খুচরা মূল্যের ব্যবধান দূর করে সিগারেট থেকে আরও ৫,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, সিগারেটের প্যাকেটে মুদ্রিত দামের চেয়ে ক্রেতাদের থেকে বেশি দাম নেন বিক্রেতারা। এই পার্থক্য দূর করতে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণের পরিকল্পনা করছে সরকার। এতে রাজস্ব আহরণও বাড়বে।
বর্তমানে খুচরা মূল্য প্যাকেটের গায়ে ছাপা থাকলেও, ক্রেতাদের ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দাম দিতে হয়। অথচ প্যাকেটে উল্লেখিত দরেই কর হিসাব করা হচ্ছে। এতে বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
যেমন (বেনসন বা মার্লবোরোর মতো) প্রিমিয়াম মানের সিগারেটের দশ শলাকার প্যাকেটের নির্ধারিত খুচরা মূল্য ১৪২ টাকা; অর্থাৎ প্রতি শলাকার দাম ১৪ টাকা ২০ পয়সা। অথচ, বিক্রেতারা প্রতি শলাকা খুচরা বিক্রিতে ১৬ টাকা করে নিচ্ছেন, সে অনুসারে এক প্যাকেটের দাম নিচ্ছেন ১৬০ টাকা। ফলে প্যাকেটপ্রতি অতিরিক্ত এ ১৮ টাকার কর-বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
একইভাবে, বিক্রি বেশি এমন সিগারেটের (গোল্ডলিফ) প্রতি শলাকা বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকায়, যদিও নির্ধারিত খুচরা মূল্য হলো ১১ টাকা ১০ পয়সা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর হিসাবমতে, খুচরা বিক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে রাজস্ব আদায় করলে – মার্চ পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের গত নয় মাসে – সরকার তামাক খাত থেকে অতিরিক্ত ৩,৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারতো। আর পুরো অর্থবছরের হিসাবে এই অঙ্ক দাঁড়ায় প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকায়।
এই বাস্তবতায়, প্রতি প্যাকেটের সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয়মূল্য 'রাউন্ড ফিগার' বা পূর্ণসংখ্যায় নির্ধারণের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, যাতে প্রতি শলাকা সিগারেটও সে অনুসারে যথাযথ মূল্যে বিক্রি হয়। তারা মনে করছেন, এতে ভোক্তারা যেমন অতিরিক্ত মূল্য থেকে সুরক্ষিত থাকবেন, তেমনি সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।
রাজস্ব হারানো বন্ধে সরকার সব ধরনের সিগারেটের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বেঁধে দেওয়ার কথা ভাবছে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রোববার (১৪ মে) এক বৈঠকে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সামনে পেশ করা হবে। অনুমোদন পেলে আসন্ন বাজেটে যুক্ত হবে।
বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ- ভ্যাট) এর সাবেক কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী গত বছরের আগস্টে সিগারেট বিক্রিতে সরকার যে রাজস্ব হারাচ্ছে সেদিকটি তুলে ধরে, এই ফাঁকি বন্ধের সুপারিশ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেন। এবিষয়ে তিনি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাথেও বৈঠক করেন।
সভার বিবরণী অনুসারে, রাজস্বের ক্ষতি ছাড়াও, সিগারেটের বিক্রয় এবং সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রক আদেশ বা এসআরও মূল্যের ব্যবধান – ক্রেতাদের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়াচ্ছে, কারণ তাদের অনুমোদিত দামের চেয়ে বেশি টাকা দিতে হচ্ছে।
বৈঠকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে উচ্চ মূল্যে সিগারেট বিক্রির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়।
বর্তমানে প্রিমিয়াম, উচ্চ ও মাঝারি সেগমেন্টের সিগারেটের ওপর ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক রয়েছে। নিম্ন-সেগমেন্টের সিগারেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ৫৭ শতাংশ। প্রিমিয়াম, উচ্চ এবং মধ্যম বিভাগে সামগ্রিক কর ৮০ শতাংশ। সে তুলনায়, নিম্ন সেগমেণ্টের সিগারেটে ৭২ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে আলাপকালে তামাকবিরোধী প্রচারণাকারী 'প্রজ্ঞা'র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে তারা চান রাজস্ব কর্তৃপক্ষ সব ধরনের সিগারেটের ওপর সমান হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করুক।
তার মতে, কম দামের কারণে আরো বেশি ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে পারে নিম্ন মানের সিগারেটগুলোর বাজার অংশীদারিত্ব প্রায় ৭৫ শতাংশ। তাই সব ধরনের সিগারেটে সমান হারে কর আরোপ করলে তা ধূমপানকে নিরুৎসাহিত করবে, জনস্বাস্থ্য রক্ষা করবে এবং সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।
খুচরা মূল্য বা এমআরপি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কাজ করে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।