২০২৩ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুনাফা কমেছে ১৪,২৪৭ কোটি টাকা
ডলার বিক্রি থেকে এক্সচেঞ্জ রেট গেইন কমে আসায় বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুনাফা কমেছে প্রায় ৯৫ শতাংশ বা ১৪,২৪৭ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ১৫,০০০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির অপারেটিং প্রফিট ছিল ২৯,২৪৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে মুনাফা কমেছে প্রায় ৯৫ শতাংশ।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক বিবরণী পাশ হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এছাড়া সকল ডেপুটি গভর্নর ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কার্মকর্তারা ও বোর্ড সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের কেন্দ্রীয় ব্যাংক লোকাল কারেন্সি ও ফরেন কারেন্সি থেকে আয় করেছে ১৫,০০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে ডলার বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ৬,০০০ কোটি টাকা ও সরকারকে ঋণ দিয়ে প্রফিট হয়েছে ৭,০০০ কোটি টাকা। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ দিয়ে প্রফিট হয়েছে ২,০০০ কোটি টাকা।"
তিনি আরও বলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোট ব্যয় হয়েছে ৪,২৫২ কোটি টাকা। খরচ পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১০,৭৪৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে ১০,৬৫২ কোটি টাকা।"
ব্যাংকাররা জানান, বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে টাকার বিপরীতের ফরেন কারেন্সি ফ্লোটিং রেট হওয়ায় ক্রয়-বিক্রয়ের রেটে অল্প পার্থক্য ছিল; যার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে আয় অনেকটা কম হয়েছে।
তারা আরও জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন কারেন্সি রিভ্যালুয়েশন গেইন অনেক বেশি ছিল। কারণ এই অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে ডলার বিক্রি করেছে, তা ক্রয় করা ছিল কয়েক বছর আগে। যার কারণে ক্রয় ও বিক্রয় হারে ব্যাপক পার্থক্য থাকায় ডলার বিক্রি থেকে মুনাফা হয়েছিল বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশ ব্যাংক ফরেন কারেন্সি ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাসেটস থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬,০০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা ২০২২ অর্থবছরে ছিল ২৮,৩৭১ কোটি টাকা ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ অর্থবছরে ফরেন কারেন্সি রিভ্যালুয়েশন থেকে অপারেটিং প্রফিট বা মুনাফা হয়েছিল মাত্র ২,৬০৫ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগে ১০৩-১০৯ টাকা দরে ডলার কিনে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরি করেছিল, যা সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে ১০৩.৫০-১০৯.৫০ টাকা দরে।
যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজার থেকে ডলার কিনেছে ৭৮-৮৪ টাকায়। ওই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থবাজারে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে ৮৫-৮৭ টাকায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বিদায়ী অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে সবচেয়ে বেশি ডলার সরবরাহ করেছে।
তারপরও ডলারের ভাসমান হারের কারণে এ খাতে মুনাফা কম ছিল। ফলে এক্সচেঞ্জ রেট বা বিনিময় হার থেকে লাভ কম হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বিদায়ী অর্থবছরের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্কেটে তফসিলি ব্যাংকগুলোর কাছে ১৩.৫৮ বিলিয়ন ডলার সাপ্লাই দিয়েছে। যদিও তার আগের অর্থবছরে এ সাপ্লাই ছিল ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২৩ অর্থবছরে সরকারকে ঋণ দিয়েছে সবচেয়ে বেশি, যার কারণে এই খাত থেকে সবচেয়ে বেশি মুনাফা এসেছে। এর আগের অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ কম ছিল।
সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ বাজেটের লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। রাজস্ব ঘাটতি এবং বিদেশি তহবিল প্রবাহে মন্দার কারণে অর্থায়নের জন্য সরকারকে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করতে হয়েছে অনেক বেশি।
২০২৩ সালের জুনের শেষে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে মোট সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১.২৪ লাখ কোটি টাকায়; যদিও ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১.১৫ লাখ কোটি টাকা।
এই ঋণের ৮০ ভাগ বা প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় আরও যেসব সিদ্ধান্ত
জানা গেছে, বৈদেশিক মুদ্রার বাজার পর্যবেক্ষণ ও আমদানি মূল্যের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিভাগ থেকে ব্লুমবার্গ টার্মিনাল স্থাপন করবে।
এছাড়া, নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরে এটি বাতিল করেছে বোর্ড।
বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সোনালী ব্যাংক এখন সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) অনুযায়ী উড়োজাহাজ কেনার জন্য রিজার্ভ থেকে নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ করবে। কারণ লন্ডন ইন্টার-ব্যাংক অফারড রেট বন্ধ রয়েছে।