কমানোর চেষ্টা সত্ত্বেও ২০২৩ অর্থবছরে আমদানিতে কর অব্যাহতি বেড়েছে ১৮%
কর অব্যাহতি (ট্যাক্স এক্সেম্পশন) কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর পক্ষ থেকে বিস্তর আলোচনা হলেও বাস্তবে তার কোনো প্রভাব নেই, বরং সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে অব্যাহতির পরিমাণ বেড়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এনবিআরের একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেবল আমদানি পণ্যেই কর অব্যাহতি ১৮ শতাংশ বেড়ে ৬১,০৩২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
গত সোমবার (৩১ জুলাই) এনবিআরের রেভিনিউ মিটিংয়ে শুল্ক বিভাগের পক্ষ থেকে এ প্রবিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছর আমদানি শুল্ক আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ, যা কোভিডকাল বাদে গত দুই দশকে সর্বনিম্ন।
এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত বছর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট কমানোর কারণে প্রায় ৩,৮৫৬ কোটি টাকা অব্যাহতি দিতে হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১,০৯০ কোটি টাকা।
এছাড়া কিছু বড় প্রকল্প, জ্বালানি তেল, শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতেও ছাড়া দেওয়া হয়েছে। অবশ্য বছরের শেষ দিকে এসে ভোজ্যতেলসহ কিছু পণ্যের এক্সেম্পশন সুবিধা অব্যাহত রাখেনি এনবিআর।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান টিবিএসকে বলেন, "একদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এক্সেম্পশন কমিয়ে আনার জন্য, অথচ এনবিআর উল্টো পথে হাঁটছে।"
তিনি বলেন, "বলা হচ্ছে বেসরকারি খাতের শিল্পায়নের সুবিধার্থে এ সুবিধা দিচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে প্রত্যাশিত গতি আসছে না।"
এ অবস্থায় অব্যাহতি দেওয়ার আগে ও পরের পরিস্থিতিতে বিশ্লেষণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, "অর্থনীতি কিংবা যে উদ্দেশ্যে দেওয়া হচ্ছে, তার প্রকৃত অ্যাসেসমেন্ট না করে এ সুবিধা দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারে না।"
বাড়তে পারে অব্যাহতি
বাজেটে ম্যানুফেকচারিং খাতের কিছু অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে আনা কিংবা বাতিল করা হলেও চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই অব্যাহতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছে এনবিআর।
৩১ জুলাইয়ের সভায় উপস্থিত মাঠ পর্যায়ের একজন কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "চলতি অর্থবছরে এক্সেম্পশনের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।"
"এজন্য ভ্যাট খাত থেকে আদায় বাড়ানোর জন্য নতুন নতুন বা আনট্যাপড এরিয়া খুঁজতে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে," যোগ করেন তিনি।
ট্যাক্স-টু-জিডিপি রেশিও
সেলিম রায়হান বলেন, গত কয়েক বছর ধরে জিডিপিতে করের অবদান বাড়ানো নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, কিন্তু ঘটছে উল্টোটা।
এক দশক আগেও ট্যাক্স-টু-জিডিপি অনুপাত ছিল প্রায় ১০ শতাংশ। আইএমএফ'র তথ্য অনুসারে ২০২২ অর্থবছরে এই অনুপাত ৮ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও ট্যাক্স-টু-জিডিপি রেশিও না বাড়ার জন্য কর অব্যাহতিকে প্রধান বাধা হিসেবে স্বীকার করেছেন।
মন্ত্রী তার সর্বশেষ বাজেট বক্তৃতায় অব্যাহতি না দিয়ে সংশ্লিষ্ট খাতে তহবিল বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, "প্রকল্প বাস্তবায়ন বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হোক বা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় হোক, প্রতিটি ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি না দিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসের বাজেটে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ট্যাক্স বরাদ্দ দিতে হবে এবং সেই বাজেট বরাদ্দ থেকে প্রয়োজনীয় কর পরিশোধ করতে হবে।"
সেরকম পরিস্থিতি তৈরি না হলে অব্যাহতির জন্য বিশেষ আদেশ দেওয়ারও প্রয়োজন নেই বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
শীর্ষ অব্যাহতি
শুল্ক বিভাগের মতে, ২০২৩ অর্থবছরে দেশের ১৬টি প্রধান খাতের মধ্যে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে সর্বোচ্চ ৯,৬৫৬ কোটি টাকা অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া, ভোজ্যতেল আমদানিতে কর অব্যাহতি সবচেয়ে বেশি ২৫৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। আরও পাঁচটি খাতের আমদানিতেও কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
তবে, রেফ্রিজারেটর, এসি তৈরি এবং চাল আমদানিতে কোনো অব্যাহতি দেওয়া হয়নি।