২০২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৪৯ ভাগ
বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বাজারভিত্তিক ঋণের সুদ হার বেড়ে যাওয়া এবং বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের ঋণের গ্রেস পিরিয়ডের সমাপ্তির কারণে উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের মূল উৎস বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে চাপ বাড়ছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৪৮.৮২ ভাগ।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের সুদ ও আসল বাবদ পরিশোধ করেছে ১.৫৬ বিলিয়ন ডলার। যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১.০৫ বিলিয়ন ডলার।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে শুধু মাত্র সুদ পরিশোধ ১৩৩ ভাগ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে ডিসেম্বর পযন্ত সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৬৪১.৬৬ মিলিয়ন ডলার। একই সময়ে আসল পরিশোধ বেড়েছে ১৯ ভাগ।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, ইউক্রেন–রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইনান্সিং রেট (এসওএফআর) বেড়েছে। বর্তমান এসওএফআর রেট ৫ ভাগের বেশি; যা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ১ ভাগেরও কম ছিল। অন্যাদিকে বাংলাদেশের বাজারভিত্তিক ঋণ ক্রমগত বাড়ছে। এই কারণে বাংলাদেশকে এখন সুদ বাবদ বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে যে ঋণ পায় তার প্রায় ৭৫ ভাগ বাজারভিত্তিক ঋণ। এছাড়া এশিয়ান ইনফ্রাকটাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে বাজার ভিত্তিক সুদে ঋণ নেওয়া হয়। একইসাথে বিশ্বব্যাংক থেকেও স্বল্প পরিসরে বাজারভিত্তিক ঋণ নেয় বাংলাদেশ।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমান সুদ হার অব্যহত থাকলে চলতি অর্থবছরে শেষে বাংলাদেশকে সুদ বাবদ ১.১৯ বিলিয়ন পরিশোধ করতে হবে।
গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ সুদ বাবদ পরিশোধ করেছে ৯৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর আগের অর্থবছরে বাংলাদেশ সুদ বাবদ পরিশোধ করেছিল ৪৬৯ মিলিয়ন ডলার।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, সুদ পরিশোধের সঙ্গে সঙ্গে আসল পরিশোধের চাপ বাড়বে। কারণ ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বাজার সহায়তা ঋণ ও কর্ণফুলী টালেন, পদ্মা রেল সংযোগসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে গেছে। ফলে এসব ঋণের আসল এখন পরিশোধ করতে হবে।
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরি মনে করেন, লোন সার্ভিসিং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি ২৯৬.৬৫ শতাংশ বেড়ে ৬.৯৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি এসেছিল ১.৭৬ বিলিয়ন ডলার।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, এবার ঋণ গ্রহণের জন্য যে সব প্রক্রিয়ার মধ্যে দিতে যেতে হয়, সে প্রস্তুতি ভালো ছিল। এ কারণে অর্থবছরের শুরু থেকে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে অনেক প্রকল্পের ঋণ চুক্তি করা সম্ভব হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে প্রস্তুতির অভাবে শুরুর দিকে অনেক প্রকল্পের ঋণ চুক্তি করা সম্ভব হয়নি।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে এডিবির কাছ থেকে। এই সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া গেছে ২.৪৬ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি। এছাড়া জাপানের কাছ থেকে ২.০২ বিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১.৪১ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। তবে প্রতিশ্রুতি বাড়লেও বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাবে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বৈদেশিক অর্থছাড় ৭.৪৯ শতাংশ কমেছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বৈদেশিক অর্থছাড় হয়েছে ৪.০৬ বিলিয়ন ডলার। এর আগে অর্থবছরের একই সময়ে অর্থছাড়ের পরিমাণ ছিল ৩.৭৮ বিলিয়ন ডলার।
এই সময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে এডিবি। এই সংস্থা অর্থছাড় করেছে ১.১১ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে ৮৯২.২৩ মিলিয়ন ডলার। ৮১২ মিলিয়ন ছাড় করেছে জাপান। এছাড়া রাশিয়া ৫৪৪.১০ মিলিয়ন ডলার, চীন ৩৬১.৭১ মিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে।
বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের গতি বাড়াতে কমিটি
এদিকে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনতে এবং সময় মত শেষ করতে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই কমিটি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বৈদেশিক সহায়তা নির্ভর প্রকল্প পর্যালোচনা করবে।
পরিকল্পনা কমিশনের চেয়ারপার্সন এবং প্রধানমন্ত্রী সভাপতিত্বে আজ, বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরিকল্পনা কমিশনের সভায় এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হতে পারে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে। এর আগে সর্বশেষ পরিকল্পনা কমিশনের সভা হয়েছিল ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি।
সভায় অষ্টম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনার প্রক্ষেপণের সঙ্গে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বরাদ্দের অসামঞ্জস্যতা দূর করার বিষয়টিও এজেন্ডাভূক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের সভায় নতুন প্রকল্প বাছাই করতে নতুন কমিটি গঠন, নবম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দিক-নির্দেশনাও আসতে পারে বলে জানান পরিকল্পনা কমিশনে কর্মকর্তারা।