এক ছাদের নিচে আধুনিক টেক্সটাইল, আরএমজি মেশিনারির প্রদর্শনী
কাপড়ের ওপর একের পর এক নকশা এঁকে দিচ্ছে বিশালকায় এমব্রয়ডারি মেশিন। এক মেশিনে একসঙ্গে ছয় রকমের নকশায় এমব্রয়ডারি করা হচ্ছে। কম্পিউটারে ডিজাইন দেওয়া রয়েছে, সেই অনুযায়ী নকশা হয়ে যাচ্ছে। একজন মানুষ শুধু নিয়ন্ত্রণ করছেন মেশিনটি।
রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরা (আইসিসিবি) যেন পুরোটাই বড়সড় বস্ত্র বা পোশাক তৈরির কারখানা। একের পর এক মেশিন চলছে। কোনোটায় সেলাই হচ্ছে, কোনোটায় কাটিং, কোন মেশিনে বোতাম লাগানো হচ্ছে।
এমব্রয়ডারি মেশিনও চলছে বিরামহীন, কাপড়ের ওপর কারুকাজ হচ্ছে। অন্যদিকে গেঞ্জির কাপড় তৈরি কিংবা ডায়িং ও ওয়াশিংয়ের যন্ত্রগুলো চলছে থেমে থেমে।
বস্ত্র ও পোশাক খাতের উদ্যেক্তাদের আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে কনভেনশন সেন্টারে এক ছাদের নিচে করা হয়েছে দুটি আয়োজন—টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট মেশিনারি এক্সপো জিটিবি ২০২৪ এবং গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ ও প্যাকেজিং মেশিনারি এক্সপো জিএপি ২০২৪। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে আয়োজন দুটি।
চীন থেকে সিনসিম ব্র্যান্ডের এমব্রয়ডারি মেশিন বাংলাদেশে এনে বিক্রি করে চ্যাম্পিয়ন ফ্যামিলি। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মোহম্মদ নাহিদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বাংলাদেশে এ মেশিন নতুন এসেছে। একসঙ্গে ছয় ধরনের এমব্রয়ডারি ডিজাইন করা যায়।'
সিনসিম কোম্পানি উচ্চ দামের কম্পিউটারাইজড এমব্রয়ডারি মেশিন উৎপাদন ও বিক্রি করে।
আস্ক ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশনস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু সুলতান টিবিএসকে বলেন, 'চারদিনের এ আয়োজনে ২০টির বেশি দেশ থেকে তিন শতাধিক কোম্পানি এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে জাপান, চীন, ইতালি, জাপান, তাইওয়ান, তুরস্ক, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশ।'
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ছে। লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (লিড) স্বীকৃতি পাওয়া পোশাক কারখানা বিশ্বে বাংলাদেশ প্রথম। এর ফলে আধুনিক মেশিনের চাহিদা বাড়ছে।
টিপু সুলতান আরও বলেন, 'আমাদের ৯০ শতাংশ মেশিন বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তাই এক ছাদের নিচে এ আয়োজন, যাতে উদ্যোক্তারা আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সহজে পরিচিত হতে পারেন। এখানে দেশি কিছু মেশিনও প্রদর্শন হচ্ছে। দেশি-বিদেশি মিলে প্রায় ৬০০টি স্টল আছে।'
প্রতিযোগিতায় টিকতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা কারখানায় যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়েছেন। এ কারণে আগের তুলনায় পণ্যেন মান যেমন বাড়ছে, সেইসঙ্গে শ্রমিক কম লাগছে বলে জানান তারা।
মেলায় আসা টেক্স ডটফরেস্টের স্বত্বাধিকারী আশরাফুল হাসান বলেন, 'আমি নতুন করে একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি দেব। এখানে এসে একসঙ্গে অনেক আধুনিক প্রযুক্তির মেশিন দেখলাম। তাদের ক্যাটালগ ও নাম্বার নিয়ে রাখলাম; পরবর্তীতে যোগাযোগ করবে।'
হা-মীম গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হামীম অ্যাকসেসরিজের ম্যানেজার আশরাফুল আলম টিবিএসকে বলেন, 'আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে আধুনিক প্রযুক্তির মেশিন ব্যবহার করছি। সেইসঙ্গে গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজও তৈরি করছি। এর ফলে বিদেশি ক্রেতারা আমাদের কাছে সব ধরনের সাপোর্ট একই জায়গায় পাচ্ছে।'
শুক্রবার মেলা ঘুরে দেখা যায়, স্থায়ী চারটি হলরুম ছাড়াও অস্থায়ী আরও চারটি হলরুমে প্রদর্শন হচ্ছে যন্ত্রপাতি ও গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ।
দুপুরের পর থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেন। সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তা ও দর্শনার্থীদের স্বয়ংক্রিয় নানা যন্ত্রপাতির উদ্ভাবনী কার্যক্রমের প্রতি আগ্রহ দেখা গেছে। মেলায় বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের যন্ত্রপাতি, সুতা, কাপড়, রং, কাঁচামাল ও রাসায়নিকের বিভিন্ন ব্যবহার প্রদর্শন করা হচ্ছে। স্টলের কর্মীরা দর্শনার্থীদের পণ্য সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য দিচ্ছেন।
স্টলে কর্মীরা মেশিন চালাচ্ছেন। দর্শনার্থীদের তারা দেখিয়ে দিচ্ছেন কীভাবে কাজ করে এসব মেশিন। মেশিনারিজ সরবরাহকারী, আমদানিকারকরা উদ্যোক্তাদের হাতে-কলমে দেখান। পোশাকে কীভাবে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন প্রিন্ট করা হয়, তা এতে দেখানো হয়।
এছাড়া প্রদর্শন করা হয় বিশ্বের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদিত ফিনিশিং আয়রন। আরও রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের সুইং, নিটিং, এমব্রয়ডারি, লন্ড্রি, ফিনিশিং, ডায়িং, ক্যাড/ক্যাম, প্রিন্টিং কাটিং, স্প্রেডিং মেশিনারিজ।
বিভিন্ন কোম্পানি প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সুতা এবং ওভেন ও নিট শিল্পের জন্য উভয়ের মিশ্রণের সর্বাধুনিক সংগ্রহ তুলে ধরে এ আয়োজনে।
অটরয় আর্ট ইন সুইং-এর অটোমেটিক প্যান পকেট সেলাই মেশিনে ১০ ঘণ্টায় ৫ হাজার প্যান্টের পকেট সেলাই করা যাবে বলে জনান প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা।
প্রদর্শনীর একটি স্টল ছিল মাইক্রো ট্রিমস লিমিটেডের। প্রতিষ্ঠানটি গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ প্রদর্শন করছে। কোম্পানিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার বাসিত পরশ বলেন, 'আমরা এখন সাসটেইনেবিলিটির দিকে যাচ্ছি। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইনোভেটিভ পণ্য উৎপাদন করছি।'
তিনি বলেন, 'আমরা পরিবেশবান্ধব অরগানিক কটন ব্যবহার করছি। অগ্রানিক কটন আমরা ভারত থেকে আমদানি করি। সেটা সার্টিফাইড। বিদেশি ক্রেতারা এখন সাসটেইনেবল পণ্য চায়।'