রপ্তানি-আমদানি বাণিজ্য কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো
স্থানীয় ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেশের রপ্তানি-আমদানি বাণিজ্য কমে যাওয়ায় বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর (আইসিডি) ব্যবসার ওপর চাপ তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমে গেছে ১১.০৭ শতাংশ।
বিকডার তথ্য বলছে, বেসরকারি আইসিডিগুলোতে স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে আয় হতো প্রায় ১৩০ কোটি টাকা। এখন সেটি নেমে এসেছে ৯০ থেকে ৯১ কোটি টাকায়। ব্যবসা কমে যাওয়ায় এখন আয়ের পরিমাণ কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
ভার্টেক্স অফ-ডক লজিস্টিক সার্ভিসেস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান ফাহিম নুর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি। যার মধ্যে রয়েছে তেলের দাম বৃদ্ধি, ডলারের ঊর্ধ্বগতি, এবং বাণিজ্যের পরিমাণ কমে যাওয়া। ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে। আইসিডি ব্যবসায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছে। এখন পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে তা অনিশ্চিত।"
সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্য জাহাজে উঠার আগে কন্টেইনার বোঝাই হয় চট্টগ্রামের বেসরকারী আইসিডিতে। তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে আইসিডিগুলোতে রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৬,৬১,১৫২ টিইইউ। ২০২২ সালে হ্যান্ডলিং হয়েছিলো ৭,৪৩,৭৬১ টিইইউ।
চট্টগ্রামে ১৯টি প্রাইভেট ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো রয়েছে, যা অফ-ডক নামেও পরিচিত। এগুলো চাল, গম, সরিষার বীজ, ছোলা, ডাল এবং খাদ্যদ্রব্যসহ প্রায় ৯৫ ভাগ সমুদ্রপথে রপ্তানি পণ্য এবং ৩৮ ধরণের আমদানি পণ্য হ্যান্ডেল করে।
আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার বন্দরের ইয়ার্ডে খালাসের পর ৩৮ ধরণের পণ্য আইসিডিতে নিয়ে যাওয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনারে করে আমদানি হওয়া মোট পণ্যের প্রায় ২৩ শতাংশ খালাস দেওয়া হয় আইসিডি থেকে।
২০২৩ সালে আইসিডিতে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২,১৬,৫৩৭ টিইইউ। ২০২২ সালে হ্যান্ডলিং হয়েছে ২,৩৯,৯৯১ টিইইউ। অর্থাৎ ২০২৩ সালে আইসিডিতে আমদানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে ২৩৪৫৪ টিইইউ বা ৯.৭৭ শতাংশ।
রপ্তানিকারক এবং আইসিডি খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বৈশ্বিক বাণিজ্য মন্দা, ডলার ক্রাইসিস, তৈরী পোষাকের অর্ডার কমে যাওয়ায় নিম্মমুখী রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে এই প্রবৃদ্ধি।
আর আইসিডি মালিকরা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে ব্যবসা কমে যাওয়ার কারণে বেশিরভাগ আইসিডিতে আয় কমে গেছে। তারা ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
বিকডা-এর সভাপতি নুরুল কাউয়ুম খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আইসিডির আয় কমে যাওয়ায় ব্যাংক ঋণ পরিশোধের উপর প্রভাব পড়বে। সুদসহ ব্যাংক ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। একইসাথে কাজ কমে যাওয়ায় শ্রমিকের সংখ্যাও কমিয়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনায় লোকসানে রয়েছে ডিপো মালিকরা। বৈশ্বিক বাণিজ্য মন্দা কাটিয়ে উঠা ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোন উপায় দেখা যাচ্ছে না।"
আইসিডিগুলোতে কন্টেইনার ধারণ সক্ষমতা প্রায় ৭৬ হাজার টিইইউস। আইসিডিগুলোতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। এতে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে কাজ করে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক।
বিকেএমইএ-এর ডিরেক্টর মোহাম্মদ শামসুল আজম বলেন, "বৈশ্বিক বাণিজ্য মন্দার কারণে বিদেশি তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে গেছে। ক্রেতারা তাদের অর্ডার কমিয়েছে। যার ফলে কাঁচামালের আমদানি হ্রাস পেয়েছে। ফলে রপ্তানির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। একইসাথে দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি আইসিডিতে আমদানি ও রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।"
২০২২ সালে আইসিডিতে খালি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ১৩,৩২,৯৩৭ টিইইউ। আর ২০২৩ খালি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৩,২৬,৩০০ টিইইউ। ফলে গতবছর খালি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমে দাঁড়িয়েছে ৬৬৩৭ টি বা ০.৫০ শতাংশ।