বিদেশি অর্থায়নের আশা কম, তাই কমছে বাজেট ঘাটতির প্রাক্কলন
উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিনিময় দরে অস্থিতিশীলতা এবং আমদানি-রপ্তানি প্রবৃদ্ধি শ্লথ হওয়ার সময়ে – সংকোচনমুলক বাজেট প্রণয়ন করতে গিয়ে, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ – চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ব্যাপকভাবে কমিয়ে প্রাক্কলন করেছে অর্থমন্ত্রণালয়।
প্রত্যাশা অনুযায়ী বিদেশি ঋণ না পাওয়ায় – বাজেট ঘাটতির পরিমাণ টাকার অংক ও জিডিপির অনুপাত – উভয় দিক থেকেই কমবে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এতে উচ্চ সুদের ব্যাংকঋণের ওপর সরকারের নির্ভরতা নতুন অর্থবছরও বাড়বে। অর্থাৎ, ব্যাংকখাত থেকে চলতি বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বাড়তি ঋণ নেবে সরকার।
অর্থনীতির এই চাপের সময়ে সরকার ও দেশের অর্থনীতিবিদরা উভয়েই স্বল্পসুদের বিদেশি ঋণের ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে বারবার। কিন্তু, সেই প্রত্যাশার বিপরীতে চলতি অর্থবছরের তুলনায়– নতুন অর্থবছরের বাজেটে নিট বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ১১ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা কমিয়ে প্রাক্কলন করেছে অর্থমন্ত্রণালয়।
চলতি অর্থবছর প্রত্যাশার তুলনায় কম বিদেশি ঋণ পাওয়ার কারণে– এখাত থেকে ঘাটতি অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধিত বাজেটেও ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা কমিয়ে ৭৬ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছর ব্যাংকখাত থেকে চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকা বাড়তি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে উচ্চাক্ষাঙ্ক্ষী রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা অর্জিত না হলে– ব্যাংকঋণের আকার আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে, ব্যাংকখাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন করেছিল অর্থমন্ত্রণালয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণ করতে না পারায়– সংশোধিত বাজেটে ব্যাংকখাত থেকে ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন করেছে অর্থমন্ত্রণালয়।
নতুন অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হবে না
সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) উচ্চ রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়ে বাজেটের আকার যেহেতু তুলনামূলক কমানো হয়েছে, সেজন্য ঘাটতি কম বলে মনে হচ্ছে। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এনবিআর এসব লক্ষ্যমাত্রা প্রকৃতপক্ষে অর্জন করতে পারবে না বলেও মনে করেন তিনি।
মাহবুব বলেন, "আগামী অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য কোনো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে না। মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকও একটি সংকুলানমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করবে। এতে বেসরকারি খাতে অর্থায়ন বা বিনিয়োগ কমবে। ফলে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কোনো সম্ভাবনাও থাকবে না।"
"এমন পরিস্থিতিতে, সরকারের পরিচালন ও অন্যান্য উন্নয়ন ব্যয় নির্বাহ করতে অর্থমন্ত্রণালয়ের সামনে বাজেটের ঘাটতি বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। তখন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ব্যাংকখাত থেকে বাড়তি ঋণ নিতে হবে সরকারকে" - বলছিলেন তিনি।
সরকারের ব্যাংক ঋণ ব্যাপকভাবে বাড়তে পারে
মাহবুব আহমেদ আরো বলেন, ঘাটতি মেটাতে অর্থমন্ত্রণালয়ের সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে ১৫ হাজার টাকা সংগ্রহের প্রত্যাশা পূরণ নাও হতে পারে। "বর্তমানে ট্রেজারি বিল এবং বন্ডের তুলনায় সেভিং টুলসের সুদহার অনেক কম। তাই আগামী অর্থবছরের বাজেট সংশোধনের সময় চলতি অর্থবছরের মতো ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বাড়তে পারে।"
ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চলতি অর্থবছর বিদ্যুৎ ও সারের কিছু বকেয়া ভর্তুকি পরিশোধ করলেও — গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারে আরও বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি বকেয়া রয়েছে। এমনকী অর্থের রপ্তানি প্রণোদনার অর্থও বকেয়া রাখতে হচ্ছে সরকারকে।
উচ্চ সুদব্যয়ের কারণে, চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার বদলে- উল্টো পুরনো ঋণের ৭ হাজার ২১০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। কিন্তু ঘাটতি অর্থায়ন মেটাতে আগামী অর্থবছর এখাত থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সরকারের উচ্চ সুদব্যয় ও বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কার কারণে অর্থনীতিবিদরা ব্যাংকখাত থেকে ঋণ কম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে রাজস্ব আহরণের লক্ষমাত্রা পূরণ না হওয়ায়, এখাতের ওপর নির্ভরতা কমাতে পারছে না সরকার। বর্তমানে ১২ শতাংশ সুদে ট্রেজারি বন্ডে ঋণ করছে সরকার। ফলে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয়ও বাড়ছে।
বিদেশি ঋণের সুদব্যয়ও বাড়ছে
অন্যদিকে, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে নেওয়া ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় বিদেশি ঋণের সুদ বাবদও সরকারের ব্যয় বাড়ছে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৯৩ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছর সরকার ব্যাংকখাত থেকে ৭২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ; আর ৬৪ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদে ৯৫ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা, এবং স্বল্পমেয়াদে ৬০ হাজার ১৯২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেয় অর্থমন্ত্রণালয়।
