বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ১০ বিলিয়নে নামলে আইএমএফের সহায়তা না-ও মিলতে পারে: রেহমান সোবহান
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেছেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে এক সময় যদি তা ১০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, তখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সহায়তা না-ও মিলতে পারে।
আজ সোমবার (৯ অক্টোবর) অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল 'অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সঙ্গে সংলাপ'।
বাংলাদেশের রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার মিল দেখছেন রেহমান সোবহান। তবে 'বাংলাদেশের অর্থনীতি নিঃসন্দেহে শ্রীলঙ্কার চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে' বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'আমাদের বড় একটি রপ্তানি খাত আছে। তার সঙ্গে আছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়, যা শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক বেশি।' এসব কারণে বাংলাদেশের বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কখনো শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে, এমনটা বিশ্বাস করেন না তিনি।
রোববার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত সেপ্টেম্বরে দেশে আসা রেমিট্যান্সে উল্লেখযোগ্য পতন হয়েছে। এসময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৪ কোটি ডলার, যা কিনা ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। অথচ আগস্টে এক মাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক শ্রমিক বিদেশে যান। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও ১১ লাখ ৩০ হাজার শ্রমিক রপ্তানির রেকর্ড হয়।
এই অবস্থায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (ফরেক্স রিজার্ভ) ধারাবাহিকভাবে কমছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায় আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুসারে গত ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখে যার পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।
এবিষয়ে রেহমান সোবহান বলেন, আপাত দৃষ্টিতে প্রবাসী আয় আসা কমে যাচ্ছে মনে হলেও, বাস্তবে তা কমেনি। বরং আনুষ্ঠানিক বা ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা কমেছে, বেশিরভাগটাই আসছে অনানুষ্ঠানিক পথে, যার মূল মাধ্যম হুন্ডি।
এতে 'রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা না হয়ে হুন্ডিতে জমা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের বাইরে জমা হচ্ছে। যাঁরা বিদেশে অর্থ পাচার করেন, তাঁদের জন্য এটা সুবিধাজনক হয়েছে' বলে মন্তব্য করেন রেহমান সোবহান।
দেশের আর্থিক খাতের সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে মন্তব্য করে বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করাটা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। 'এর জন্য বড় ব্যবসায়ীরা নয়; বরং যারা এসব করছেন, তাঁরা নিজেদের বড় রাজনীতিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন।'