গৃহস্থালি কাজে নারীর অবদান যোগ হবে জিডিপিতে
আগামী অর্থবছর থেকে নারীদের গৃহস্থালি কাজ জিডিপি হিসাবে যোগ করবে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে খুব শিগগিরই এ সংক্রান্ত একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী এ কথা বলেন।
"নারীদের অমূল্যায়িত গৃহস্থালি কাজ জিডিপি হিসাবে যোগ করতে প্রধানমন্ত্রী আগ্রহ দেখিয়েছেন। এর আগের গত ৪ মার্চ একনেকে এ বিষয়ে তিনি নির্দেশনা দেন। আজকের (মঙ্গলবার) একনেক সভায়ও এ বিষয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা হয়েছে," বলেন মন্ত্রী।
শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভা শেষে পরিকল্পনা আরো মন্ত্রী জানান, নারীর গৃহস্থালি কাজকে প্রধানমন্ত্রী সংজ্ঞায়িত করে বলেন, এটা এমন এক চাকরি যার কোনো কর্মঘন্টা নেই, বিশ্রাম নেই, ছুটি নেই, বেতন নেই এবং পেনশন নেই।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, দেশে জিডিপির হিসাব করা হয় আন্তর্জাতিক মডেল অনুসরণ করে। জাতিরসংঘের পরিসংখ্যান কমিটির ন্যাশনাল সিস্টেম অফ অ্যাকাউন্টস পদ্ধতিতে জিডিপি হিসাব করা হয়। সারাবিশ্বে এই নিয়মে হিসাব করা হলেও এখানে নারীর গৃহকর্মকে হিসাবে আনা হয় না।
"উৎপাদনশীল কাজ হলেও নারীর কাজকে আর্থিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। কারণ বাজারে বিনিময় হয় না। বাজার বিনিময় না হলে এর মূল্য সংযোগ হিসাব করা যায় না," বলেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, একটি স্যাটেলাইট হিসাব করে নারীর কাজ মূল্যায়ন করা সম্ভব। নারীরা বাসার কাজে যে সময় দিচ্ছেন, তা বাইরে করলে কত টাকা পেতেন, এটার হিসাব করে জিডিপির মূল হিসাবের পাশাপাশি এই হিসাব করা যায়। এটা হবে শ্যাডো মূল্যায়ন।
প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ১৩,৬৫৬ কোটি টাকার মোট ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পে ১০,৫২৬ কোটি টাকা আসবে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে।
এদিকে, সভায় প্রধানন্ত্রী উন্নয়ন প্রকল্পে পরামর্শক নির্ভরতা কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক বা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের নমনীয় ঋণ প্রকল্পে উন্নয়ন সহযোগীদের ইচ্ছায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রাখতে হয়।
"আমরা একমত না হলেও পরামর্শক রাখতে হয়। কিন্ত এটা আস্তে আস্তে কমে আসছে। ৫ বছর আগেও পরামর্শক ব্যয় যা ছিল, তা এখন অনেক কমে এসেছে," যোগ করেন মন্ত্রী।
পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, পরামর্শক ব্যয় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'আমাদের দেশের প্রকৌশলীরা এখন অনেক দক্ষতা অর্জন করেছে। এখন এত বেশি টাকা ব্যয় করে কেন বিদেশি পরামর্শক নিতে হবে?'
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা জানান, উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়িত প্রকল্পে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত পরামর্শক ব্যয় হয়ে থাকে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, একনেক সভায় প্রধনমন্ত্রী ব্লু ইকোনোমি থেকে সুফল পেতে এ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে জোর দেওয়া নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর মতে, বঙ্গোপসাগরে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, এটিকে কাজে লাগতে হবে।
এদিকে, স্লুইস গেট থেকে পর্যায়ক্রমে সরে আসার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। স্লুইস গেট বিষয়ে বিরক্ত প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অনেক জায়গায় স্লুইস গেট বানানো হয়েছে। কিন্ত এগুলো কাজ করে না। স্লুইস গেট করার কোনো মানে হয় না।'
হাওর এলাকায় স্থায়ী সড়ক নির্মাণ না করারও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যেখানে পানির চাপ বেশি থাকে সেখানে সড়ক না বাড়িয়ে কালভার্ট নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এছাড়া, এতিম খানার শিশুদের কারিগরি শিক্ষা বা প্রশিক্ষণে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।