সরকারি তহবিল থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেনশন সুবিধা অব্যাহত থাকবে
অর্থ বিভাগের সম্মতি ছাড়া চালু করলেও সরকারি তহবিল থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের পেনশন সুবিধা অব্যাহত থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে অর্থ বিভাগের সম্মতি ছাড়া সরকারি তহবিলে চালু করা অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের পেনশন সুবিধা বহাল রাখা হবে কি না, সে বিষয়ে আরও পর্যালোচনা করতে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য পেনশন ব্যবস্থা নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও অর্থ সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার। সেখানে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন অর্থ বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা।
অর্থ বিভাগের অনুমোদন ছাড়া পেনশন চালু করা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পেনশনের অর্থ ছাড় করা গত ১ জুলাই থেকে বন্ধ রেখেছে অর্থ বিভাগ। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পেনশন বাবদ অর্থ ছাড় করা বন্ধ করেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের পেনশন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিল অর্থ বিভাগ।
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের পেনশন সুবিধা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কী নির্দেশনা দিয়েছেন, জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে অর্থ বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেনশন সুবিধা অব্যাহত থাকবে। তবে গত কয়েক মাস ধরে অর্থ ছাড় বন্ধ থাকায় যেসব প্রতিষ্ঠানের পেনশন আটকে গেছে, সেগুলো নিয়ে আরও পর্যালোচনা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির বিপরীতে সরকারের দেওয়া নগদ প্রণোদনা সুবিধা ও দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ১৯৯৯ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব আয় দ্বারা বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সরকারি কর্মচারীদের ন্যায় স্ব-অর্থায়নে 'পেনশন সুবিধা' চালুর বিধান রয়েছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় উল্লেখসহ আবেদন করে অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন নিতে হয়।
যেসব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান নিজস্ব আয়ে পেনশন দিতে পারবে না, তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য গ্র্যাচুইটি চালুর বিধান রয়েছে।
অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১২টি প্রতিষ্ঠান অর্থ বিভাগের সম্মতি ছাড়াই পেনশন সুবিধা চালু করেছে এবং সরকারি তহবিল থেকে পেনশন দিচ্ছে। বাজেটে প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে থোক বরাদ্দ হিসেবে যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেই অর্থ থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন দেওয়া হচ্ছে। আইবাস সফটওয়্যার ব্যবহার শুরুর পর বিষয়টি অর্থ বিভাগের নজরে এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ যে ১২টি প্রতিষ্ঠান অর্থ বিভাগের অনুমোদন ছাড়া সরকারি তহবিলে পেনশন চালু করেছে, তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, ব্যান্সডক, বাংলা একাডেমি, ওসমানী যাদুঘর, শিল্পকলা একাডেমি, জিয়া যাদুঘর, জাতীয় যাদুঘর, বাংলাদেশ ক্রীড়া পরিষদ ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
এই ১২ প্রতিষ্ঠানের পেনশন বাবদ গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৭৭৯.৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পেনশন বাবদ বরাদ্দ ছিল ৬৮৮.৯৫ কোটি টাকা।
ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পেনশন ও অবসর সুবিধা বাবদ বরাদ্দ ছিল ৫৭৬.৬৪ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৫৮৭.১৭ কোটি টাকা।
স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন চালুর বিষয়ে অনুমোদন দিয়ে থাকে অর্থ বিভাগের স্টেট ওউন ইন্টারপ্রাইজেস অনুবিভাগ। ওই বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, অর্থ বিভাগের অনুমোদন ছাড়া যেসব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান পেনশন সুবিধা চালু করেছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন সুবিধা অব্যাহত রাখা হতে পারে। তবে ওইসব প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন সুবিধার আওতাভূক্ত না করে গ্র্যাচুইটি সুবিধায় আনা হতে পারে। পুরো বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের পেনশন নিয়ে বড় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাদেরকে পেনশন সুবিধা দেওয়া হলে সরকারি চাকরিজীবী ও তাদের মধ্যে কোন তফাত থাকে না। যেসব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বহু বছর আগে থেকে সরকারি তহবিলে অবসরভোগীদের পেনশন সুবিধা দিয়ে আসছে, এখন হঠাৎ করে তাদের পেনশন বন্ধ করে দেওয়া খুবই কঠিন। আবার এসব প্রতিষ্ঠানের পেনশন সুবিধা অব্যাহত রাখা হলে অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোও একইভাবে পেনশন সুবিধা দাবি করতে পারে।
প্রতিষ্ঠানগুলো কবে থেকে, কীভাবে পেনশন ব্যবস্থা চালু করেছে, তাদের প্রকৃত আয়-ব্যয়ের তথ্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া ১৩টি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব আয়ের অর্থে পেনশন সুবিধা চালুর শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়েও সরকারি তহবিল থেকে টাকা নিয়ে পেনশন ও অবসর সুবিধায় ব্যয় করছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত নিজস্ব তহবিলে পেনশন ফান্ড গঠন করতে বলেছে অর্থ বিভাগ।
আর ১৪টি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে নিজস্ব ফান্ডে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন সুবিধা দিয়ে আসছে। সেগুলো যথারীতি চালু থাকবে বলে জানিয়েছে অর্থবিভাগ।