আরও ৬ খাত আসছে বাধ্যতামূলক রিটার্ন জমার আওতায়
করের আওতা বাড়াতে আরও অন্তত ৬টি খাতকে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতায় আনাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
আগামী জুনের বাজেট ঘোষনাকালে ফিন্যান্স বিল বা নতুন আয়কর আইনের মাধ্যমে এ বিধান যুক্ত করা হতে পারে বলে জানিয়েছে এনবিআর'র বাজেট সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বিদ্যমান ৩৮ ধরনের সেবার বাইরে নতুন করে ৬ ধরনের সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে 'প্রুফ অব সাবমিশন অব রিটার্ন' বা পিএসআর বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।
এনবিআরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা এনটিটি কর্তৃক পণ্য বা সেবা সরবরাহ গ্রহণকালে সরবরাহকারীর বা সেবা প্রদানকারীর পিএসআর বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।
এই নির্দিষ্ট এনটিটি মূলত আয়কর আইন অনুযায়ী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ফার্ম ইত্যাদি।
এ তালিকায় আরও যুক্ত হতে পারে দলিল লেখক হিসেবে নিবন্ধনে; স্ট্যাম্প এবং কোর্ট ফি'র ভেন্ডর হিসেবে নিবন্ধনে, পৌরসভায় ১০ লাখ টাকা মূল্যের জমি বিক্রয় এবং লিজ রেজিস্ট্রেশনের সময়। ভূমি ও ভবন লিজ রেজিস্ট্রেশনের সময়ও পিএসআরের শর্ত দেওয়া হতে পারে।
এছাড়া যেকোন ধরনের সোসাইটি, সমবায়, ট্রাস্ট, ফান্ড, ফাউন্ডেশন, এনজিও এবং মাইক্রোক্রেডিট অর্গানাইজেশনের ব্যাংক হিসাব খোলা ও চালু রাখতে এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাড়ি ভাড়া বা লিজ গ্রহণের সময় বাড়ির মালিকের পিএসআরের বাধ্যবাধকতা আসতে পারে।
যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢালাওভাবে নতুন নতুন খাতকে ট্যাক্স রিটার্ন জমা তথা ট্যাক্সের আওতায় আনায় করযোগ্য আয় নেই, এমন ব্যক্তিও রিটার্ন দিতে বাধ্য হবেন- যা ট্যাক্সের মূলনীতির বিরোধী।
এনবিআরের আয়কর বিভাগের সাবেক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "নতুন করে আরও ৬টি খাত যুক্ত হলে অনেক প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষও রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতায় চলে আসতে পারেন। এটি এনবিআরের মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।"
"এছাড়া এটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে" – যোগ করেন তিনি।
ইনকাম ট্যাক্স পলিসির সাবেক এনবিআর সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, "গত বছর ৩৮টি খাতের সেবা নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছিল, উদ্দেশ্য ছিল রিটার্ন জমার বিষয়টি নিশ্চিত করা। কিন্তু সেখানে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, তা যাচাই করে তারপর নতুন উদ্যোগ নেওয়া যৌক্তিক হবে।"
তিনি বলেন, "এখন পর্যন্ত যে তথ্য রয়েছে, তাতে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে।"
করের আওতা বাড়ানোর মাধ্যমে কর আদায় বাড়াতে এনবিআরের ওপর চাপ রয়েছে। এ লক্ষ্যে গত দুই-তিন বছরে বিপুল সংখ্যক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা টিআইএন রেজিস্ট্রেশনের আওতায় এনেছে এনবিআর।
তবে টিআইএন'র আওতায় আনা হলেও রিটার্ন জমায় কাঙ্খিত সাড়া মিলছিল না। এরপর গত বছরের বাজেটে ৩৮টি খাতের সেবা নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণ বা পিএসআর বাধ্যতামূলক করা হয়। অবশ্য তাতেও রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়নি।
এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রায় ৯০ লাখ টিআইএন হোল্ডার রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র এক তৃতীয়াংশ গত বছর ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছে।
তবে স্নেহাশিষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের অংশীদার ও কর বিশেষজ্ঞ স্নেহাশিষ বড়ুয়া এমন উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। তিনি বলেন, "এটি বাস্তবায়ন হলে করের আওতা বাড়বে এবং তা ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স তৈরিতে সহায়ক হবে।"
অবশ্য এসব কারণে করযোগ্য আয় না থাকা ব্যক্তিরাও করের আওতায় চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, "বিশেষত যারা জমি বিক্রি করছেন, কিন্তু করযোগ্য আয় নেই, কিংবা সমবায় সমিতি বা এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন, তাদেরও রিটার্ন জমা দিতে হবে– হয়তো তার করযোগ্য আয় নেই।"