ক্লোভারলিফ ইন্টারচেঞ্জ ও ৪-লেনের হাইওয়ে উত্তরবঙ্গে যোগাযোগ, বাণিজ্য বাড়াবে
ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ১৯০ কিলোমিটার অংশ চার লেনে উন্নিত হওয়ার পর এবং মাওয়া-ভাঙ্গার মতো হাটিকুমরুলে ইন্টারচেঞ্জ চালু হলে এই পথে দীর্ঘদিন ধরে চলা ভোগান্তি কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, চার লেন ও ইন্টারচেঞ্জের কাজ সম্পন্ন হলে উত্তরবঙ্গের ২২ জেলার যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। সুফল পাবে ঢাকায় যাওয়া-আসা করা হাজারো যাত্রী-চালকেরা। এই অঞ্চলে সৃষ্টি হবে বিনিয়োগের পরিবেশ।
যাত্রী ও চালকরা জানান, উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনের জন্য হাটিকুমরুল সংযোগ সড়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। তবে অত্যাধিক যানজটের কারণে প্রায়শই নাজেহাল অবস্থা হয় এখানে।
পাশপাশি দুর্বল সড়ক যোগাযোগের কারণে উত্তরবঙ্গে বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে এবং বুড়িমারি ও বাংলাবান্ধা হয়ে ভারত-নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারে ব্যাঘাত ঘটছে।
এসব সমস্যা সমাধানে দ্বিতীয় সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্পের আওতায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহযোগিতায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুরের মডার্ন মোড় পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নিত করা হচ্ছে এবং ইন্টারচেঞ্জ তৈরি করা হচ্ছে।
সাসেক-২ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. ওয়ালিউর রহমান বলেন, এই প্রকল্প উত্তরের মানুষের যোগাযোগ আর জীবন সহজ করবে। এটি সড়ক যোগাযোগ খাতে অনন্য মাইলফলক।
১৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। হাটিকুমরুলের ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণে ব্যয় হবে ৭৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
প্রকল্পের আওতায় একটি আধুনিক ইন্টারসেকশন, একটি অপারেশন ও মেইন্টেন্যান্স ভবন এবং একটি হাইওয়ে সার্ভিস এরিয়া নির্মাণ করা হবে। সার্ভিস এরিয়াটি যানবাহনের অস্থায়ী বিশ্রামাগার হিসেবে কাজ করবে।
২০২১ সালে সাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইন্টারসেকশন নির্মাণ করছে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড। নির্মাণের পর ছয় বছর অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ইন্টারসেকশন নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে ১০০ একর জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধের কারণে নির্মাণ সামগ্রীর (রড়, সিমেন্ট ইত্যাদি ) দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তা সত্বেও, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ চলমান রেখেছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ।
এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কের ৬৮ শতাংশ কাজ শেষ হলেও উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বর খ্যাত হাটিকুমরুলে ইন্টারসেকশনের কাজ মাত্র ৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
হাটিকুমরুল ইন্টারসেকশনের ম্যানেজার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ শেষ হবে ২০২৫ ডিসেম্বরে। কারণ জমি অধিগ্রহণ করতে দেরি হয়েছে। এর মধ্যে প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাট, পাইলিং, কালভার্টের কাজ হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি সূত্র বলছে, হাটিকুমরুল মোড় ব্যবহার করে দেশের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা এবং ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থাৎ খুলনা বিভাগের আরও ৬ জেলার মানুষ যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ২৮ হাজার যানবাহন চলাচল করে। সেতু পার হয়ে পশ্চিম দিকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে হাটিকুমরুল মোড়। প্রতিদিন এতো গাড়ি চলাচলের কারণে হাটিকুমরুলে যানজট লেগেই থাকে।
বগুড়ার বেসরকারি চাকরিজীবী রাকিবুল ইসলাম বলেন, সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়ার প্রবেশমুখ অর্থাৎ হাটিকুমরুল যানজটের কারখানা। ঈদের সময় এখানে ভয়াবহ জ্যাম হয়। উত্তর ইন্টারসেকশন উত্তরবঙ্গের জন্য আশির্বাদ হবে।
ঢাকা-বগুড়া রুটে গত ১৫ বছর ধরে বাস চালান সোহান শেখ। তিনি বলেন, গোলচত্ত্বরের আশেপাশের রেস্তোরাঁগুলো যানজটের প্রধান কারণ। এখানে ইন্টারসেকশন নির্মাণ হলে রাস্তা ক্লিয়ার থাকবে। তাহলে এক সেকেন্ডের জন্যও যানজট থাকবে না।
পঞ্চগড় কিংবা রংপুর থেকে কোনো ট্রাক ঢাকায় গেলো কিংবা ঢাকা থেকে আসলে তাদের বিশ্রাম করার মতো জায়গা নেই। ইন্টারসেকশন হলে এখানে শতশত চালক বিশ্রাম নিতে পারবে বলে মনে করেন বগুড়া জেলা ট্রাক, লরী ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিন সরকার। তিনি বলেন, এতো দীর্ঘ পথে বিশ্রামের সুযোগ হলে গাড়ির টায়ার, ইঞ্জিন সবই ভালো থাকবে। চালকেরা শারীরিকভাবেও সুস্থ থাকবে। দুর্ঘটনা কমে যাবে। সরকারের অসাধারণ উদ্যোগ এটি।
ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতিকরণ প্রকল্প এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাবে বলে মনে করেন বগুড়া চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি মাহফুজুল ইসলাম রাজ। এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, বগুড়ায় বিমানবন্দর সম্পূর্ণরূপে চালু না হওয়ার কারণে উত্তরে ঢাকার ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে সাহস করেন না। কিন্তু মহাসড়কের এমন বৈপ্লবিক উন্নয়নে সেই বাধা অতিক্রম করা যাবে বলে আমার বিশ্বাস। বিনিয়োগের পরিবেশ পাবেন ব্যবসায়ীরা। সৃষ্টি হবে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান।