মূল্যস্ফীতির চোখ রাঙানির মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমার আশা অর্থমন্ত্রীর
চড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকার শঙ্কিত হলেও তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয় বলে গতকাল উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যেসব কারণে মূল্যস্ফীতি হয়, সেগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। যেসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কর না নিলে মানুষ উপকৃত হবে, সরকার সেখানে কর নেবে না।
এছাড়া, বাজারে স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার সহজভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তবে তিনি এ-ও বলেন যে, মূল্য সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, কারণ এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা।
অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যেহেতু পণ্যমূল্য কমছে, তাই দেশের বাজারেও দাম কমবে।
তবে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির মধ্যে বেসরকারি খাতের শ্রমিকদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রীসহ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ডজনখানেক মন্ত্রী বা সচিবের কেউই কোনো জবাব দেননি।
গত এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি এবং চলতি অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশের বেশি। এই পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ প্রাক্কলন করেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের যে প্রত্যাশা বাজেটে করা হয়েছে, তা অর্জনের জন্য কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার কম দামে জ্বালানি আমদানির চুক্তি করেছে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী কাটার ও ওমানের সঙ্গে দরকষাকষির মাধ্যমে কম দামে জ্বালানি তেল আমদানির চুক্তি করেছেন। ফলে আগামীতে দেশ দুটি কম দামে জ্বালানি তেল আমদানি করা সম্ভব হবে। এতে মূল্যস্ফীতি কমবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, কাতার বেলজিয়ামসহ ইউরোপের দেশগুলোতে ৬০ ডলার ব্যারেল দরে জ্বালানি তেল রপ্তানি করত। কিন্তু বাংলাদেশকে ওই দামে তেল দেওয়া হতো না। প্রধানমন্ত্রী কাতার সফরে গিয়ে দরকষাকষির মাধ্যমে কম দামে তেল আমদানির ব্যবস্থা করে এসেছেন। ফলে কাতার থেকে তেল আমদানির জন্য ১৫ বছর মেয়াদে চুক্তি হয়েছে।
খাদ্য নিরাপত্তা ও ঘাটতি প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক আশ্বাস দিয়ে বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কেউ না খেয়ে মারা যায়নি, দেশে কোনো খাদ্য ঘাটতি হয়নি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ অন্য কোনো কারণে দেশে খাদ্য সংকট হলে বা পণ্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে সরকার প্রয়োজনে অন্য খাতে বরাদ্দ কমিয়ে তা দিয়ে খাদ্য সরবরাহ বাড়াবে।
আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১.৩২ লাখ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ব্যাংকগুলোর কাছে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২ লাখ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে এসেছে। ওই টাকা ব্যাংক ব্যবস্থায় থাকলে সরকারকে ব্যাংকগুলোই ঋণ দিতে পারত; টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়ার প্রয়োজন হতো না।
আব্দুর রউফ তালুকদার জোর দিয়ে বলেন, চলমান মূল্যস্ফীতি শুধু মুদ্রা সরবরাহজনিত কারণে হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়াসহ সরবরাহজনিত অন্যান্য কারণে পণ্যমূল্য বেড়েছে। সেখানে সরকারের বিশেষ কিছু করার নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে আগামীতে পণ্য সরবরাহ কীভাবে বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টা করা হবে উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, আসন্ন অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে চাহিদা কমানোর উদ্যোগ থাকবে। তবে তাতে যাতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যহত না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখা হবে।
মূল্যবৃদ্ধির পরও কেন ঘন ঘন লোডশেডিং?
