জুলাই থেকে পরীক্ষামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন চালু করবে সরকার
আগামী জুলাই থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে সার্বজনীন পেনশনের কাজ শুরু করবে সরকার। প্রবাসী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানিক চাকরিজীবী, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত ব্যক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতাভূক্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য পৃথক প্রোডাক্ট নিয়ে জুলাই মাসের শুরু থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে পাইলট আকারে সার্বজনীন পেনশন দেশের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ শুরু হবে।
তবে যে কর্তৃপক্ষের অধীনে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হবে, তা এখনও গঠন করা হয়নি। এমনকি প্রোডাক্টগুলো এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি।
আগামী মাসের শুরুতেই সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করে প্রোডাক্টগুলো চূড়ান্ত করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর বার্তা দেশবাসীর কাছে পৌঁছাতে চায় সরকার। সেজন্যই কর্তৃপক্ষ গঠনসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকা সত্বেও জুলাই থেকে পাইলটিং শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
কর্মকর্তারা আরো জানান, আগামী অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে জুলাই থেকেই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার পাইলটিং শুরুর ঘোষণা দেবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তবে নতুন বছরের বাজেটে এখাতে কোন বরাদ্দ থাকছে না। সরকারি চাকরিজীবীদের নিয়েই কর্তৃপক্ষ গঠন হবে। প্রাথমিকভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভেতরেই তাদের অফিস থাকবে।
সার্বজনীন পেনশন চালুর প্রথম ১০ বছর সরকার শুধু জনগণের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করবে। ৫০ বছর বয়সীরা আগামী অর্থবছর এই পেনশনে অন্তর্ভুক্ত হলে তাদেরকে সরকার পেনশন দেওয়া শুরু করবে আরও ১০ বছর পরে। ফলে সার্বজনীন পেনশনখাতে আগামী বাজেটে বরাদ্দ রাখার প্রয়োজন নেই।
সার্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন হলে তাদের বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিকখাতে ২-৩ কোটি টাকা লাগতে পারে, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে থাকা থোক বরাদ্দ থেকে মেটানো সম্ভব হবে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে প্রবাসী বাংলাদেশি, বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী, শ্রমিক শ্রেণী এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী, তথা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতাভুক্তদের জন্য প্রোডাক্ট প্রণয়নের কাজ চলছে। সার্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের এসব প্রোডাক্ট প্রণয়ন করার কথা থাকলেও দ্রুত পাইলটিং শুরুর জন্য অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা কাজ কিছুটা এগিয়ে রাখছেন।
বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য দু'ধরনের প্রোডাক্ট থাকতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এক ধরনের প্রোডাক্ট এমন হতে পারে যে, চাকরিজীবীর পক্ষে স্বয়ং প্রতিষ্ঠান পেনশনের চাঁদা পরিশোধ করবে। অন্যটিতে প্রতিষ্ঠানের কোন ভূমিকা থাকবে না, চাকরিজীবী নিজে তার পেনশনের চাঁদা পরিশোধ করবে।
আইন অনুযায়ী ১৮-৫০ বছর বয়সী যেকোন বাংলাদেশি নাগরিক সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। তবে কমপক্ষে একটানা ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ করলে তিনি পেনশন সুবিধা পাবেন।
সার্বজনীন পেনশনের প্রতিটা প্রোডাক্টে সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারণ করে দেবে সরকার। কেউ চাইলে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ চাঁদা দিতে পারবে। ব্যক্তির দেওয়া চাঁদার সঙ্গে সরকারের দেওয়া মুনাফা যোগ করে তার জন্য মাসিক পেনশনের পরিমাণ নির্ধারিত হবে। ৬০ বছর বয়স থেকে আমরণ পর্যন্ত তিনি ওই পেনশন পাবেন।
৭৫ বছর বয়সের আগে কারো মৃত্যু হলে অবশিষ্ট সময় তাদের নমিনি মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
১০-বছরের ফি প্রদানের কোটা পূরণ করার আগে যদি কেউ মারা যায় তাহলে আমানতটি লাভ সহ নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।
পেনশন তহবিলে জমা করা অর্থ একবারেই উত্তোলন না করা গেলেও গ্রাহকরা এর ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে নিতে পারবে, যা পরবর্তীতে সুদের সাথে পরিশোধ করতে হবে।
পেনশন ডিপোজিট বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচিত হবে এবং একটি ট্যাক্স রেয়াত পাবেন গ্রাহকরা। এছাড়া পেনশনভোগীদের প্রাপ্ত মাসিক পেনশন সম্পূর্ণভাবে আয়কর থেকে অব্যাহতি পাবে।
তহবিলে জমাকৃত অর্থ নির্ধারিত নির্দেশিকা অনুযায়ী বিনিয়োগ করবে নিয়ন্ত্রক এবং তা থেকে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের প্রচেষ্টা চালাবে।
বেসরকারি খাতে পেনশন ব্যবস্থা চালু করার বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৪ সালের এপ্রিলে বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে প্রাক-বাজেট বৈঠকে আলোচনা করেছিলেন।
সেই বছরের জুনে বাজেট বক্তৃতায় তিনি ২০১৮ সালে বেসরকারি ব্যাংক এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলোর কর্মীদের জন্য পেনশন কার্যক্রম শুরুর জন্য একটি পাইলট প্রকল্প চালু করার ঘোষণা দেন।
২০২১ সালে একটি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর ঘোষণাও করেছিলেন তিনি।