৩৯০ কোটি টাকার ঋণ বকেয়া: এপেক্স উইভিংয়ের সম্পদ নিলামে তুলছে সোনালী ব্যাংক
সোনালী ব্যাংকে এপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলসের বকেয়া ঋণ ৩৯০ কোটি টাকা। অর্থ ঋণ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই বকেয়া আদায়ে কোম্পানিটির সম্পদ নিলামে তুলছে সোনালী ব্যাংক।
সম্পদ নিলামে তুলতে গত সপ্তাহে বিভিন্ন দৈনিক সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সোনালী ব্যাংক। আগ্রহী ক্রেতাদের ১০ জুনের মধ্যে সম্পদ কেনার দরপ্রস্তাব জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গাজীপুরে অবস্থিত কারখানা ভবন ও যন্ত্রপাতিসহ কোম্পানিটির ১১.৪৩ একর জমি বিক্রি করবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি।
অ্যাপেক্স উইভিংয়ের কোম্পানি সচিব সিরাজুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, তারা এখনও নিলামের বিজ্ঞপ্তি হাতে পাননি। 'ওটা হাতে পাওয়ার পর ম্যানেজমেট সিদ্ধান্ত নেবে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'
সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এপেক্স উইভিং ১৯৯৫ সালে ব্যাংকটি থেকে ঋণ নিয়ে টেক্সটাইল ব্যবসায় যুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠানটি এলসি নিষ্পত্তির অর্থ পরিশোধ না করায় ব্যাংকটি সেগুলোকে 'ফোর্সড লোন' করে ফেললে কয়েক ধাপে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।
২০১৯ সালে সোনালী ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিল করে এপেক্স উইভিংকে ২২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে বলে। তবে কোম্পানিটি পরবর্তীতে কোনো কিস্তি পরিশোধ করতে পারেনি। ফলে সুদসহ ঋণের পরিমাণ বেড়ে ৩৯০ কোটি টাকা হয়।
এপেক্স উইভিংয়ের আর্থিক বিবৃতি অনুসারে, কোম্পানিটির দায়ের পরিমাণ তাদের সম্পদের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। ফলে গত বছরের জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ঋণাত্মক ১৫.৯২ টাকা।
প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৫ সালে ডিএসইর প্রধান বোর্ডে তালিকাভুক্ত হয় এবং ২০১০ সালে স্টক এক্সচেঞ্জের মূল মার্কেট থেকে বাদ দেওয়া হয়। এখন কোম্পানিটির শেয়ার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেন হচ্ছে।
জানা যায়, কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি এখন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাবেক সংসদ সদস্য হারুন-অর-রশিদ ও তার স্ত্রী আনার কলি রশিদ বর্তমানে যথাক্রমে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বর্তমানে এপেক্স উইভিংয়ের পরিশোধিত মূলধন ৩৮.৮৫ কোটি টাকা এবং বাজার মূলধন প্রায় ৫৫ কোটি টাকা।
২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটিতে স্পন্সর ও পরিচালকদের যৌথভাবে ৩০.১২ শতাংশ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৪.৯৪ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও ০.০১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৫৪.৯৩ শতাংশ শেয়ার ছিল।
অডিটরের মতামত
২০২২-২৩ অর্থবছরে আর্থিক প্রতিবেদনের উপর কোম্পানিটির অডিটর এপেক্স উইভিংয়ের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছে, প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে এটি ভবিষ্যতে টিকে থাকতে পারবে না।
অডিটর বলেছে, কোম্পানিটি ২০০৯ সাল থেকে লোকসানে রয়েছে। ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির পুঞ্জীভূত লোকসান ১৫২ কোটি টাকা।
এছাড়াও ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ব্যাংকিং সুবিধা না পাওয়া এবং ঋণ পরিশোধে খেলাপি হওয়ার কারণে কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এদিকে গত অর্থবছরে কোনো আয় হয়নি বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।
তবে অডিটর জানিয়েছে, কোম্পানিটি বিদ্যুৎ ও পানির বিল দিয়েছে।
অডিটর কোম্পানি আরও জানিয়েছে, ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে বিদ্যমান কারখানার প্রাঙ্গণ একটি সংশ্লিষ্ট পক্ষ ব্যবহার করছে; কিন্তু এই ব্যবস্থার জন্য কোনো চুক্তি করা হয়নি।
অডিটর আরও বলেছে, বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহার করার পরও কেন কোনো বিক্রয়, ক্রয় বা উৎপাদন কার্যক্রম ছিল না, সে ব্যাপারেও আর কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
এছাড়া কারখানা বন্ধ রাখা বা সারা বছরের বিক্রির রিপোর্ট না থাকার বিষয়ে কোনো মূল্য-সংবেদনশীল তথ্য দেওয়া হয়নি।
অ্যাপেক্স উইভিং জানিয়েছে, তাদের সম্পত্তি, কারখানা ও ৭৭.৬৩ কোটি টাকার সরঞ্জাম রয়েছে, তবে অডিটরকে কোনো নথি দিতে পারেনি।
কোম্পানিটিতে অবিতরণকৃত লভ্যাংশের পরিমাণ ০.৭৩ কোটি টাকা। অডিটর জানিয়েছে, কোম্পানিটি এর জন্য কোনো পৃথক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রাখেনি।
তবে অ্যাপেক্স উইভিং দাবি করেছে, তারা শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ হিসেবে ১.৬৫ কোটি টাকা দিয়েছে। তবে তারা এই অর্থপ্রদানের কোনো নথি দিতে পারেনি।