ব্যাংকখাতে তারল্য সংকটের মধ্যে ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধে ছাড়
ব্যাংকখাতে তারল্য সংকটের মধ্যে ব্যবসায়ীদের জন্য বিদ্যমান সকল ধরনের মেয়াদি ঋণ (টার্ম লোন) পরিশোধে বিশেষ ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একইসঙ্গে স্বল্পমেয়াদী কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণ পরিশোধে এ সুবিধা থাকবে।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে গত এপ্রিল পর্যন্ত যারা অশ্রেণিকৃত গ্রাহক হবে তারা (এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত) ঋণের মাত্র ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলে, তাদেরকে খেলাপি হিসেবে দেখানো যাবে না।
আজ মঙ্গলবার (২০ জুন) কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার ইস্যু করে সকল তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়, উৎপাদন ও সেবা খাতসহ সকল ব্যবসা চলমান রাখার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিশীলতা বজায় রাখতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়, বহির্বিশ্বে সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থা দীর্ঘায়িত হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ বিভিন্ন উপকরণের মূল্য ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ঋণগ্রহীতাগণ ঋণের পুরো অংশ পরিশোধে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন, যার কারণে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, 'ব্যাংকগুলো নানান কারণে তারল্য সংকটে রয়েছে। যেসব ব্যাংক মার্কেটে প্রাইম লেন্ডার ছিল, তারাও এখন ঋণের মধ্যে আছে। এর মধ্যে ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধে ছাড় দেয়া অযৌক্তিক।'
তিনি আরও বলেন, 'গত তিন বছর যাবৎ ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধে ব্যাপক ছাড় পেয়েছে। এভাবে ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলে ব্যাংকে তারল্য সংকট কাটবে না।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে ব্যাংকখাতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। আগের বছরের নভেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা।
ব্যবসায়ীরা কোভিডের কারণে ২০২০ সালে কোনো ঋণ পরিশোধ না করলেও তাদের খেলাপি হয়নি। এরপর ২০২১ সালে সকল ধরনের ঋণের মাত্র ১৫ শতাংশ পরিশোধ করে খেলাপি হওয়া থেকে রক্ষা পান ঋণগ্রহীতারা।
২০২২ সালে বন্যা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণের ৭৫ শতাংশ পরিশোধের ছাড় দেয়া হয়। যদিও পরবর্তীতে এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএ এর বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) পর্যন্ত ঋণের ৫০ শতাংশ পরিশোধে ছাড় দেয়া হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সকল ধরনের ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে ফের এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বিশেষ ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নতুন এ সার্কুলারে বলা হয়, ছাড় পাওয়া ঋণের অংশ গ্রাহকের বিদ্যমান ঋণের মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। তবে এই সময়ের ছাড় দেয়া ঋণের বিপরীতে কোনরূপ দণ্ড সুদ বা অতিরিক্ত ফি আরোপ করা যাবে না।
ইসলামী শরীয়াহ্ ভিত্তিক ব্যাংকগুলো তাদের প্রদত্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উপরোক্ত নীতিমালা অনুসরণ করে বর্ণিত সুবিধা প্রদান করতে পারবে।