আয় করা ডলার প্রিয় পে'র মাধ্যমে মাত্র পাঁচ মিনিটেই দেশে আনতে পারবেন ফ্রিল্যান্সাররা
চলতি নভেম্বরে চালু হচ্ছে ফিনটেক কোম্পানি- 'প্রিয় পে' (Priyo Pay), বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের আয় করা ডলার সহজে দেশে আনার সেবা দিবে তারা। প্রিয় পে ব্যবহারকারী গ্রাহকের ফ্রিল্যান্সিং এর আয় মাত্র পাঁচ মিনিটেই বিদেশ থেকে তাদের ব্যাংক একাউন্টে আসবে এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে।
বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সদের জন্য আর্থিক লেনদেনে রুপান্তর আনবে এই সেবা। পাশাপাশি এতদিন বিদেশি প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর যে নির্ভরশীলতা ছিল, সেটিও কমাবে।
এর প্রতিষ্ঠাতাদের আশা, প্ল্যাটফর্মটির মাধ্যমে ডেটা এন্ট্রি, ডেটা প্রসেস, অফশোর আইটি সেবা, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং এর মতোন সেবা রপ্তানির আয় সহজে দেশে আসবে।
প্রিয় পে'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জাকারিয়া স্বপন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এতদিন ফ্রিল্যান্সাররা তাদের আয় দেশে নিয়ে আসতে অনেক ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতেন। এখন প্রিয় পে'তে একটি একাউন্ট থাকলেই তারা নিজেদের আয় করা ডলার স্থানীয় ব্যাংকের নিজ একাউন্টে রিয়েল টাইমে ট্রান্সফার করতে পারবেন। বিদেশে কোন পেমেন্ট করার জন্য ব্যবহারকারী একটি মাস্টারকার্ডও পাবেন।"
তিনি জানান, "সেইসঙ্গে প্রিয় পে ব্যবহার করতে কোনো সমস্যা হলে, সেটি সমাধান করতে ফিজিক্যাল সাপোর্ট সেন্টারও প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রিয় পে বর্তমানে বেটা ভার্সনে চলছে। চলতি নভেম্বরেই আমরা এটা অফিশিয়ালি লঞ্চ করব বলে আশা করছি।"
গেল অক্টোবরের ১ তারিখে প্রিয় পে' এর বেটা বা পরীক্ষামূলক ভার্সন চালু করা হয়েছে। এর মধ্যেই প্রায় ৩ হাজার গ্রাহক সার্ভিসটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
তাদের সেবার বিভিন্ন ফিচার ব্যাখ্যা করে জাকারিয়া স্বপন দাবি করেন, এই সেবা প্রদানে অগ্রদূত পাইওনিয়ার ও ওয়াইজ এর মতোন বিদেশি লেনদেন প্রক্রিয়াকারী কোম্পানি। তাদের মতোই সার্বিক সুবিধা থাকবে তাদের ফিনটেক উদ্যোগে। বিদেশি এসব প্রতিষ্ঠান ফ্রিল্যান্সারদের বিশ্বব্যাপী যেসব সার্ভিস দিচ্ছে, এর সবই দেবে প্রিয় পে।
প্রিয় পে'র ব্যবহারকারী কারা হবেন, এবং কীভাবে উপকৃত হবেন জানতে চাইলে তিনি জানান, কোম্পানিটি আপাতত বাংলাদেশের ফিল্যান্সারদের টার্গেট করছে, ভবিষ্যতে বিদেশে কাজ করা প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আনারও পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশেই প্রিয় পে'র স্থানীয় অফিসের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের যেকোন সমস্যা সমাধান করতে পারবে উল্লেখ করে এ উদ্যোক্তা বলেন, এই সেবা যারা ব্যবহার করবেন, তাদের অর্থ আটকে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। কোনো কারণে লেনদেনে সমস্যা হলে তারা লোকাল অফিসে যোগাযোগ করে সেটি সমাধান করতে পারবেন। 'অর্থাৎ, প্রিয় পে-তে গ্রাহকদের অর্থ সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে।'
বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তির বিখ্যাত হাব- যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির একটি আইটি কোম্পানিতে ১৪ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে জাকারিয়ার। এরপরে বাংলাদেশের ডিজিটাল পেমেন্ট খাতে এই উদ্যোগ নেন তিনি।
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য নতুন এই সার্ভিসটি নিয়ে আসতে দেড় বছর আগে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করা হয়। প্রথমে আমেরিকাতে 'প্রিয় পে' নামে একটি ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। সে ব্যাংকের অধীনে প্রিয় পে চালু করা হয়েছে।
যেভাবে প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করতে হবে
ডলার আয় দেশে নিয়ে আসতে ফ্রিল্যান্সারদের প্রথমে প্রিয় পে'তে তাদের পাসপোর্ট বা এনআইডি নম্বর দিয়ে একটি একাউন্ট খুলতে হবে। এই একাউন্ট যুক্তরাষ্ট্রে কোম্পানি ডিজিটাল ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, এতে গ্রাহকের ফোন নম্বরটিও সংযুক্ত করা হবে। একাউন্ট খোলার পর গ্রাহক একটি মাস্টারকার্ড পাবেন, যার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোন স্থানে তারা ডলার খরচ করতে পারবেন।
অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য কোন চার্জ নেই, গ্রাহক তার ফ্রিল্যান্স একাউন্ট থেকে প্রিয় পে'তে ডলার স্থানান্তর করতে পারবেন। এ ছাড়া, ইচ্ছেনুসারে নিজের যেকোন ব্যাংক হিসাবে তাৎক্ষনিকভাবে অর্থ স্থানান্তরও করতে পারবেন।
প্রিয় পে ডলারের ভালো বিনিময় দর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। ব্যবহার করতে বছরে ২৪ ডলার সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। তবে এই একাউন্টের মাধ্যমে কেউ বছরে ২ হাজার ডলার বা তার বেশি রেমিট্যান্স নিয়ে আসলে কেটে রাখা চার্জ ফেরত দেওয়া হবে।
সিইও জাকারিয়া স্বপন বলেন, 'বাংলাদেশে নিজস্ব অফিস না থাকায় আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়াকারী বিদেশি কোম্পানিগুলোর থেকে যথাযথ সহায়তা পাননা আমাদের ফ্রিল্যান্সাররা। তাৎক্ষনিকভাবে অর্থ আনতে হলেও তারা সমস্যার মুখে পড়েন। এসব সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রিয় পে প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করা হয়েছে।'
বর্তমানে দেশের প্রায় পাঁচ লাখ ফ্রিল্যান্সার বছরে ৯০ কোটি ডলার আয় করেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের বৈশ্বিক বাজার এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি।
যেখানেই প্রবাসী বাংলাদেশি আছে, সেখানেই রেমিট্যান্স সার্ভিস চালুর ইচ্ছে আছে জাকারিয়ার। এদেশের ফ্রিল্যান্সিং খাতের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দৃঢ় আশাবাদ রাখা এ উদ্যোক্তা বলেন, "আমার ধারণা, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের আয় একশ' কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।"