জানুয়ারিতে সর্বকালের সর্বোচ্চ ৫.৭২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি
আগের সব রেকর্ড ভেঙে, জানুয়ারিতে ৫.৭২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের চেয়ে আগের তিন মাসে রপ্তানি কমার পর হয়েছে এই অগ্রগতি।
এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে একক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ ৫.৩৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির রেকর্ড হয়েছিল।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্যমতে, জানুয়ারিতে মোট রপ্তানির ৮৮ দশমিক ৯ শতাংশ ছিল তৈরি পোশাক পণ্য।
এছাড়া, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটপণ্য, কৃষিপণ্য, ফুটওয়্যার ও তুলা থেকে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানিতেও হয় ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি। তবে হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্য, হিমায়িত ও জ্যান্ত মাছ রপ্তানিতে আগের বছরের এ সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনীতি স্থিতিশীল হতে শুরু করায় সার্বিক রপ্তানি নতুন এ উচ্চতায় পৌঁছেছে। এসব দেশের অধিকাংশই আর সুদহার বাড়াচ্ছে না, এবং তাদের মূল্যস্ফীতি আরও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে সরকার বেশিরভাগ পোশাক পণ্য রপ্তানিতে সরকার নগদ সহায়তা প্রত্যাহার করেছে, এবং এবং বাদবাকী পণ্যে তা হ্রাস করেছে। তাই অনুকূল এসব আভাস সত্ত্বেও– বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকরা।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে বাংলাদেশ থেকে ৩৩.২৬ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি আয় ছিল ৩০.২৪৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ সামগ্রিক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
জানুয়ারিতে পোশাক খাতের রপ্তানি আয় ১২ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে ৪.৯৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ২৮.৩৬ বিলিয়ন ডলারের প্রবৃদ্ধি হয়েছে পোশাক খাতের রপ্তানিতে। আগের অর্থবছর যা ছিল ২৭.৪১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এরমধ্যে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ১৬.১৭ বিলিয়ন ডলারের নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে। আর ২ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির সুবাদে ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১২.১৮ বিলিয়ন ডলারের।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান টিবিএসকে বলেন, ডিসেম্বরে যাওয়ার কথা ছিল এমন কিছু চালান জানুয়ারি মাসে রপ্তানি হয়। পশ্চিমা দেশগুলোয় বড়দিনের ছুটির কারণে এই দেরী হয়।
এহসান জানান, বর্তমানে তাঁরা গ্রীষ্মকালীন পোশাক রপ্তানি করছেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)-ভুক্ত দেশগুলোতে ২০২৪ সালে মূল্যস্ফীতি কমে ৩ দশমিক ২০ শতাংশ এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২০ শতাংশ হওয়ার আশা করা হচ্ছে। এসব বিষয় আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক অবদান রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডাচ ফ্যাশন ব্র্যান্ড জি স্টার র' এর আঞ্চলিক পরিচালন ব্যবস্থাপক শফিউর রহমান বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোয় গ্রীষ্মকালীন পোশাক বিক্রি এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে, কারণ মার্চ থেকে তাপমাত্রা উঠানামা করার পূর্বাভাস রয়েছে।
তিনি জানান, গতবছর পশ্চিমা দেশগুলোর যেসব খুচরা বিক্রেতা ব্র্যান্ড নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছিল, এবছর তারা ব্যবসা ধরার চেষ্টা করবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও অর্থের সঞ্চালন থাকবে, যা তাদের ব্যবসা বাড়ানোর সহায়ক হবে।
চলতি বছরের শেষ ছয় মাসে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা আরও কার্যাদেশ পাবেন বলে আশাপ্রকাশ করেন শফিউর। এসময় ২০২৫ সালের বসন্ত ও গ্রীষ্মকালের জন্য পোশাক রপ্তানির অর্ডার পাবেন তাঁরা।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-র সভাপতি ফারুক হাসান গত সপ্তাহে টিবিএসকে বলেছিলেন, 'গতিমন্থরতা কাটিয়ে অর্থনীতি স্থিতিশীল হতে শুরু করায়– গত নভেম্বর থেকেই বেশিরভাগ পশ্চিমা বিক্রেতাদের সেলস ভালো হচ্ছে। ব্ল্যাক ফ্রাইডে, বড়দিন, বক্সিং ডে ও সাইবার মানডের মতো কিছু উৎসব- আয়োজনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা বিশ্বজুড়ে পোশাকের বিপণীগুলোর বিক্রিবাট্টা ভালো হয়েছে।"
উৎসবকালীন এই বিক্রিতে তারা আগের মজুত খালি করে ফেলেছে বলেও জানান তিনি।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, "জানুয়ারিতে তাঁদের বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি হওয়ায়, আমাদের রপ্তানিও ভালো হয়েছে।"
ইউরোপে মূল্যস্ফীতি কমার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এতে ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশ থেকে পোশাক সংগ্রহ বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত এক বছরে তারা সফলভাবেই নিজেদের মজুত খালি করতে পেরেছে। অর্ডার বাড়াতে ইতোমধ্যেই কিছু বায়ার আমাদের রপ্তানিকারকদের সাথে আলোচনা করছেন।"
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে বৈশ্বিক ক্রেতাদের কার্যাদেশ বাড়ার আশা করছেন রপ্তানিকারকরা, কিন্তু সম্প্রতি পোশাক রপ্তানিতে নগদ সহায়তা প্রত্যাহারের ঘটনা– এ ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন ফারুক হাসান।
বিজিএমইএ'র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম মান্নান কচি বলেন, গত কয়েক মাস ধরেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানি আশানুরূপ হচ্ছে না, তবে নতুন বাজারগুলোয় ভালো হচ্ছে। তবে সরকার হঠাৎ করেই তিনটি নতুন বাজারে রপ্তানিতে নগদ সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ায়– এসব বাজারে প্রবৃদ্ধি অর্জন ব্যাহত হবে।
তিনি জানান, নগদ সহায়তার বিষয়ে রোববার তাঁরা অর্থমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছেন। "অর্থমন্ত্রীকে আমরা পোশাক রপ্তানিতে নগদ সহায়তা পুনর্বহাল করার অনুরোধ করেছি। কারণ, ৭০ শতাংশ আইটেম-ই এই সুবিধা থেকে বাদ পড়ায়– কারখানা মালিকদের জন্য টিকে থাকাই কঠিন হবে।"