১৫ বছরে দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে ৯২,২৬১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে: সিপিডি
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত বড় ২৪টি বড় স্ক্যামের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাত থেকে যে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে, তার পরিমাণ ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা।
ছোটখাটো অনিয়ম, যেমন ঋণ অবলোপন, পুনঃনির্ধারণ এবং আদালতের স্থগিতাদেশ বিবেচনায় নিলে মোট ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে ঋণ, অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণসহ নানা ধরনের এসব আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকে কেলেঙ্কারি বা অনিয়ম হয়, সেগুলো অফিসিয়াল সূত্রে পাওয়া যায় না। সেগুলো সংবাদ মাধ্যমে আসে। গণমাধ্যমকর্মীরা সেগুলো হয়তো অফিসিয়াল সূত্রেই আনেন। এগুলোকে কম্পাইল করে ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গণমাধ্যমে ২৪টি ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এসব ঘটনায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বিশাল এই অর্থ দিয়ে কী হতে পারে সেটা আপনারা হিসাব করতে পারেন। আপনারা হিসাব করতে পারেন আমাদের রাজস্ব ঘাটতি কত। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কত ব্যয় হচ্ছে, শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে কত ব্যয় করছি। এই পরিমাণ টাকা দিয়ে আমরা কী করতে পারতাম।
আজ (২৩ ডিসেম্বর) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
সিপিডির 'ইন্ডিপেনডেন্ট রিভিউ অভ বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট' (আইআরবিডি) প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে প্রস্তুত করা 'স্টেট অভ দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি ইন এফওয়াই২০২৩-২৪ (ফার্স্ট রিডিং)' শীর্ষক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, অনিয়মের কারণে ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত খেলাপি ঋণ সাড়ে তিনগুণ বেড়েছে।
তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের ব্যাংকেই তারল্য সংকট বাড়ছে। এর ফলে প্রভিশন ঘাটতিও বাড়ছে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকারি বিশেষ করে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর অবস্থা করুণ।
বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি তুলে ধরতে সিপিডির সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ব্যাংক থেকে লুটে নেওয়া এই টাকার পরিমাণ সরকারের রাজস্ব ঘাটতি, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের বড় একটা অংশের সমান।
জনগণের অর্থের সুরক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেনি দাবি করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত পদক্ষেপ দুর্বল ছিল। তা ছাড়া সুবিধাভোগীরাই নীতি প্রণয়নে ভূমিকা রেখেছেন।
একসময় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অবস্থা ভালো থাকলেও এখন পরিস্থিতি ভিন্ন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সংবঘদ্ধ একটি শ্রেণির মাধ্যমে ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, 'মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক সুদের হার বাড়ানো হলেও উদ্যোগটা অনেক বিলম্বে নেওয়া হয়েছে, যার প্রভাবে পণ্যের দাম কমা শুরু হয়নি।'
তিনি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করা, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দেন।
একইসাথে মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে মজুরির হার বাড়ানোর পাশাপাশি নগদ সহায়তা ও পণ্য সহায়তা বাড়ানোর পরামর্শও দেন তিনি।