আকু’র আমদানি বিল পরিশোধ আগামী সপ্তাহে, ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামবে রিজার্ভ
আগামী সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১.২ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যাবে বলে জানা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে।
৩০ আগস্ট পর্যন্ত রিজার্ভ ২৩.০৬ বিলিয়ন ডলার ছিল। আমদানি বিল পরিশোধের পর ২১.৮৬ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি অবশিষ্ট থাকবে।
জুলাই-আগস্ট সময়ের আকু পেমেন্ট এর পূর্ববর্তী দুই মাসের তুলনায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সোমবার এ অর্থ পরিশোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা।
"যদিও এই সময়ের মধ্যে দেশের সামগ্রিক আমদানি কমেছে, কিন্তু এশিয়ার দেশগুলো থেকে আমদানিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছিল," যোগ করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত মাসে মে-জুনের ১.১ বিলিয়ন ডলারের আকু বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
আঞ্চলিক আমদানির ক্ষেত্রে নয়টি সদস্য দেশ - বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার আর্থিক লেনদেন কভার করে আকু পেমেন্ট গেটওয়ে। প্রতি দুই মাস অন্তর এ বিল পরিশোধ করা হয়।
১৩ জুলাই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রস্তাবিত ব্যালেন্স অফ পেমেন্টস এবং ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল, ষষ্ঠ সংস্করণ (বিপিএম৬) অনুসারে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৬.৪৪ বিলিয়ন ডলার কমে ২৩.৫৬ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়ায়।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, রিজার্ভ কমা রোধ করতে এটি থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
"ডলার রেট বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। এটি রেমিট্যান্সের প্রবাহ এবং রপ্তানি আয় বাড়াবে, যা দীর্ঘমেয়াদে রিজার্ভ পুনর্গঠনে সহায়তা করবে," বলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল এবং জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়কালে আকু পেমেন্ট ছিল যথাক্রমে ১.১৮ বিলিয়ন এবং ১.১ বিলিয়ন ডলার।
তবে ২০২২ এর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের জন্য আকু পেমেন্ট ছিল ১.৩২ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের মে-জুন সময়ে এটি ছিল ১.৯৬ বিলিয়ন ডলার।
মার্কিন ডলারের ঘাটতির কারণে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার পরিমাণ কমেছে। এর অর্থ, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানি তীব্রভাবে কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, বেসরকারি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৯.৩৬ বিলিয়ন ডলারের এলসি খুলেছে, যা এর আগের অর্থবছর ছিল ৯৪.২৬ বিলিয়ন ডলার।
গত এক বছর ধরে দেশের আমদানি কমলেও রিজার্ভ কমে যাওয়া রোধ করা যাচ্ছে না। এর একটি বড় কারণ হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদায়ী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ডলার বিক্রি করেছে।
আমদানি বিল নিষ্পত্তির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছে ১৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে গত ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফ ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণের প্রথম কিস্তি হিসেবে বাংলাদেশকে ৪৭৬.২৭ মিলিয়ন ডলার বিতরণ করেছে। দ্বিতীয় কিস্তি চলতি বছরের শেষে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আইএমএফ ঋণ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে দেশের নেট রিজার্ভের পরিমাণ হতে হবে ২৫.৩১ বিলিয়ন ডলার এবং ডিসেম্বরের শেষে হতে হবে ২৬ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে আকু পেমেন্টের পর নেট রিজার্ভ আরও ২ বিলিয়ন ডলার নিচে নামবে।