২৫ সংস্থার পেনশনে অর্থায়ন করবে সরকার
অনুমোদন না নিয়ে সরকারি তহবিল থেকে অবসরকালীন সুবিধা চালু করা ২৫টি স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসিক পেনশনে বরাদ্দ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে ১,২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
এসব সংস্থায় আগামী ১ জুলাইয়ে আগে যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন- তাদেরকে সরকারি তহবিল থেকে পেনশন দেওয়া হবে বলে জানান বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থবিভাগের একজন কর্মকর্তা।
তবে ১ জুলাই এর পরে নিয়োগপ্রাপ্তরা সরকারি তহবিল থেকে পেনশন পাবেন না। তাদের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার 'প্রত্যয়' স্কিমে অন্তর্ভূক্ত হওয়া বাধ্যতামুলক করা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে নেওয়া হয় এ সিদ্ধান্ত। এজন্য চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের জনবলের পেনশনের অর্থছাড় আটকে রাখাও হয়। তবে নতুন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দ থেকে এ মাসের শুরুতে অর্থছাড় করা হয়েছে।
১৯৯৯ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী, নিজস্ব আয় দ্বারা বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সরকারি কর্মচারীদের ন্যায় স্ব-অর্থায়নে 'পেনশন সুবিধা' চালুর বিধান রয়েছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়সহ বিভিন্ন তথ্যসহ আবেদন করে অর্থবিভাগের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।
এই নির্দেশনা অনুসারে, অর্থবিভাগের সম্মতি নিয়ে নিজস্ব আয়ে পেনশন ব্যবস্থা চালু করে ১৭টি প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু ১২টি প্রতিষ্ঠান অর্থবিভাগের কোনরকম অনুমতি ছাড়াই পেনশন চালু করে, এবং আরও ১৩টি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব আয়ে পেনশন চালুর কথা বলে– অর্থবিভাগের অনুমোদন নিয়ে সরকারি তহবিল খরচ করতে থাকে।
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, জাতীয় জাদুঘর ও বাংলা একাডেমিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।
২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এসব প্রতিষ্ঠানের পেনশনে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশনে, যার পরিমাণ ৬৮৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
নিজস্ব অর্থে পেনশন স্কিম পরিচালনার কথা বলে সরকারি তহবিলে পেনশন স্কিম চালু রেখেছে ১৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে: পানি উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ অন্যান্য সংস্থা।
২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এই ১৩ প্রতিষ্ঠানের পেনশনে সরকার ৩২১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দিইয়েছে।
বরাদ্দের সিদ্ধান্ত কেন
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য আগে বাজেটে কোন অর্থ বরাদ্দ থাকতো না। এজন্য তারা বাজেট থেকে থোক বরাদ্দ নিয়ে সেখান থেকে পেনশনে অর্থ ব্যয় করতো।
তবে অর্থবছরের শেষ দিকে সরকারের ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বা আইবাস++ এ অনুমোদনহীন পদক্ষেপটি ধরা পড়ে। এরপর শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পেনশনের অর্থ ছাড় করে অর্থমন্ত্রণালয় এবং বাকি ২৪ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশনের অর্থছাড় আটকে রাখে।
এতে দীর্ঘদিন ধরে অবসরভাতার সুবিধা ভোগ করে আসা অনেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাসিক পেনশন পাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। অনেক প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন শুরু হয় বলেও জানান কর্মকর্তারা।
এ অবস্থায় করণীয় নির্ধারণ করতে গত জানুয়ারিতে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে পেনশন চালু থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে যাদের নিয়োগ হবে, তাদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত দেন তিনি।
অবশ্য সরকারের এ সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এর প্রতিক্রিয়ায় তারা ইতোমধ্যে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আরও ১৪টি প্রতিষ্ঠান পেনশন চালুর জন্য অর্থবিভাগের সম্মতি চেয়ে আবেদন করেছিল। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আয় দিয়ে জনবলের পেনশন সুবিধা চালুর সক্ষমতা না থাকায়– সেসব আবেদন খারিজ করে দিয়েছে অর্থবিভাগ। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্তর্বর্তীকালীন সুবিধা হিসেবে গ্রাচুইটি পাবেন।
এই ১৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন, পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা, বাংলাদেশ বোর্ড অব ইউনানী অ্যান্ড আয়ুর্বেদিক সিস্টেমস অব মেডিসিন, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রভৃতি।