিবি ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, মধ্যম আয়ের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির সঙ্গে শিল্পায়ন, উন্মুক্তকরণ, ও সমতার ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে।
ওই গবেষণায় বলা হয়, মধ্যম আয়ের 'ফাঁদে পড়ে থাকা' অনিবার্য নয়। তবে এ গবেষণার ফল এ-ও বলছে না যে দেশগুলো মধ্যম আয়ের পর্যায়ে এসে আটকা পড়ে না। মধ্যম আয় থেকে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার রাস্তাটি বেশ কঠিন।
মধ্যম আয়ের দেশগুলোর উচ্চ আয়ের পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য যে নীতিমালা প্রয়োজন, তা প্রণয়ন করা দুষ্কর। বিশেষত প্রতিটি দেশের প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার স্বাতন্ত্র্য এ কাজটিকে আরও কঠিন করে তোলে।
মধ্যম আয়ের ফাঁদ তত্ত্বের মূল প্রবক্তাদের একজন একে গলফের উপমা দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন: 'সবাই "ফাঁদে" পড়ে না, কিন্তু সবার খেলাই ওসব ফাঁদের উপস্থিতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। সফল অর্থনীতিগুলো এ ফাঁদে পা দেওয়া এড়াতে পারে অথবা ফাঁদে পড়লেও দ্রুত উঠে পড়ে। অন্যদিকে ব্যর্থ (বা দুর্ভাগা) অর্থনীতিগুলো বছরের পর বছর এক ফাঁদে আটকে থাকতে পারে।'
মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়ানোর উপায়
অর্থনীতিবিদদের দেখানো বিভিন্ন প্রমাণ অনুযায়ী, নিরবচ্ছিন্ন উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনামূলক অল্প সময়ের ব্যবধানে আয়সীমায় দুইবার সফল উত্তরণের অভিজ্ঞতা থেকেই বিষয়টি নিশ্চিত বলে প্রতীয়মান হয়।
অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশের জন্য বিভিন্ন সতর্কবার্তা এখন অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ছে। বর্তমান মন্দা পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা এবং ২০৩১ ও ২০৪১ সালের মধ্যে যথাক্রমে উচ্চ-মধ্যম ও উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্নের পেছনে ছোটার রাস্তায় অবিচল থাকার জন্য বাংলাদেশকে এখন তার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিভিন্ন সংকট সমাধানের জন্য সুদূরপ্রসারী ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বানই রয়েছে ওইসব সতর্কতবার্তায়।
এ স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশের সামনে এখনো অসংখ্য বাধা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তারপরও এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব যদি দেশের অর্থনৈতিক খাতকে খোলনলচে বদলানো ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে খারাপ প্রভাবের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনার প্রবল ইচ্ছা থাকে।
কিন্তু সবার আগে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কারণে সৃষ্ট বর্তমান ক্ষত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে।
সাম্প্রতিক কয়েক দশকে দেশের অর্থনীতি বর্তমান সময়ের মতো কঠিন পরিস্থিতির মাধ্যমে যায়নি, ফলে এর আগে কখনো সংস্কারে প্রয়োজনীয়তাও এত বেশি জরুরি মনে হয়নি।
অর্থনৈতিক খাতে, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও ঘুষের মচ্ছব থাকলেও করোনা মহামারির আগে গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির দারুণ প্রবৃদ্ধি ঘটছিল। ওই দশকটি ছিল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কিছু বৃহৎ আর্থিক কেলেঙ্কারির মিশ্র দশক।
কিন্তু এ সময়ে এসে অনেক কিছুই বদলে গেছে।
মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দ্বৈত ধাক্কা দেশের অর্থনীতির দুর্বলতাগুলোকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এসব ধাক্কার কারণে বাংলাদেশ এখন বিশাল পরিমাণ খেলাপি ঋণ ও ব্যালান্স অভ পেমেন্টের চাপের সঙ্গে লড়াই করছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পর্যাপ্ত রাখার জন্য সরকারকে আমদানির ওপর বিধিনিষেধ জারি করতে হয়েছে।
'আমার গ্রাম, আমার শহর' নামক নতুন একটি বৃহৎ গ্রাম উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ, কিন্তু এর অগ্রগতি এখন পর্যন্ত কিছু পাইলট উদ্যোগেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
অর্থনৈতিক খাতে সুশাসন ও মান উন্নয়নে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়িক নেতারা দীর্ঘদিন ধরেই কর্তৃপক্ষকে সংস্কারের কথা বলছেন। সরকারের এজেন্ডায় সংস্কার উদ্যোগ মাঝেমধ্যে ছিল, তবে তা কখনোই অগ্রাধিকার তালিকায় ছিল না।
বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে জরুরি ঋণ নিচ্ছে, অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে বিশ্বব্যাংকের কাছে আরও তহবিল চাইছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে: আর্থিক ব্যবস্থায় সংস্কার।
সম্প্রতি দুটো পৃথক সফরে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা বাংলাদেশকে রাজস্ব-নীতি, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, কর প্রশাসনে ব্যাপক সংস্কার করার আহ্বান জানান।
মানবপুঁজিতে সরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম। তাই স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতসহ বিভিন্ন সামাজিক খাতের উন্নয়নে অনেক কাজ করতে হবে। কম সরকারি বিনিয়োগের ফলে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকছে।
জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহানের মতে, দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বৈষম্য অনেক বেশি। তার পরামর্শ, সরকারের উচিত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের মান নিশ্চিতে বাজেটে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেনও ধনী-দরিদ্র বৈষম্য কমাতে এবং মানবসম্পদ ও পুষ্টি সূচকসমূহের মান বাড়াতে বাজেটারি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে যেতে প্রস্তুত বাংলাদেশের এসব সমস্যার সমাধান করা দরকার।
বিশ্বব্যাংক এখন বলছে, মাথাপিছু জিডিপি ১৩ হাজার ২০০ ডলার হলেই চলবে না, ক্রয়ক্ষমতাও আমেরিকার তুলনায় ৫ শতাংশ থেকে ৪৩ শতাংশের মধ্যে হতে হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চলমান মন্দা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং মহামারিপূর্ব প্রবৃদ্ধিতে ফিরে যেতে হবে। মহামারির আগে বেশ কয়েক বছর এ প্রবৃদ্ধি গড়ে ৭ শতাংশ ছিল। করোনা হানা দেওয়ার আগের বছরে তো প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ অতিক্রম করেছিল।
২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে পরের পাঁচ বছরে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছার স্বপ্ন দেখছে। নিম্ন-মধ্যম আয় থেকে সফলভাবে উচ্চ-মধ্যম আয়ের কাতারে পৌঁছানো সম্ভব হলে, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলোর বছরের পর বছর আটকে থাকা মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে বেরোতে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।
কাজটি ভীষণ কঠিন, আর সময়টাও স্বল্প।
- ইংরেজি থেকে অনুবাদ: সুজন সেন গুপ্ত