১০০ খেলাপির কাছে আটকে আছে রূপালী ব্যাংকের ৭,৮০০ কোটি টাকা
রাষ্ট্রমালিকানাধীন রূপালী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের ৭৮% আটকে রয়েছে তাদের শীর্ষ ১০০ খেলাপি গ্রাহকের কাছে; এর ফলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকটির আর্থিক স্থিতিশীলতা ও মুনাফা বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
রূপালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, খেলাপি এই ১০০ গ্রাহকের কাছে ব্যাংকটির ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আটকে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপে পড়ে এসব টাকা উদ্ধারে এখন শীর্ষ নির্বাহীদের মাঠে নামাচ্ছে রূপালী ব্যাংক।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল(আইএমএফ) থেকে সরকার যে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিচ্ছে, তার অন্যতম শর্ত রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা।
এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংককে আগামী জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ মোট বিতরণকৃত ঋণের ১২% এর মধ্যে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে।
মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর টিবিএসকে বলেন, "বৈশ্বিক সংকটের কারণে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কিছুটা বেড়েছে। তবে তা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আমরা নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি ঋণ আদায় কমিটি করা হয়েছে। আমি নিজেও পরিচালনা পর্ষদের সহযোগিতায় খেলাপি ঋণ আদায়ে নিয়মিত মনিটরিং করছি।"
"আশা করি নিবিড় তদারকির ফলে খেলাপি ঋণ অবশ্যই কমে আসবে। তাছাড়া ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সব ধরনের ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে যাতে করে তারা ব্যবসা করে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে পারে," বলেন তিনি।
রূপালী ব্যাংকের অন্যান্য নথিতে দাবি করা হয়েছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৬ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে ব্যাংকটি খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। যা ওই সময়ে বিতরণ করা ঋণের ১৮.৪১%। আর এপ্রিল শেষে তার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকগুলো ছোট ঋণ বিতরণের চেয়ে বড় ঋণ বিতরণে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যে কারণে ঋণ যখন খেলাপি হচ্ছে, তখন গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের কাছে বেশি পরিমাণে ঋণ আটকে যাচ্ছে। বড় গ্রাহকরা খেলাপি হলে সেই ঋণ সহজে ফেরত পাওয়া যায় না।
"প্রথমত, বড় গ্রাহকদের ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা থাকে। অন্যদিকে এসব গ্রাহক আদালতে রিট করে ব্যাংকের টাকা আটকে রাখে। বড় গ্রাহকরা খেলাপি হলে বেশি পরিমাণ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। মামলার পেছনে অর্থ ব্যয়ও বেড়ে যায়," বলেন তিনি।
খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিকল্পনা কি কার্যকর হবে?
এই শীর্ষ খেলাপিদের থেকে বকেয়া টাকা আদায় করতে প্রধান কার্যালয়ের উপ মহাব্যবস্থাপক ও সহকারি মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
দুই জন কর্মকর্তার একটি দল তৈরি করে তিনটি করে কোম্পানি থেকে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
অথচ ব্যাংকটি বছরের শুরুতে অর্থাৎ গত জানুয়ারি মাসে খেলাপি ঋণের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলো। তাতে বলা হয়েছিলো নগদ আদায় এবং সমন্বয় অথবা নিয়মিতকরণের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা হবে।
খেলাপি ঋণ ফিরিয়ে আনার কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, শীর্ষ খেলাপিদের থেকে আদায় বাড়াতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ অন্যান্য সকল কর্মকর্তারা সর্বাত্বক চেষ্টা করবেন।
পাশাপাশি নতুন করে কোনো ঋণ যাতে খেলাপি না হয় সেজন্য 'আর্লি অ্যালার্ট সিস্টেম' অনুসরণ করবে ব্যাংক।
কিন্তু এসবই কাগজে থেকে গেছে। খেলাপি ঋণ কমার পরিবর্তে বেড়েছেই।