কয়েক দফা বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ার পরও বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া ভর্তুকি এবং দিনে ৮-১০ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কারণ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে তার জবাব দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জ্বালানিতে বিদেশের ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বেড়েছে।
বাড়তি দামের পর যে পরিমাণ ভর্তূকি দিতে হচ্ছে সেটা সরকারের একার পক্ষে বহন করা সম্ভব না জানিয়ে তিনি বলেন, 'ইউরোপসহ বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। এরকম প্রেক্ষাপটে সরকার যৌক্তিকভাবে ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।'
আগামী অর্থবছরের মাঝামাঝি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। তাই প্রস্তাবিত বাজেটের সঙ্গে নির্বাচনের কোন সম্পৃক্ততা আছে কি না, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সব নির্বাচনে জিততে চায়।
'নির্বাচনে জিততে হলে সাধারণ মানুষের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করতে হবে। সেটা মাথায় রেখেই বাজেট করা হয়। এবারও তা-ই করা হয়েছে। বাজেট মানুষের জন্য, নির্বাচনও মানুষের জন্য।'
'বাজেট করা হয়েছে দেশের মানুষের জন্য'
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই অর্থমন্ত্রী বলেন, সবসময়ের মত এবারের বাজেটও করা হয়েছে দেশের মানুষের জন্য।
তিনি বলেন, মানুষের কল্যাণে সম্পদের ব্যবহার কীভাবে আরও ভালো করা যায়, সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সবকিছুর মূলে এদেশের মানুষ।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, মানুষের কর্মদক্ষতা, দেশের প্রতি মায়া-মমতা অসাধারণ। সে কারণেই বাংলাদেশ বারবার সফল হয়েছে।
'রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব'
আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে যখন দায়িত্ব নেয় তখন রাজস্ব সংগ্রহ হতো ৫৯ হাজার কোটি টাকা।
'চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। তাই বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সেটি মোটেই বাড়তি নয়। এটি অর্জন করা সম্ভব।'
কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা কীভাবে অর্জিত হবে?
আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির ঘোষণা দিয়েছিলেন। নতুন বাজেটে তিনি ১ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলেছেন।
এসব কর্মসংস্থান কীভাবে সৃষ্টি করবেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে মুস্তফা কামাল বলেন, এ পর্যন্ত তিনি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার সবই বাস্তবায়ন করেছেন। ২০১৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ২.৪৫ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। 'মেড ইন বাংলাদেশ' ধারণা কর্মসংস্থানের জন্যই নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম ৩ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতেও এমন পরিকল্পনা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রতি বছর যেখানে ১৮-২০ লাখ লোক শ্রমবাজারে প্রবেশ করে, সেখানে এতো কর্মসংস্থান কীভাবে হবে বলে প্রশ্ন তোলেন প্রতিমন্ত্রী? প্রশ্নকারী সাংবাদিকের কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে কি না, তা দেখার পরামর্শ দেন তিনি।
এ সময় প্রশ্নকারী সাংবাদিক ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় যে পৃষ্ঠায় এ প্রতিশ্রুতি ছিল, সেই পৃষ্ঠা পড়ে দেখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তিনি কোনো ভুল করছেন না।
এরপর কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এ বিষয়ে বলেন, কর্মসংস্থান শুধু সরকারি খাতে হয়, তা নয়। সরকারের নীতি সহায়তার ফলে বেসরকারি খাতেও কর্মসংস্থান হয়।
'সরকার কৃষি খাতে যান্ত্রিকীকরণে সহায়তা করছে। কম্বাইন্ড হারভেস্টর চালু হয়েছে দেশে। এতে কর্মসংস্থান হচ্ছে। এমনকি কৃষি খাতে এখন শ্রম মূল্যও অনেক বেড়েছে। সার্বিক অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান বেড়েছে। মানুষের আয় বেড়েছে।'
'জনগণকে উন্নয়নকাজে অংশীদার করার জন্য বাধ্যতামূলক ২ হাজার টাকা আয়কর'
রিটার্ন দাখিলকারীদের জন্য ২ হাজার টাকা আয়কর দেওয়া বাধ্যতামুলক করার যৌক্তিকতার বিষয়ে জানতে চাইলে তার জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, ট্রেড লাইসেন্স হোল্ডার, সিটি কর্পোরেশনের বাড়ির মালিক, গাড়ির মালিকসহ সমাজের যেসব মানুষের উচ্চ আয় বা সম্পদ আছে, তাদের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) লাগে।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের মানুষের ২ হাজার টাকা দিয়ে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশীদার হওয়া উচিত মনে করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গরীব মানুষের টিআইএন এর দরকার হয় না। তাই তাদের কোনো সমস্যাও হবে না।
'আইএমএফের পরামর্শ মেনে বাজেট প্রণয়ন করা হয়নি'
আরেক প্রশ্নের জবাব অর্থমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ মেনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করা হয়নি।
'আইএমএফ সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নয়নে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। সেইসব পরামর্শের যেগুলো গ্রহণ করা যায়, সেগুলো গ্রহণ করা হবে। তবে আমি সুস্পষ্ট করে বলতে পারি আইএমএফের পরামর্শে বাজেট করা হয়নি,' বলেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পুরো বাজেট গরীব মানুষ, মধ্যবিত্ত শ্রেণির সুবিধা মাথায় রেখেই করা হয়েছে।
কর সবাইকে পরিশোধ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোথাও কোনো ধরনের অন্যায় হলে বা কর ফাঁকির চেষ্টা হলে সরকার হতে দেবে না।
কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ নিয়ে নতুন বাজেটে কি ব্যবস্থা থাকছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে মুস্তফা কামাল বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শনের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে দেখা গেছে এখন পর্যন্ত একজনও এ সুবিধা নেয়নি। এই পর্যবেক্ষণ থেকে সরকার ধারণা করছে যে, দেশে কোনো অপ্রদর্শিত অর্থ নেই। সে কারণে প্রস্তাবিত বাজেটে এ নিয়ে কিছু রাখা হয়নি।
কর্পোরেট করহার অপরিবর্তিত কেন?
