এক বছরে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৭.৩২% অ্যাকাউন্ট বন্ধ
মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) আমানতকারীদের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ৯০,৩৩৮টি বা ১৭.৩২ শতাংশ কমেছে।
৫,২১,৫৫৯ থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অ্যাকাউন্ট সংখ্যা নেমে এসেছে ৪,৩১,২২১টিতে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা হারিয়েছেন গ্রাহক। ফলে এখান থেকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছেন অনেকে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (আইআইডিএফসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া টিবিএসকে বলেন, "গত বছর অনেক গ্রাহক আমানত উঠিয়ে নিয়েছে। কারণ এখন বিল-বন্ডেই বেশি মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে। তাই সবাই নিরাপদ বিনিয়োগ বিল-বন্ডের দিকে ঝুঁকছে।"
"এর ফলে আর্থিক খাতসহ ব্যাংকেও লিকুইডিটি সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এরমধ্যেও আমরা ডিপোজিট হান্টিংয়ের চেষ্টা করছি। আশা করি, আস্তে আস্তে ভালো ফলাফল পাবো," বলেন তিনি।
জানতে চাইলে, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)-এর সাবেক চেয়ারম্যান ও এফএএস ফাইন্যান্সের স্বতন্ত্র পরিচালক ও চেয়ারম্যান নূরুল আমিন টিবিএসকে বলেন, "যেহেতু আমাদের দেশে অনিয়ম দুর্নীতি আছে, তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনিয়মের কথা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায়না। কিন্তু ব্যাংকের তুলনায় এখানে অনিয়মের পরিধিটা কম। অনিয়ম একেবারে যে নেই, সেটা বলা যাবে না। যেটা বোর্ডের তরফ থেকেও হতে পারে, আবার ম্যানেজমেন্টের তরফ থেকেও হতে পারে।"
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কয়েকটি দুর্ঘটনার কারণে এখাত থেকে গ্রাহকের আস্থা কমে এসেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
"অন্যান্য খাতের মতোই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রধান করাণ হলো– ব্যাংক যে ব্যবসা করে, তার বাইরে বিশেষ কোনো কাজ করে না আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্যাংকে যারা ঋণ পায়না তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে আসে। এখান থেকে ঋণ নেয়। একটা সময় খেলাপি হয়ে পড়ে। কিন্তু এদের মার্চেন্ট ব্যাংক, সাবসিডিয়ারি ও পুঁজিবাজারের সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত ছিল। এগুলো না করার কারণে খেলাপি খেলাপি সংস্কৃতির সাথে জড়িত হয়ে গেছে। তাছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মনিটরিং সিস্টেম দুর্বল, দক্ষ কর্মী সংখ্যার অভাবসহ বিভিন্ন করাণে তারা বিতরণ করা ঋণ আদায় করতে পারেনা," বলেন নুরুল আমিন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩ সাল শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ৪৪,৮৩০ কোটি টাকা। তবে এক বছর আগে এই অঙ্ক ছিল ৪৩,৭৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এক বছরে ২.৪৬ শতাংশ আমানত বেড়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের।
এদিকে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৭০,৩২১.৬৭ কোটি থেকে ৭৩,৭৫৯.১৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। হিসাব অনুযায়ী, ৪.৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ঋণের পরিমাণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর শেষে এখাতের খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ২১,৯৮৯ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৩০ শতাংশ। তবে সেপ্টেম্বরে খেলাপি ছিল ২১,৫৬৬ কোটি টাকা।
ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাতে আস্থার সংকটে অনেক প্রতিষ্ঠানই যোগ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুঁজে পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন এনবিএফআইয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা।
১২টি এনবিএফআই বর্তমানে নিয়মিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছাড়াই চলছে। এগুলো হলো– বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, এফএএস ফাইন্যান্স, ইউএই-বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি (বাংলাদেশ), আভিভা ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স এবং অগ্রণী এসএমই ফাইন্যান্স।