জরিমানা দিয়ে যেকোনো সময় জমা দেওয়া যাবে ট্যাক্স রিটার্ন
করদাতারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে না পারলেও পরবর্তীতে বছরের যেকোনো সময়ে জরিমানা ও সুদ পরিশোধ করে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। করদাতাদের হয়রানি কমানোর লক্ষ্যে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তারা।
এক্ষেত্রে রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য ডিসিটির (ডেপুটি কমিশনার অব ট্যাক্সেস) কাছে সময় বাড়ানোর আবেদনও করা লাগবে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর বাজেট সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী বাজেটের জন্য এ ধরনের একটি পরিবর্তন আনতে পারে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে জরিমানা ও সুদের হারে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।
নির্ধারিত সময়ে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে ব্যর্থ হলে কর কর্তৃপক্ষের কাছে সময় বাড়ানোর আবেদন করা কিংবা আবেদন ছাড়া পরবর্তী ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে গেলে ট্যাক্সম্যানদের ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্টের মত 'অথরিটেরিয়ান পাওয়ার' বা কর্তৃত্ব কমানোর উদ্যোগ হিসেবে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে এনবিআর।
এমন পদক্ষেপের প্রশংসা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এতে করদাতাদের হয়রানি কমার সুযোগ তৈরি হবে এবং তারা ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতেও উৎসাহিত হবেন।
ইনকাম ট্যাক্স পলিসির সাবেক এনবিআর সদস্য সৈয়দ মোঃ আমিনুল করিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "করদাতারা সময় বাড়ানোর জন্য ডিসিটি'র কাছে আবেদন করলে সেই আবেদন বেশকিছু সময় পড়ে থাকে। উত্তরও দেওয়া হয় না অনেক সময়। আবার কোনো কোনো ফাইল জয়েন্ট কমিশনার কিংবা কমিশনার পর্যন্ত পাঠানো হয়। এখানে হয়রানির সুযোগ তৈরি হয়।"
"আবার বড় অঙ্কের ফাইল হলে উপরে যাবে, তাদের (ট্যাক্সম্যান) ইচ্ছেমত অ্যাসেসমেন্ট করবে। ১০ লাখ টাকা ট্যাক্স হলে ২০ লাখ টাকা অ্যাসেসমেন্ট করবে। তবে নতুন এ ব্যবস্থা কার্যকর হলে এসব হয়রানির সুযোগ কমে আসবে," যোগ করেন তিনি।
দেশে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারীর (টিআইএন) সংখ্যা বাড়লেও এরসঙ্গে ট্যাক্স রিটার্ন জমার সংখ্যা প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না।
২০২২ সালের বাজেটে সরকার ৩৮ ধরনের সেবা গ্রহণকালে 'এনবিআর প্রুপ অব সাবমিশন অব রিটার্ন' বাধ্যতামূল করেছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, এতে রিটার্ন জমায় ব্যাপক সাড়া মিলবে, কিন্তু বাস্ততে তা হয়নি।
এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে টিআইএন হোল্ডারের সংখ্যা ৯০ লাখ। গত বছর ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছে ৩২ লাখের মত; এরমধ্যে সময়ের আবেদন করেছেন প্রায় ৩ লাখ করদাতা।
বর্তমানে নভেম্বরের ৩০ তারিখ ট্যাক্স ডে বা ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। এই সময়সীমার মধ্যে কেউ রিটার্ন জমা দিতে ব্যর্থ হলে, তাকে যথাযথ কারণ দেখিয়ে ডিসিটি'র কাছে সময় বাড়ানোর আবেদন করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করদাতা কোনো কারণে সময়মত রিটার্ন জমা দিতে না পারলে এবং সময়ের আবেদন করা না থাকলে, তিনি 'ইউনিভার্সেল সেল্ফ অ্যাসেসমেন্ট' পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ পান না।
তখন তার রিটার্নে ট্যাক্সম্যানদের অ্যাসেস করার ক্ষমতা থাকে এবং তাকে ক্ষেত্রবিশেষে শুনানির জন্য ডাকা হয়। এ সময় তার কাছে কখনো কখনো বিভিন্ন ডকুমেন্ট চাওয়া হয়। ট্যাক্সম্যান সন্তুষ্ট না হলে অ্যাসেসমেন্টে বাড়তি কর আরোপ করা হয়। এছাড়া, জরিমানা ও সুদের হিসাবতো আছেই।
বর্তমান ইনকামট্যাক্স অর্ডিন্যান্স অনুসারে, অ্যাসেসমেন্ট বা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কোনো করদাতা যদি উপযুক্ত কারণ ছাড়া ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে আগের বছরের প্রদেয় আয়করের ওপর ১০ শতাংশ বা ৫ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বেশি, ওই পরিমাণ অর্থ জরিমানা দিতে হবে। এটি পরবর্তীতেও চলতে থাকলে এই জরিমানা আরো বাড়বে।
এক্ষেত্রে ট্যাক্সম্যানদের হাতে কর্তৃত্ব থাকায় এই জরিমানায় হেরফের হতে পারে।
এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের একজন ডিসিটি নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, "বাধ্যবাধকতার মধ্যে না রাখলে করদাতাদের মধ্যে রিটার্ন জমার আগ্রহেও ভাটা পড়তে পারে।"