কর্পোরেট করহার অপরিবর্তিত রাখা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, কর্পোরেট করহার ক্রমাগত কমিয়ে আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর্পোরেট করহার ৩৫ শতাংশ থেকে কয়েক বছরে ধাপে ধাপে কমিয়ে ২৭ শতাংশ করা হয়েছে।
তবে কর্পোরেট করহার প্রতি বছরই কমাতে হবে, এমন কোনো কথা নেই বলে উল্লেখ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, সব ক্ষেত্রে করছাড় দিলে রাজস্ব সংগ্রহ সংকুচিত হবে। বাংলাদেশ আগামীতে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হবে। এ অবস্থায় কর 'দেব না বা কম দেব'—এই মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে।
বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেই কেন?
বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কোনো বক্তব্য বা উদ্যোগ নেই কেন—একজন সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তর অন্য কাউকে দিতে বলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু মিনিটখানেক সময় পেরিয়ে গেলেও কেউই উত্তর না দেওয়ায় অর্থমন্ত্রী বলেন, কেউ কি এ বিষয়ে কিছু বলবেন না?
তখন অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন মাইক্রোফোন নিয়ে বলেন, এ প্রশ্নের উত্তর দেবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তখন কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন গভর্নর নিজেও। পরে তিনি বলেন, পুঁজিবাজার উন্নয়নে যথেষ্ট নীতি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আগামীতেও দেওয়া হবে।
বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীল রিজার্ভ গড়ে তোলা প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে বর্তমানে যে পরিমাণ রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে ৫ মাসের আমদানি দায় পরিশোধ করা সম্ভব। চলতি হিসাব ও ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে উন্নতি হচ্ছে উল্লেক করে তিনি বলেন, আশা করা যায় শিগগিরই ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ইতিবাচক ধারায় ফিরবে।
ব্যাংক খাতের সংস্কার
ব্যাংক খাতের সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এর জবাবও অর্থমন্ত্রী নিজে না দিয়ে গভর্নরকে দেওয়ার অনুরোধ করেন।
গভর্নর বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনীসহ বেশ কয়েকটি আইন মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। আশা করা যায়, তা শিগগিরই সংসদে উপস্থাপন করা যাবে।
গভর্নর আরও বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার বিষয়েও কাজ হচ্ছে। বিএএসইএল-৩ বাস্তবায়ন হলে খেলাপি ঋণ কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা হবে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, আর সরকারি খাতের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ নেমে আসবে ১০ শতাংশে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই
দুর্নীতি কমাতে বাজেটে কোনো উদ্যোগ আছে কি না, জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, সরকারের কেনাকাটা স্বচ্ছতার সাথে করা হচ্ছে।
তবে দু-একটি ক্ষেত্রে অনিয়ম হতে পারে স্বীকার করে তিনি বলেন, সেটি ব্যতিক্রম। প্রকল্প যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। তবে সম্প্রতি নির্মাণ উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প ব্যয়ও বেড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন ও ইআরডি সচিব শরীফা খান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।