ঈদের আগে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট কাটাতে সহায়তার পরিমাণ বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় বাংক
ঈদ উপলক্ষ্যে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার চাপ বেশি থাকায় খাতটির তারল্য সংকট কাটাতে রেপোর মাধ্যমে শর্ট টার্মে টাকা ধার দেওয়া বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ৯ এপ্রিল ব্যাংকগুলোকে দেওয়া রেপো ধারের ব্যালেন্স ছিল ১০,৮৮০ কোটি টাকা।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে গত ১৬ এপ্রিল এই ব্যালেন্স গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৯,৮২৮ কোটি টাকায়। অর্থাৎ, রেপোতে টাকা ছাড় প্রায় দ্বিগুণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো ফান্ডের শর্টফলে পড়লে তাদের কাছে থাকা ট্রেজারি বিল বা বন্ডের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোর মাধ্যমে শর্ট টার্মে টাকা ধার করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১ দিন, ৭ দিন বা ১৪ দিনের জন্য ব্যাংকগুলোকে এ টাকা ধার দেয়।
বর্তমানে ১-৭ দিনের ধারে ৬.১০% এবং ১৪ দিনের ধারে ৬.২০% সুদ চার্জ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এছাড়া, ব্যাংকগুলো একে অপরের থেকে যে ঋণ নেয় (কল মানি মার্কেট নামে পরিচিত), সেটিও গত কয়েকদিন ধরে বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবার কল মানি রেট ৬.১৯% এ পৌঁছেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "ঈদের সময় স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংক চ্যানেলে টাকার চাহিদা বাড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপোর মাধ্যমে টাকা ধার দেওয়া বাড়ানোর কারণে এখন ব্যাংক চ্যানেলে লিকুইডিটি ফ্লো ভালো রয়েছে।"
"মঙ্গলবার রেপোতে ধার নেওয়ার চাহিদা তেমন ছিল না। তবে আগের দিন সোমবার পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর রেপোতে ধার নেওয়ার বেশ ভালো ডিমান্ড ছিল," বলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক অধিকাংশ সময়েই ১ বা ৭ দিনের ধার দিয়ে থাকে। গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি ব্যাংককে ১৪ দিনের জন্য টাকা ধার দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে এ কর্মকর্তা জানান, "সামনে ঈদের বন্ধ থাকার কারণে বেশিরভাগ ব্যাংকই আগে থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে তাদের লিকুইডিটি সিচুয়েশন ভালো রাখার চেষ্টা করছে। ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসে ব্যাংকগুলোকে বেশ ভালো এমাউন্টের টাকা পরিশোধ করতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। তখন তাদের জন্য সেটি চাপ হতে পারে। এটি কাটাতেই ১৪ দিনের ধার দেওয়া হয়েছে।"
বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা জানান, ঈদের আগে কেনাকাটাসহ নানা কারণে নগদ টাকার চাহিদা বাড়ে। তবে সব ব্যাংক টাকার এই চাপের মধ্যে নেই।
রাষ্ট্রায়ত্ব একটি ব্যাংক ও ইসলামী ধারার কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট থাকায় তারাই বেশি ধার করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা পাওয়ায় অধিকাংশ ব্যাংকেরই টাকার তারল্য ভালো অবস্থায় আছে।
কল মানি রেট আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ
কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপোর মাধ্যমে টাকা ছাড় বাড়ালেও ব্যাংক চ্যানেলে টাকার চাহিদা বেশি থাকায় ইন্টারব্যাংক কল মানি মার্কেট থেকে ধার নিতে চাইছে ব্যাংকগুলো।
ফলে গতকাল মঙ্গলবার কল মানি রেট আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে।
এক ব্যাংক অন্য ব্যাংককে ওভারনাইটের জন্য যে রেটে টাকা ধার দেয়, সেটিই কল মানি রেট হিসেবে পরিচিত।
গত দুই সপ্তাহ ধরে ব্যাংক চ্যানেলে টাকার চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে কল মানি মার্কেটেও লেনদেন বেশি হচ্ছে।
মঙ্গলবার কল মানি মার্কেট থেকে ওভারনাইট, ২-১৪ দিনের শর্ট নোটিশ ও টার্ম লোন মিলিয়ে মোট ৭,১২৮ কোটি টাকা লোন নিয়েছে ব্যাংকগুলো।
ওভারনাইট ধার করার বদলে ব্যাংকগুলোকে শর্ট নোটিশে টাকা ধার করার বেশি প্রবণতা দেখা গেছে। এদিন ব্যাংকগুলো শর্ট নোটিশে ৩,৯৩২ কোটি টাকা ধার করেছে। অন্য সাধারণ দিনে শর্ট নোটিশে ধার ২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে থাকে।
টাকার চাহিদা থাকায় লিকুইডিটি সারপ্লাসে থাকা ব্যাংক ওভারনাইটের বদলে শর্ট নোটিশে টাকা ধার দিতেই বেশি আগ্রহী। কারণ, ওভারনাইটের চেয়ে শর্ট নোটিশে ইন্টারেস্ট বেশি পাওয়া যায়। মঙ্গলবার সর্বোচ্চ ৯% সুদে শর্ট নোটিশে টাকা ধার দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "গত ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই রেপোর মাধ্যমে টাকা ছাড় করা বাড়াতে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ইন্টারব্যাংক কল মানি মার্কেট থেকে টাকা ধার করার চাপ কমতে থাকে। ফলে ২৫ জানুয়ারি ৭% এ উঠে যাওয়া ওভারনাইট কলমানি রেট কমতে থাকে।"
"গত আড়াই মাস ধরেই এ রেট ৬% এর আশেপাশে ছিল। গত কয়েকদিনে ব্যাংকগুলোতে টাকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কল মানি রেটও বাড়তে থাকে," যোগ করেন তিনি।