ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পর্ষদ ১ হাজার কোটি টাকা পুঁজি সরবরাহ করবে: চেয়ারম্যান
ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের চলমান সংকট নিরসনে এক হাজার কোটি টাকা মূলধন সরবরাহ করবে বলে জানিয়েছেন নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান।
সোমবার (৬ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে খলিলুর বলেন, তিনি আমানত সংগ্রহ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ব্যাংকের সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় তিন হাজার কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করবেন। আর প্রাথমিক পর্যায়ে পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডাররা এক হাজার টাকা মূলধন সরবরাহ করবেন।
এর আগে রোববার (৫ মে) সাড়ে চার মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংকের দীর্ঘদিনের উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে একটি নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছে। খলিলুর কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যানও।
খলিলুর রহমান আরও বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংক দখল হয়নি। সরকার ব্যাংকটিতে নতুন পরিচালক নিয়োগ করেছে।
ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূত হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা একীভূত হতে যাব না। একীভূত না হয়েই নিজেদের প্রচেষ্টায় ন্যাশনাল ব্যাংককে আমরা ঘুরে দাঁড় করাব।'
'যা হওয়ার, হয়ে গেছে। আর লুটপাট হবে না। যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে তাদেরকে টাকা ফেরত দিতে হবে। এক বছরের মধ্যে আমরা ব্যাংকটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারব,' বলেন তিনি।
প্রাথমিকভাবে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংককে একীভূত করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এরপর ন্যাশনাল ব্যাংক বোর্ড ২৮ এপ্রিল একীভূত না হতে চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
২০২৩ সালে ন্যাশনাল ব্যাংক এক হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা লোকসানের কথা জানায়। তার আগের বছর এর লোকসান ছিল তিন হাজার ২৮৫ কোটি টাকা।
নতুন পরিচালক কারা?
কেন্দ্রীয় ব্যাংকসূত্রে জানা গেছে, নতুন পর্ষদের বেশিরভাগ প্রতিনিধি পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক চট্টগ্রামভিত্তিক একটি গ্রুপের।
নতুন পর্ষদের দশ সদস্যের মধ্যে সাতজনকে পুনর্নিযুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তাদের মধ্যে প্রতিনিধি পরিচালক হয়েছেন প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াজুল করিম। তিনি কেডিএস গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের একটি পদেও আছেন।
আরেক প্রতিনিধি পরিচালক এরশাদ মাহমুদ। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের ভাই। তার পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। চট্টগ্রামের একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক হয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট এহসানুল করিম চট্টগ্রামে অবস্থিত একটি গ্রুপের পক্ষে একটি কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করে ব্যাংকটির প্রতিনিধি পরিচালক হয়েছেন। চট্টগ্রামে তিনি আরেকটি গ্রুপের আইনজীবী হিসেবেও কাজ করেন।
আরেক প্রতিনিধি পরিচালক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একেএম তফাজ্জল হক। তিনি চট্টগ্রামভিত্তিক একটি গ্রুপের প্রতিনিধি হিসেবে ন্যাশনাল ব্যাংকে যোগ দিয়েছেন।
এছাড়া একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী তিন স্বতন্ত্র পরিচালকের একজন হয়েছেন।
আরেকজন হলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ড. রত্না দত্ত। তার স্বামী সুব্রত কুমার ভৌমিক চট্টগ্রামের একটি বড় গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক।
এছাড়া আরেক স্বতন্ত্র পরিচালক হয়েছেন এবিএম জহুরুল হুদা। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামে অবস্থিত একটি বৃহৎ ব্যাংকের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান।
বোর্ডের অন্য সদস্যদের মধ্যে আগের বোর্ডের দুই সদস্য রয়েছেন।