ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে আবেদন করেছে যেসব প্রতিষ্ঠান
নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনার পাশাপাশি লেনদেনকে আরও সহজ করতে ডিজিটাল ব্যাংক চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সেই লাইসেন্স পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সময়ে ইতোমধ্যেই দেশি-বিদেশি ৫২টি প্রতিষ্ঠান আবেদন জমা দিয়েছে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদনকারী ৫২টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কাছে ৪০টি আবেদনের তালিকা এসেছে।
এসব তালিকার মধ্যে রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর, তথ্য প্রযুক্তি সেবাদানকারী উদ্যোগ, এমনকি ওষুধ কোম্পানি ও ঢেউশিট উৎপাদনকারী কোম্পানিও।
টিবিএসের কাছে আসা তালিকায় যে নামগুলো রয়েছে, তা হলো- অ্যালায়েন্স ফিঙ্গুলার ইসলামী ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; ডিজি টেন পিএলসি; ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; উপায় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; জেআরএফ ডিজিটাল ব্যাংক (বিডি) পিএলসি; জাপান বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; এলিগেন্ট ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; ডিজি ব্যাংক পিএলসি; নর্থ ইস্ট ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; নেক্সট সেঞ্চুরি ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; আধুনিক ব্যাংক পিএলসি; সমৃদ্ধি ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; দেশ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; সঞ্চয় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; স্মার্ট ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি।
এছাড়া তালিকায় আরও রয়েছে- সম্পদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; নর্থ ওয়েস্ট ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; বিজয় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; এনইউএইচ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; উদ্দীপন ডিজিটাল ব্যাংক লিমিটেড; ইউএনও ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; সময় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; আমার ডিজি ব্যাংক পিএলসি; জমজম-ইসলামী ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; ইসলামী ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; সুবর্ণ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; একতা ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; সুনাম ডিজিটাল ব্যাংক লিমিটেড; বাংলাদেশ ডিজি ব্যাংক পিএলসি; আলো ডিজি ব্যাংক পিএলসি; আশা ডিজিব্যাংক পিএলসি; ডেল্টা ডিজি ব্যাংক লিমিটেড; স্টারলাইন ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; স্বাধীন ডিজিটাল ব্যাংক; পাঠাও ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; আগামী ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি; আর্টিস্ট ডিজি ব্যাংক পিএলসি; এবং সেতু ডিজিব্যাংক পিএলসি।
ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনার জন্য প্রধান একটি কার্যালয় থাকবে। তবে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি হবে স্থাপনাবিহীন। এর নিজস্ব কোনো শাখা বা উপশাখা, এটিএম, সিডিএম অথবা সিআরএমও থাকবে না। সব সেবাই হবে অ্যাপ-নির্ভর, মুঠোফোন বা ডিজিটাল যন্ত্রে।
গত ১৪ জুন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি ডিজিটাল ব্যাংক নির্দেশিকা প্রকাশ করে। সে নির্দেশিকা অনুসারে, এ ব্যবস্থায় ব্যক্তিগতভাবে কোনো লেনদেন হবে না।
নির্দেশিকা অনুসারে, 'ডিজিটাল ব্যাংক' লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার সুবিধার্থে গত ২১ জুন একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। লাইসেন্সের পেতে আবেদনকারীদের প্রাথমিকভাবে ১ আগস্টের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। তবে এরমধ্যে সাড়া না পাওয়ায় আবেদনের সময়সীমা ১৭ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
নতুন ব্যাংকিং ব্যবস্থা ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম মূলধন ১২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে, প্রথাগত ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম মূলধন লাগে ৫০০ কোটি টাকা।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল ব্যাংকে প্রত্যেক স্পনসরের সর্বনিম্ন শেয়ারহোল্ডিং হবে ৫০ লাখ টাকা (সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বা ১২.৫ কোটি টাকা)।
ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালিত হবে ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রণীত গাইডলাইন বা নির্দেশিকা অনুসারে।
৫ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ারধারী একটি স্পনসরকে যৌথভাবে ক্যাপিটাল মেইনটেন্যান্স চুক্তি (সিএমএ) স্বাক্ষর করতে হবে এবং ব্যাংকের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন প্রয়োজনীয় পরিমাণের চেয়ে কমে গেলে নানাভাবে বাড়তি মূলধন যোগান দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ ধরনের মূলধন যোগান দিতে না পারলে প্রয়োজনীয় মূলধন যোগগানের সম্পূর্ণ দায়িত্ব স্পনসর গ্রুপের ব্যক্তিদের ওপর বর্তাবে।
গত পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো সময়ে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ খেলাপি হয়েছেন বা ছিলেন, এমন কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের স্পনসর হিসেবে আবেদন করার যোগ্য হবেন না।
এছাড়া, ঋণ খেলাপি অবস্থার বিরুদ্ধে কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালে কোনো নিষ্পত্তিকৃত মামলার রায়ের অপেক্ষায় আছেন, এমন কোনো ব্যক্তিও ডিজিটাল ব্যাংকের স্পনসর হিসেবে আবেদন করতে পারবেন না।
আবেদনকৃত তালিকার মধ্যে দেশের ১০টি বেসরকারি ব্যাংকের 'ডিজি টেন ব্যাংক পিএলসি' নামে একটি কনসোর্টিয়াম রয়েছে। এই জোটে আছে- সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংক।
এদিকে চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক- সোনালী, অগ্রণী, জনতা এবং রূপালী ব্যাংকও আরেকটি ডিজিটাল ব্যাংকজোট গঠন করতে চায়।
এছাড়া, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রদানকারী নগদ, বিকাশ, মোবাইল অপারেটর বাংলালিংক এবং ডিজিটাল পরিষেবা সংস্থা পাঠাও ডিজিটাল ব্যাংক ব্যবস্থার লাইসেন্স পেতে আবেদন করেছে।