রপ্তানি আয়ে ডলার রেট বাড়লো ১ টাকা, রেমিট্যান্সে ৫০ পয়সা
রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স দুই ক্ষেত্রেই ডলারের বিনিময় হার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায় সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)।
ফলে প্রায় এক বছর পর রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের ডলার একই দামে কেনা যাবে।
গতকাল দুই সংস্থার এক বৈঠকে রেমিট্যান্সের জন্য ডলারের দাম ৫০ পয়সা এবং রপ্তানি আয়ে ১ টাকা বাড়ানো হয়েছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন বাফেদার চেয়ারম্যান এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আফজাল করিম।
এর আগে চলতি বছরের ৩১ জুলাই রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের জন্য ডলারের হার যথাক্রমে ১০৮.৫০ টাকা এবং ১০৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
৩ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন রেট কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন বাফেদা কর্মকর্তারা।
আফজাল করিম বলেন, "বৈঠকে আমরা সব ব্যাংককে বাফেদা ও এবিবির নির্ধারিত হার মেনে চলতে বলেছি। প্রতিটি ব্যাংক নতুন রেট মেনে চলতে সম্মতি দিয়েছে।"
গতকালের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আমদানি নিষ্পত্তির জন্য ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করবে ১১০ টাকায়, যা আগে ছিল ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন ঊর্ধ্বতন ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, সভার শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান 'ইকুইলিব্রিয়াম অ্যান্ড মিসঅ্যালাইনমেন্ট অফ এক্সচেঞ্জ রেট' শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মতো একটি আমদানি নির্ভর দেশ আমদানিকৃত মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মুদ্রার ওভারভ্যালুয়েশন থেকে উপকৃত হতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বৈঠকে আলোচকরা বলেন, কিছু ব্যাংক নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি হারে ডলার লেনদেন করায় গত মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। সব ব্যাংক যদি রেমিট্যান্সের জন্য নির্ধারিত ডলার রেট অনুসরণ করত, তাহলে আগস্টে তা ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্টের প্রথম ২৫ দিনে বাংলাদেশ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ১.৩২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে।
জুলাই মাসে রেমিট্যান্স আসে ১.৯৭ বিলিয়ন ডলার।
২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স আসে ২১.৬১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২.৭৫% বেশি৷
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে ডলার রেট বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন।
তিনি বলেন, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের ডলার রেট একই হওয়া উচিত। এটি প্রায় একবছর ধরে ভিন্ন ছিল।
দেশে রপ্তানি আয় নির্বিঘ্নে আসছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, "অনেক রপ্তানি পেমেন্ট ছয় থেকে নয় মাস বিলম্বিত হয়। আমাদের অনেক ক্রেতাই পেমেন্ট পিছিয়ে দেন। আমরা প্রক্রিয়াটি দ্রুত করার চেষ্টা করছি, তবে ক্রেতাদের এসব ক্ষেত্রে বাধ্য করা যাবে না।"
উল্লেখ্য, গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর রেমিট্যান্সের জন্য ডলার রেট নির্ধারণ করা হয় ১০৮ টাকা, যেখানে রপ্তানিকারকদের জন্য এ রেট ছিল ৯৯ টাকা।
তখন থেকে, বাফেদা এবং এবিবি রপ্তানিকারকদের জন্য ডলার রেট ১৩ বার বাড়িয়েছে এবং রেমিট্যান্সের বিনিময় হার ৭ বার পরিবর্তন করেছে।