অবরোধে খাতুনগঞ্জে ১,৫০০ কোটি টাকার বিক্রি কমেছে, জানালেন ব্যবসায়ীরা
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তিন দিনের অবরোধে মারাত্বক প্রভাব পড়েছে দেশের ভোগ্যপণ্যের প্রধান পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে। গত তিন দিনে বাজারের ৩,৫০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পণ্য বেচাকেনা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৫০-৬০ শতাংশ কম হয়েছে, ফলে প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, অবরোধের প্রথম দিন থেকে ব্যবসায়ীরা দোকান-পাট খোলা রেখেছে। কিন্তু বেচাকেনা ছিল খুবই কম। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে প্রায় পাঁচ হাজার দোকান-আড়ৎ ও গুদামে দিনে এক-দেড় হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। কিন্তু অবরোধের কারণে গত তিন দিনে কমপক্ষে দেড়-দুই হাজার কোটি টাকা কমে গেছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়ামান বাদশা বলেন, অবরোধের প্রথম দিন থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বাজারে দূর-দূরান্তের জেলাগুলো থেকে কোনো পণ্যবাহী গাড়ি প্রবেশ করেনি। তবে দুপুর থেকে পণ্যবাহী গাড়ির পরিমাণ বাড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দর ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন ২৫০-৩০০টি ট্রাক চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জে আসে ভোগ্য পণ্য নিয়ে। আবার বিক্রি করা পণ্য পরিবহনের জন্য প্রতিদিন ট্রাক ও ঠেলাগাড়ি ঢুকে আরও কমপক্ষে তিন শ'।
আসাদগঞ্জের স্টিল পণ্য বিক্রেতা মেসার্স ইসমাইল ট্রেডিংয়ের স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'অবরোধের তিন দিনে বাজারে কিছু ভোগ্য পণ্য বিক্রি হলেও স্টিল পণ্য বিক্রি প্রায় স্থবির ছিল। এতে প্রত্যেক ব্যবসায়ী ক্ষতির মুখে পড়েছে।
স্বাভাবিক হয়নি বন্দরের কন্টেইনার ডেলিভারি
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন ৩ হাজার থেকে চার হাজারের বেশি কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। এসব পণ্য ডেলিভারি নিতে প্রতিদিন বন্দরে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, প্রাইম মুভার প্রবেশ করে।
তবে অবরোধের কারণে তৈরি হয়েছে পরিবহন সংকট। কমে গেছে পণ্য ডেলিভারি। অবরোধের প্রথম দিনেই তার আগের দিনের তুলনায় ডেলিভারি কমে যায় ৩২ শতাংশ। অবরোধের ২য় এবং তৃতীয় দিনেও কন্টেইনার ডেলিভারি স্বাভাবিক হয়নি।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ১ নভেম্বর সকাল ৮ টা থেকে ২ নভেম্বর সকাল ৮ টা পর্যন্ত কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছে ২৯৮২ টি। ৩১ অক্টোবর সকাল ৮ টা থেকে ১ নভেম্বর সকাল ৮ টা পর্যন্ত কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছিলো ২৭৮৮টি।
চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার রাখার সক্ষমতা ৫৩,৫১৮ টিইইউ । ২ নভেম্বর সকাল ৮ টা পর্যন্ত বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনার রয়েছে ৩২,০৪২ টিইইউ। ২৯ অক্টোবর বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিলো ২৯০৩৪ টিইইউ। চার দিনের ব্যবধানে বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনার সংখ্যা বেড়েছে ৩০০৮ টিইইউ ।
আইসিডির কার্যক্রম স্বাভাবিক
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো এসোসিয়েশন (বিকডা) এর তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিক সময়ে কন্টেইনার বোঝাইয়ের জন্য চট্টগ্রামের ১৯টি আইসিডিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রপ্তানি পণ্য নিয়ে ২০০০-২৫০০ ট্রাক কাভার্ড ভ্যান আসে। জাহাজীকরণের জন্য আইসিডি থেকে প্রতিদিন ১৫০০-২০০০ টিইইউ চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে নেওয়া হয়।
অবরোধের প্রথম দিন ৩১ অক্টোবর পণ্য নিয়ে আইসিডিতে ২৭১৮ টি ট্রাক আসে। আইসিডি থেকে বন্দরে রপ্তানি কন্টেনইার পাঠানো হয় ১৫১৮ টিইইউ।
একই ভাবে ১ নভেম্বর আইসিডিতে আসে ২১৪০ টি ট্রাক এবং আইসিডি থেকে বন্দরে নেওয়া হয় ১৬৪৪ টিইইউ রপ্তানি কন্টেইনার।
বিকডার সেক্রেটারি জেনারেল রুহুল আমিন শিকদার টিবিএসকে বলেন, অবরোধে আইসিডিতে পণ্য আসা এবং বন্দরে রপ্তানি পণ্য পরিবহনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। আইসিডিতে পণ্য আসা এবং রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ স্বাভাবিক রয়েছে। অবরোধের তৃতীয় দিনেও পণ্য আসা এবং বন্দরে কন্টেইনার পাঠানো স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে।
তবে তৈরি পোশাক মালিকরা জানিয়েছেন, অবরোধের কারণে পণ্য পরিবহনের সংকট দেখা দেয়। অবরোধের কারণে বন্দর থেকে ঢাকামুখী এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আইসিডিতে পণ্য পরিবহনে স্বাভাবিক চেয়ে ২৫-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ভাড়া গুণতে হয়েছে।
বিজিএমইএ'র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাকিবুল আলম চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, অবরোধের কারণে শিপমেন্টে সমস্যা তৈরি না হলেও রাতের বেলায় পণ্য পরিবহন করতে হয়েছে। সড়কে পথে তেমন সমস্যায় পড়তে হয়নি। তবে অবরোধের কারনে আমাদের বাড়তি ভাড়া বহন করতে হয়েছে।