বৃহৎ করদাতাদের কাছে মামলায় আটকা এনবিআরের ১৯ হাজার কোটি টাকার কর
বৃহৎ করদাতাদের সঙ্গে এক হাজারের বেশি মামলায় জড়িত আয়করের পরিমাণ ১৮ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। বছরের পর বছর ধরে এসব মামলার সংখ্যা না কমে বরং বাড়ছে—ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিপুল পরিমাণ রাজস্বও আটকে আছে এসব মামলায়।
এছাড়া বিভিন্ন মামলায় আটকে থাকা মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) পরিমাণ আরও প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। অর্থাৎ কেবল আয়কর ও ভ্যাট মিলিয়ে মামলায় জড়িত রাজস্বের পরিমাণ প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা।
অবশ্য চূড়ান্ত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এর কতটুকু এনবিআরের প্রকৃত রাজস্ব, তা নিশ্চিত নয় বলে জানান কর্মকর্তারা।
এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটে (এলটিইউ) নিবন্ধিত কোম্পানি ও ব্যক্তির সংখ্যা ১ হাজার ৩১৩। এর মধ্যে কোম্পানি আছে ৪৫৩টি। বাকিরা ব্যক্তি খাতের বড় আকারের করদাতা। এসব কোম্পানি ও ব্যক্তি খাতের করদাতারা অপেক্ষাকৃত বেশি হারে আয়কর দেয় বলে তারা এলটিইউতে নিবন্ধিত।
এলটিইউ সূত্র দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছে, আলোচ্য মামলায় আটকে থাকা আয়করের বেশিরভাগই কোম্পানিগুলোর কাছে। অবশ্য এর পরিমাণ কত তা জানা যায়নি।
এলটিইউর একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, 'করদাতার কাছে কর চাওয়া হলে তারা এনবিআরের ট্যাক্সেস আপিলাট ট্রাইব্যুনালে আপিল করে। সেখানে হেরে যাওয়ার পর তারা উচ্চ আদালতে যায়। অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের পাওনা রাজস্ব প্রদানে ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করার উদ্দেশ্যে এটি করা হয়।'
এনবিআরের এলটিইউতে নিবন্ধিত করদাতার মধ্যে ব্যাংক, বিমা, মার্চেন্ট ব্যাংক, লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি, টেলিকমিউনিকেশন সরবরাহকারী, খাদ্য ও পানীয়, পোশাক ও টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, মাল্টি-প্রোডাক্টস ভেঞ্চার, উৎপাদন ও অন্যান্য খতের বড় আয়কারী কোম্পানি রয়েছে। এর বাইরে ব্যক্তি করদাতার সংখ্যা ৮৬০।
২০২২-২৩ অর্থবছরে এলটিইউ থেকে কর আদায় হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট আদায়কৃত আয়করের এক-চতুর্থাংশের কাছাকাছি। এর মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে ৮৫৮ কোটি টাকার কর।
তবে সূত্র জানায়, যে পরিমাণ রাজস্ব মামলা নিষ্পত্তি করে আায় করা হয়েছে, একই সময়ে তার চেয়ে বেশি আয়করের রাজস্ব আটকে গেছে মামলার কারণে।
মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ
মামলায় আটকে থাকা রাজস্বের একটি বড় অংশ চলতি অর্থবছরের মধ্যে আদায়ের লক্ষ্যে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর।
এই লক্ষ্যে সম্প্রতি ভ্যাট বিভাগের এক অনুষ্ঠানে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আনিম উদ্দিন।
এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয় এনবিআরের ট্যাক্স বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তাদের।
ওই বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশদেদ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে এনবিআরে ডেডিকেটেড লিগ্যাল ইউনিট স্থাপন করার পরামর্শ দেন। এই ইউনিট অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে নিয়মিত যোগাযোগ ও ইনপুট সহজ প্রক্রিয়াটিকে আরও মসৃণ করবে।
সভায় এনবিআরের পক্ষ থেকে আপাতত ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান।