ঋণ পুনঃতফসিল করার কারণে মূল্যস্ফীতি কমছে না: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন বলেন, 'আমাদের দেশের ঋণ খেলাপি, কর খেলাপি এবং অর্থপাচার একই সূত্রে গাথা। ঋণ পুনঃতফসিল করার কারণে ব্যাংকে অর্থের টান পড়েছে। এজন্য বন্ডের মাধ্যমে টাকা ছাপিয়ে অর্থ সরবরাহ করতে হচ্ছে। যার ফলে মূল্যস্ফীতি কমছে না।'
বৃহস্পতিবার (২ মে) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামে (ইআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সাবেক এই গভর্নর বলেন, শ্রেণিকৃত ঋণ আদায় ছাড়া টাকা ছাপানো বন্ধ করা কঠিন।
এছাড়া তিনি এক কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতের বীমা করার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আমি মনে করি যে ৩-৬ মাসের স্বল্পমেয়াদি আমানতের সব বাধা দূর হওয়া উচিত। বিশ্বজুড়ে ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি ঋণ দিয়ে থাকে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে আমাদের দেশেও একই অবস্থা ছিল। পরে চাপের মুখে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া হয়। আমরা এখন স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিচ্ছি।
দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য ব্যাংকের ওপর নির্ভর না করে শেয়ারবাজারে যাওয়ার পরামর্শ দেন সাবেক এই গভর্নর।
গ্রামাঞ্চলে ঋণের প্রবাহ কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমানতের একটি বড় অংশ গ্রামাঞ্চল থেকে আদায় করা হয়, তারপরও ঢাকা বা চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোতে ৮০ শতাংশ ঋণ দেওয়া হয়।'
ফরাসউদ্দিন বলেন, 'একাধিক বিনিময় হার খুবই আপত্তিকর একটি বিষয়। এতে শুধু মধ্যস্থতাকারীরাই লাভবান হয়।'
তিনি বলেন, 'যারা বিনিময় হার নিয়ে আলোচনা করছেন, তাদের আগেই বলেছি, বিনিময় হারকে অতিমূল্যায়িত রাখা ঠিক নয়। প্রতিবেশী ভারত ধারাবাহিকভাবে তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেছে, আমরা সেভাবে এটা করিনি।'
সাবেক এই গভর্নর বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশে মুদ্রার অতিমূল্যায়ন ক্ষতিকর।
তিনি বলেন, অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে পেরেছে। আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি এখনও ১০ শতাংশের কাছাকাছি।আমাদের মনিটরিংয়ে ফোকাস করতে হবে। আমদানিকারকের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে টানা দশ মাস ধরে মুদ্রাস্ফীতি খুব বেশি ছিল।
তিনি আরও বলেন, কোনো কৃষক এক হাজার টাকা ঋণ খেলাপি হলে তাকে জেলে ঢোকানো হয়। কিন্তু যারা ১০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ নিয়ে বসে আছে, তাদের কিছুই হয় না। ঋণের সুদ মওকুফ করা ভালো কোনো কাজ না।
সাবেক এই গভর্নর বলেন, সুদ মওকুফ করা ৪৫ হাজার কোটি টাকা বাদ দিয়ে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ এখন ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। তা না হলে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ আরও বড় হতো।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফে সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মৃধা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইআরএফে সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। এসময় গণমাধ্যমকর্মীরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন ।