আকুর বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ এখন ২০.৩৮ বিলিয়ন ডলার
নভেম্বর-ডিসেম্বর সময়ের আমদানি বাবদ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১.২৭ বিলিয়ন ডলার দায় পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। এর ফলে মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) দিন শেষে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ২০.৩৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
আঞ্চলিক আমদানির ক্ষেত্রে নয়টি সদস্য দেশ– বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার আর্থিক লেনদেন আকু'র পেমেন্ট গেটওয়ের আওতাভুক্ত। প্রতি দুই মাস অন্তর এ বিল পরিশোধ করা হয়।
এর আগে আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সময়ের ১.২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার পরে– নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল ১৯.৩০ বিলিয়ন ডলারে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে মে-জুন সময়ের ১.১ বিলিয়ন ডলারের আমদানি দায় মেটানো হয়। আর জুলাই-আগস্ট এর ১.২ বিলিয়ন ডলার দায় পরিশোধ করা হয় সেপ্টেম্বরের শুরুতে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর শর্ত মেনে, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল নামক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রিজার্ভ গণনা পদ্ধতি অনুসরণ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এশীয় দেশগুলো থেকে আমাদের আমদানি বাড়ার কারণে– আকু পেমেন্টের পরিমাণও কিছুটা বাড়ছে। সরকারকে তার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও জালানি আমদানির ব্যয় মেটাতে ব্যাংকগুলোর কাছে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে আমাদের রিজার্ভ ও রপ্তানি আয়ে এখনো কিছুটা প্রবৃদ্ধি রয়েছে।"
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে ৬.৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। যদিও এরমধ্যে ব্যাংকগুলো থেকেও ১.০৪ বিলিয়ন ডলার কিনেছে।
রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়েও মন্থর গতি
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি হেড টিবিএসকে বলেন, "রিজার্ভ বাড়ার সবগুলো সূচকই এখন নিম্মমুখী। বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ পাওয়ার তুলনায়– বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে, দেশের রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়েরও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি দেখছি না।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১০.৭৯ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ আগের অর্থবছরে একই সময়ের তুলনায় মাত্র ২.৮৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বেসরকারি ব্যাংকটির ওই ট্রেজারি হেড বলেন, রিজার্ভের পতন কমাতে দেশের আমদানিতে শর্তারোপের কারণে– গত প্রায় একবছর যাবৎ দেশের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে। আমাদের অধিকাংশ রপ্তানি আয় ব্যাক -টু- ব্যাক এলসির উপর নির্ভরশীল। অনেক ব্যাংকে ডলার সংকট থাকায়, তাঁরা পর্যাপ্ত এলসি খুলতে পারছে না। যার কারণে বোঝা যাচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে তুলনামূলক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হবে না।"
২০২৩ সালের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ প্রাপ্তির চেয়ে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল হিসাবে ৫.২১ বিলিয়ন ডলার বেশি পরিশোধ করেছে। এতে হ্রাসমান রিজার্ভের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
জানুয়ারি-নভেম্বর সময়ে দেশের ব্যবসাগুলো বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ পেয়েছে মোট ২৩.৭০ বিলিয়ন ডলার। একইসময়ে এ ধরনের ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করেছে ২৮.৯২ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "২০২৩ এর প্রথম ১১ মাসে আমরা রিজার্ভে বড় পতন হতে দেখেছি। যার অন্যতম কারণ ছিল বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ প্রাপ্তি কম হওয়া। স্বল্পমেয়াদি এসব ঋণের মাধ্যমে আমদানির অর্থায়ন হয়। বর্তমানে আমদানি কমার ঘটনাও এ ধরনের ঋণের চাহিদা কমিয়েছে।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশে মোট এলসি খোলা হয়েছে ২৭.৫৩ বিলিয়ন ডলারের। আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা প্রায় ১৪ শতাংশ কমেছে।
তাছাড়া, এসময়ে ভোক্তাপণ্য, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে যথাক্রমে– ২৭.৪৭, ১৬.৯৮ এবং ১৬.৭৫ শতাংশ।