ক্লিংকার আমদানিতে সুনির্দিষ্ট শুল্ক টন প্রতি ২০০ টাকা বাড়াবে সরকার
সিমেন্ট উৎপাদনকারী ও বাণিজ্যিক আমদানিকারক উভয়ের জন্যই আমদানি পর্যায়ে প্রতি টন ক্লিংকারের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ২০০ টাকা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার, জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বর্তমানে সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা আমদানি পর্যায়ে প্রতি টন ক্লিংকারের জন্য নির্দিষ্ট শুল্ক হিসেবে ৫০০ টাকা পরিশোধ করলেও আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে ৭০০ টাকা হবে। একইভাবে বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা বর্তমানে ৭৫০ টাকা পরিশোধ করে, যা বেড়ে দাঁড়াবে ৯৫০ টাকায়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরো জানিয়েছেন, টেরেফথালিক অ্যাসিড, ইথিলিন গ্লাইকল, হট রোলড স্টেইনলেস স্টিল শীটের কয়েল এবং ম্যাঙ্গানিজ আমদানির উপর কিছু পরিমাণে ভ্যাট ও অগ্রিম আয়কর (এআইটি) কমাতেও চায় সরকার।
আসন্ন বাজেটের লক্ষ্য হলো, সিমেন্ট ক্লিংকারের উপর অতিরিক্ত সুনির্দিষ্ট শুল্ক আরোপ করে সিমেন্ট খাত থেকে আরও বেশি রাজস্ব আয় করা।
অর্থ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশটি বর্তমানে সিমেন্ট উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে রাজস্ব সংশ্লিষ্ট খাতের হার অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে, নতুন এ পদক্ষেপ নিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, সিমেন্ট ক্লিংকারের উপর শুল্ক বৃদ্ধি আদতে সিমেন্ট শিল্পের উপর চাপ সৃষ্টি করবে; যা পরবর্তীতে সম্ভাব্য গ্রাহকদের উপর প্রভাব ফেলবে।
তারা আরও বলেন, সিমেন্ট শিল্প বর্তমানে মোট সক্ষমতার অর্ধেক শক্তি নিয়ে কাজ করছে। অন্যদিকে উৎপাদকরা বাজারের নিজেদের শেয়ার ধরে রাখতে দাম কমানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন।
কিছু কাঁচামালের উপর ভ্যাট এবং অগ্রিম আয়কর (এআইটি) হার কমালে তা ইস্পাত নির্মাতাদের কিছুটা স্বস্তি দেবে বলে উল্লেখ করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
তবে সিমেন্ট নির্মাতারা বলেছেন, ভ্যাট ও এআইটি হার কমানোর এ পরিমাণ নগণ্য। উৎপাদন খরচের উপর এটি কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে না বলে জানায় তারা।
প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আমিরুল হক এ বিষয়ে বলেন, "সরকার যদি সামগ্রিক উৎপাদন খরচকে প্রভাবিত করার মতো কোনো শুল্ক আরোপ করে, তাহলে তার প্রভাব গ্রাহক পর্যন্ত যাবে।"
তিনি আরও বলেন, এই পদক্ষেপের ফলে ৫০ কেজির সিমেন্টের ব্যাগের খুচরা মূল্য ১০ টাকা বাড়তে পারে।
মেঘনা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাহী পরিচালক মো. খোরশেদ আলম এ শিল্পের পূর্ণ সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর গুরুত্ব নিয়ে জোর দিয়ে বলেন, সর্বোচ্চ ক্ষমতার ব্যবহারকে উৎসাহিত করা সরকারী নীতিই আদতে উচ্চ রাজস্ব আয়ে ভূমিকা রাখবে।
শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশের বার্ষিক ক্লিংকার আমদানি ২০১২ সালে ছিল আনুমানিক ১৪ মিলিয়ন টন; যা এখন বেড়ে হয়েছে ৪০ মিলিয়ন টন।
এদিকে, দেশে এ শিল্পের মোট যে সক্ষমতা রয়েছে, তা বর্তমান বাজারের চাহিদার দ্বিগুণেরও বেশি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ) এর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বাজারে নিজেদের শেয়ার বাড়াতে ও তা ধরে রাখতে খুচরা পর্যায়ে দাম কমানোর প্রতিযোগিতা করছে সিমেন্ট উৎপাদকরা।
এমনকি কিছু ক্ষেত্রে উৎপাদকরা তাদের পণ্যগুলো উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে বিক্রি করছে বলে জানান তিনি।
বিসিএমএ কর্মকর্তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) একটি চিঠি জমা দিয়ে প্রতি টন ক্লিংকারের নির্দিষ্ট শুল্ক ২০০ টাকা কমানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।
লাভবান হতে পারেন ইস্পাত নির্মাতারা
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান শিল্প পরিস্থিতি বিবেচনা করে নতুন বাজেটে ম্যাঙ্গানিজ আমদানির এআইটি হার বর্তমানের ৩% থেকে কমিয়ে ২% করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়াও টেরেফথালিক অ্যাসিড, ইথিলিন গ্লাইকল এবং হট রোলড স্টেইনলেস স্টিল শীট কয়েল আমদানির উপর ভ্যাট ১৫% থেকে কমিয়ে ৫% করার সম্ভাবনা রয়েছে।
তারা উল্লেখ করেন, এ ধরনের কাঁচামাল মূলত ইস্পাত শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
টিবিএসকে কেএসআরএম গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, এইচআর কয়েল এবং সংশ্লিষ্ট রাসায়নিকের আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট কমালে তা টিনের দামে কোনো প্রভাব ফেলবে না কারণ আউটপুট ভ্যাট একই রয়ে যাবে।
তবে, আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম ভ্যাট হ্রাসের প্রস্তাব করায় এইচআর কয়েল শিল্পে কিছু কার্যকরী মূলধন বাড়তে পারে।
ম্যাঙ্গানিজে এআইটি ৩.১% কমানো মোট খরচের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না কারণ স্টিল বারে ২৭.৫% চূড়ান্ত কর একই রয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, ম্যাঙ্গানিজে এআইটি কমানোর প্রভাব তেমন নেই। স্টিল বার উৎপাদনের বেলায় প্রতি টনে মাত্র ০.১৮% ম্যাঙ্গানিজ ব্যবহার করা হয় বলে জানান শাহরিয়ার জাহান।