বৈশ্বিক সংকটে গার্মেন্টস পণ্যের আমদানি কমলেও রপ্তানি আয় বাড়ছে
দেশের রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানি শর্তারোপের ফলে সকল পণ্যের ন্যায় গার্মেন্টসের কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতির ব্যাপক আমদানি কমলেও বাড়ছে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির পরিমাণ। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে গার্মেন্টস খাতে ভ্যালু অ্যাডিশন হয়েছে ৭১%, যা এ যাবতকালে সর্বোচ্চ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতে রপ্তানি হয়েছে ১২.২৫ বিলিয়ন ডলার। যদিও একই সময়ে আমদানি হয়েছে ৩.৫৪ বিলিয়ন ডলার। এই সময়ে ভ্যালু অ্যাডিশন হয়েছে ৮.৭০ বিলিয়ন ডলার বা ৭১%।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, 'চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে আমাদের গার্মেন্টস পণ্যের যে রপ্তানি হয়েছে তার বিপরীতে আমদানি করতে হয়েছে আরও তিনমাস আগে। যদি একই সময়ের আমদানি-রপ্তানি দেখা হয় তাহলে কিছুটা ত্রুটি থেকে যায়।'
তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমদানিতে নানা শর্তারোপ ও ব্যাংকগুলোর ডলার সংকট থাকায় অনেক ব্যবসায়ী এলসি খুলতে পারছে না, যার কারণে গার্মেন্টস পণ্য আমদানি কমেছে।'
যদিও তিন মাস আগের (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বরে) আমদানি ও চলতি মার্চ প্রান্তিকের রপ্তানির হিসেব করলে রপ্তানি বেড়েছে ৮.১৪ বিলিয়ন ডলার বা ৭০%।
তবে আমদানি কমার মধ্যেও রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে ফজলে শামীম এহসান স্পষ্ট কিছু বলতে পারেন নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের (জুলাই-এপ্রিল) দশ মাসে আমদানি কমেছে ৩৪.৩৬%। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের এই দশ মাসে আমদানি হয়েছে ৫৬.৩৬ বিলিয়ন ডলার। যদিও ২০২১-২২ অর্থবছরের একইসময়ে আমদানি ছিল ৭৬.৯৯ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া চলতি অর্থবছরের দশ মাসে গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামাল আমদানি হয়েছে ১৯.২১ বিলিয়ন ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একইসময়ে হয়েছে ২৮.১৯ বিলিয়ন ডলার বা ৩১.৮৫%। একইসঙ্গে চলতি বছরের দশ মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে ১৬ বিলিয়ন বা ৫৬.৯১%।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) একজন নেতা বলেন, 'দেশের রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যাংকগুলোর ডলার সংকট থাকায় গার্মেন্টস পণ্য উৎপাদন সামগ্রী আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। যার ফলে আমাদের উৎপাদনও কমে গেছে।'
কিন্তু গার্মেন্টসের রপ্তানি বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য কারণ দেখেননি তিনি।
তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক রপ্তানির যে তথ্য দিচ্ছে তার সঙ্গে আমাদের তথ্য ও অবজারভেশন মিলছে না। রপ্তানি পণ্য যেসব জায়গা দিয়ে যায় সেখানকার চিত্র এমন না। তবে এই রপ্তানির কোথা থেকে এন্ট্রি হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে এর মধ্যে কিছুটা সন্দেহ থেকে যায়।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৩) যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে দেশের রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে রপ্তানির পরিমাণ কমে গেছে।
একাধিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিবিএসকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশে রপ্তানির মাধ্যমে যে পরিমাণে রপ্তানি আয় আসছে সেখানে কিছুটা গড়মিল মনে হচ্ছে। কিছু দেশ থেকে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ বাড়তি দেখা যাচ্ছে অথচ সেসব দেশে এই পরিমাণে রপ্তানি হয়নি। তারা মনে করছেন, রপ্তানি আয়ের মাধ্যমে বিদেশের কিছু কালো টাকা দেশে আসছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে তৈরি পোশাক থেকে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১২.২৫ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ৩.৬৭% কম কিন্তু গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৬.৩২% বেশি।