এখনও চড়া পেঁয়াজের দাম, বেড়েছে রমজানের অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও
এবারের রোজায় একটু ব্যতিক্রম পেঁয়াজের দাম। প্রতিবছর ঠিক রোজার দিন কয়েক আগেই পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠলেও রাজধানীর বাজারগুলোতে এবারে সেটা দেখা যায়নি। যদিও মাসখানেক আগে পেঁয়াজের দাম ৭০-৮০ টাকা থেকে বেড়ে কেজি প্রতি ১১০-১২০ টাকায় উঠলেও কিছুটা কমে এখন ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের চেয়েও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, পেঁয়াজের বর্তমান দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮৩ শতাংশ বেশি। গত বছর এই সময়ে ছিল পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। সে সময় পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫-৩৫ টাকা কেজি। এখনও পেঁয়াজের ভরা মৌসুম, কিন্তু দামটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কারণ ভারত থেকে নিয়মিত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। তবে রোজাকেন্দ্রীক বাজার না বাড়লেও পণ্যটির দাম অত্যধিক চড়া।
এবারে দেখা গেছে, পেঁয়াজের দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকলেও রোজাকেন্দ্রীক অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন বেগুন, আলু, শসা, লেবু, ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস ও চিনির দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। তাই বাজার পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
ইফতারের অন্যতম পণ্য বেগুন এখন দাম বৃদ্ধির তালিকায় থাকা পণ্যগুলোর একটি। মাসখানেক আগেও যে বেগুন ছিল ৫০-৬০ টাকা, এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা।
একই সময়ে শসার দাম ৪০-৬০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০০-১২০ টাকা, লেবুর হালি ২০-২৩ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০-৬০ টাকা। আলুর দামও বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা।
এর বাইরে ব্রয়লার মুরগির দামও ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গরুর মাংসের বাজারও গত জানুয়ারি পর থেকেই অস্থির। মাংস ব্যবসায়ী সমিতির নেতারাও বলছেন, তারা এটা আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না।
মাসখানেক আগে গরুর মাংসের দাম ছিল ৭২০-৭৫০ টাকা কেজি। রমজানে এটা বেড়ে হয়েছে ৭৫০-৭৮০ টাকা। কোথাও কোথাও ৮০০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে।
সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তজা বলেন, 'এখানে যে যার মত করে ব্যবসা করছে, কেউ কারও কথা শুনছেন না।'
তবে এই সময়ে কিছুটা দাম কমেছে ডিমের। প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৪০ টাকা থেকে কমে ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় দেশের বাজারেও সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১০ টাকা কমে ১৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উৎপাদক থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছাতে বেশ কয়েকটি হাতবদল হওয়ার কারণে সবজির দাম বাড়ছে বলে মনে করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, 'কারওয়ানবাজারে একবার হাতবদলের মাধ্যমেই ২০ টাকা দাম বেড়ে যাচ্ছে। পুরো সাপ্লাই চেইনে দেখা যায় ৫-৬ বার হাতবদলের মাধ্যমে ভোক্তার কাছে পণ্য পৌঁছে। রোজার আগে এটা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে।'
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানে মূলত ব্যবসায়ীদের মানসিকতা ব্যাপকভাবে দায়ী। রোজায় ইফতারির যে খাবারগুলোতে দেশের মানুষ অভ্যস্ত, সেই খাবারগুলো তৈরিতে বেগুন ও আলুর প্রচুর ব্যবহার হয়। সালাদ হিসেবে শসা ও ইফতারির কমন আইটেম শরবত বানাতে ব্যবহার হয় লেবু। এই বাড়তি চাহিদাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই রোজার শুরুতে এসব পণ্যের দাম লাগামহীন হয়ে পড়ে।