ব্যাংকিং খাতে সিএসআর খরচের অর্ধেকই ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর
বাংলাদেশে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া ৬১টি ব্যাংক মিলে কর্পোরেট সোশাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর) খাতে গত বছরের জুন-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে যে পরিমাণ খরচ করেছে, তার অর্ধেকই করেছে ইসলামী ধারার ১০ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ২০২২ সালের শেষ ছয় মাসে সব ব্যাংক মিলে সিএসআর খাতে ব্যয় করেছে মোট ৫১৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে ইসলামী ধারার ১০ ব্যাংক মিলেই খরচ করেছে ২৫৫ কোটি টাকা।
এদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক একাই ১২৫ কোটি টাকা খরচ করেছে সিএসআর খাতে। অবশ্য এর প্রায় পুরো টাকাটাই খরচ করা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়। ইসলামী ধারার বাকি ব্যাংকগুলোও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দের চেয়ে বেশি খরচ করেছে।
ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো ২০২১ সালের কর পরবর্তী নিট মুনাফা থেকে ৬৩ কোটি টাকা এবং নিট মুনাফা ছাড়া কম্পেনসেশন রিয়েলাইজড এ/সি, যাকাত ফান্ড ও অন্যান্য উৎস থেকে খরচ করেছে ১৯২ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ব্যাংক তার নিট মুনাফার ১ শতাংশ সিএসআর খাতে ব্যয় করবে। এরমধ্যে মোট সিএসআর বাজেটের মধ্যে শিক্ষাখাতে ৩০ শতাংশ, স্বাস্থ্যখাতে ৩০ শতাংশ, পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন ও অভিযোজন খাতে ২০ শতাংশ ব্যয় করতে পারে। এছাড়া, অবশিষ্ট ২০ শতাংশ আয়-উৎসারী কার্যক্রম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি এবং অন্যান্য খাতের আওতায় ব্যয়ের সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া, নভেম্বরে আরেক সার্কুলারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট তহবিলের আকার বৃদ্ধির লক্ষ্যে সিএসআর খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ৫ শতাংশ হারে অনুদান প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ৯টি ব্যাংক শিক্ষাখাতে ৩০ শতাংশ, ১৩টি ব্যাংক স্বাস্থ্যখাতে এবং ৩টি ব্যাংক পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন ও অভিযোজন খাতে ২০ শতাংশ সিএসআর ব্যয় নিশ্চিত করতে সমর্থ হয়েছে। তাছাড়া, ৪৭টি ব্যাংক অন্যান্য খাতে ২০ শতাংশের অধিক ব্যয় করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে, যার পরিমাণ মোট সিএসআর ব্যয়ের ৬৯ শতাংশ বা ৩৫৩ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতের আওতায় প্রধানত ২০২২ সালের প্রথমার্ধে সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ এবং দেশের উত্তরাঞ্চলসহ অন্যান্য অঞ্চলে শীতার্ত ও দরিদ্র মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়, যার সিংহভাগ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান হিসেবে প্রদান করা হয়েছে।
৬৪ কোটি টাকা করে ব্যয় হয়েছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে। এছাড়া পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন-অভিযোজন খাতে ১২ কোটি, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে ১২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
সিএসআর খাতে ব্যয় বাড়াচ্ছে ব্যাংক
ব্যাংকগুলো ২০২২ সালে সিএসআর খাতে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১,১২৯ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালে ব্যাংকগুলো ৭৫৯ কোটি ও ২০২০ সালে ৯৬৮ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
২০২২ সালে সিএসআর খাতের ব্যয়ে এগিয়ে রয়েছে বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। ব্যাংকটি ৩২৭ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ডাচ বাংলা ব্যাংক খরচ করেছে ৬৯ কোটি টাকা। এছাড়া এক্সিম ব্যাংক ৬৪ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ৫০ কোটি এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ৩৪ কোটি টাকা খরচ করেছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক পিএলসি ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ২০২২ সালে সিএসআর খাতে কোনো ব্যয় করেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ২০১৩ সালে লাইসেন্স পাওয়ার সময়ে ১২টি ব্যাংকের ক্ষেত্রে আগের বছরের কর পরবর্তী নিট মুনাফার ১০ শতাংশ পরবর্তী বছর সিএসআর কার্যক্রমে ব্যয় করার নির্দেশনা ছিল। এসব ব্যাংকের মধ্যে এনআরবি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এ শর্ত মানতে পেরেছে। বাকি 8টি ব্যাংক খরচ করেছে নিট মুনাফার ১০ শতাংশের কম।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ব্যাংক হিসেবে শুধু মুনাফা করাই আমাদের লক্ষ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য থাকে সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনের। এসব কারণেই আমরা চেষ্টা করছি সিএসআর খাতে ব্যয় বাড়াতে।"