২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭.৬৪ লাখ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন প্রধানমন্ত্রীর
দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের উপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭.৬৪ লাখ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পাশাপাশি চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা এবং দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাজেটে জোরদার ফিসক্যাল পলিসি গ্রহণ করতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১০ মে) সন্ধ্যায় গণভবনে আগামী অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দের প্রাক্কলন উপস্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব পরামর্শ দিয়েছেন বলে টিবিএসকে জানান সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক কর্মকর্তা।
প্রধানমন্ত্রী আগামী অর্থবছর সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রতা সাধন অব্যাহত রাখা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং এক্সটার্নাল সেক্টরের বিদ্যমান অস্থিরতা কাটিয়ে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন।
আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী।
সভায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউল তালুকদার, অর্থ বিভাগের সিনিয়র ফাতিমা ইয়াসমিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমসহ বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সভায় পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে অর্থবিভাগের সিনিয়র সচিব আগামী অর্থবছরের বিভিন্নখাতে বরাদ্দের বিভাজন তুলে ধরেন। এসময় নতুন অর্থবছর মোট দেশজ প্রবৃদ্ধির হার ৭.৫% এবং মূল্যস্ফীতির হার ৬.৫% প্রাক্কলনের তথ্য জানায় অর্থবিভাগ।
মূল্যস্ফীতির হার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ধরে রাখতে আগামী মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কী কী পদক্ষেপ নেবে, তা জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রী বাহুল্য ব্যয় পরিহার করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার উপযোগী বাজেট প্রণয়নের নির্দেশনা আগেই দিয়ে রেখেছেন। তাই নির্বাচনী বছর হলেও জনতুষ্টিমূলক কোন ব্যয় বাজেটে থাকছে না।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের দেওয়া ঋণের বিভিন্ন শর্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা আগামী বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
"নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, ম্যাক্রো ইকোনমির স্ট্যাবিলিটির স্বার্থ বিবেচনা করে তিনি প্রায় সব ধরনের প্রস্তাব নাকচ করে দিচ্ছেন। নির্বাচনের আগে এটি সরকারের শেষ বাজেট হলেও অন্যান্য নির্বাচনী বছরের বাজেটের সঙ্গে নতুন বাজেটের মিল পাওয়া যাবে না। জানান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় অংশ নেওয়া অর্থবিভাগের একজন কর্মকর্তা।
"নতুন বাজেটে ম্যাক্রো ইকোনমি স্ট্যাবিলিটি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে," বলেন তিনি।
আগামী অর্থবছরের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে মূল্যস্ফীতিকে। এছাড়া, এক্সপোর্ট ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উন্নয়ন, আইএমএফ এর শর্ত অনুযায়ী ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও ০.৫০% বাড়ানো, এক লাখ কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি এবং সরকারি ঋণের সুদব্যয় যোগান নিশ্চিত করাকে আগামী অর্থবছরের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরেছে অর্থ বিভাগ।
অর্থ বিভাগের প্রাক্কলন অনুযায়ী, ৭.৬৪ লাখ কোটি টাকার বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ থাকবে ২.৬৩ লাখ কোটি টাকা। বাকি অর্থ সরকারের পরিচালন ব্যয়খাতে বরাদ্দ হবে। উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বরাদ্দ থাকবে ১.৬৯ লাখ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ব্যয় হবে ৯৪,০০০ কোটি টাকা।
বাজেটের বাকি ৫ লাখ কোটি টাকা ব্যয় হবে পরিচালনখাতে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৪.৩১ লাখ কোটি টাকা।
পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় ৭৭,০০০ কোটি টাকা, পণ্য ও সেবা ক্রয়ে ৪০,০০০ কোটি টাকা, ঋণের সুদ পরিশোধে ১.১০ লাখ কোটি টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ১.১৮ লাখ কোটি টাকা এবং ভর্তুকি ও প্রণোদনায় ১.০৫ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে অর্থবিভাগ; যে প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।