কর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও কঠিন
রিজার্ভ সংকট, ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধি ও শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধির গতিমন্থরতার মধ্যে আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৪.৬ শতাংশে রাখার পরিকল্পনা করার সময়ে — রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর-ব্যবস্থা থেকে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অতিরিক্ত ৭০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের প্রত্যাশা করছে অর্থমন্ত্রণালয়, যা অর্জন করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
নতুন অর্থবছরে সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ খুব বেশি না বাড়লেও– জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লালহ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি। এ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, রাজস্ব আহরণ সম্ভব নাহলে– আগামী অর্থবছরও ব্যাংকখাত থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা; যার
বিপরীতে জুলাই-এপ্রিল সময়ে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে সংস্থাটি। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মে ও জুন মাসে এনবিআরকে আরো ১ লাখ ২০ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা আদায় করতে হবে।
বেশকিছু জাতীয় মহাসড়কে টোল বসানো ছাড়াও– সরকারের বিভিন্ন সেবা ফি'র বাড়ানোর পরিকল্পনা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ও সংশোধিত বাজেটের তুলনায় – আগামী অর্থবছরে এনবিআর বহির্ভূত কর এবং কর-বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে কর-বহির্ভূত খাত থেকে সরকার ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করার পর– সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আর আগামী অর্থবছর কর-বহির্ভূত খাত থেকে ৪৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের প্রাক্কলন করা হয়েছে।
একইভাবে রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর থেকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের প্রাক্কলন করলেও – সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী অর্থবছর এখাত থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আরও কমিয়ে– ১৫ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে।
এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ছোট বাজেট
আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা জিডিপির ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। জিডিপির অনুপাতে, এটি গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ছোট বাজেট।
গবেষণা সংস্থা ও অর্থনীতিবিদরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করলেও– চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছর এই তিনখাতে বরাদ্দ বাড়ছে মাত্র ১২ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে সংকোচনমূলক বলা হলেও – সরকারের পরিচালন ব্যয় চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে।
মূলত, বকেয়া ভর্তুকির চাপ বেড়ে যাওয়ায় নতুন অর্থবছর এখাতে ১ লাখ ২০ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে। সরকারের সুদ ব্যয় ও সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বরাদ্দও বাড়ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে সরকারের পরিচালন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে মূলধন ব্যয়, অর্থাৎ ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ ও পূর্তকাজ, শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগের জন্য ৩৭ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। সে তুলনায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ১৯ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।
ভর্তুকি কমানো হবে
নতুন অর্থবছরে বকেয়া ভর্তুকির চাপ থেকে সরকার ধীরে ধীরে বের হয়ে আসার পরিকল্পনা করছে। এজন্য বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে – আগামী তিন বছরের মধ্যে ভর্তুকি পুরোপুরি প্রত্যাহার করার পরিকল্পনা রয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়ের। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও ভর্তুকি প্রত্যাহারে চাপ দিয়েছে। এ ছাড়া, এলডিসি গ্রাজুয়েশন সামনে রেখে রপ্তানি প্রণোদনাও ২০২৬ সালের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে।
এডিপি বাড়ছে, অর্থায়ন হয়ে উঠছে আরো চ্যালেঞ্জিং
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ বাড়ছে এবারের মূল বাজেটের তুলনায় মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা। সরকারের পরিচালন ব্যয় মেটানোর পর এডিপিতে প্রয়োজনীয় অর্থের সঞ্চালন করা আগামী অর্থবছরের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে বাজেট ডকুমেন্টেসে উল্লেখ করেছে অর্থমন্ত্রণালয়।
এডিপি'র বাইরে নতুন অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়নখাতে আরও ১৬ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এরমধ্যে এডিপি বহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে ৭ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে ২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শিল্পের জন্য কর-অবকাশ সুবিধা কমানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্যাংকঋণের সুদহার বাজার-ভিত্তিক করা হয়েছে এবং ক্রলিং পেগ সিস্টেম চালুর কারণে ডলারের দাম ইতোমধ্যে ৭ টাকা বেড়েছে। গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না থাকায় – শিল্প মালিকদের মধ্যে হতাশা রয়েছে।
কৃচ্ছ্রসাধনের কারণে সরকারি বিনিয়োগ কমে গেছে
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা নতুন অর্থবছরও থাকবে বলে অনুমান করেছে অর্থবিভাগ। তা সত্ত্বেও আগামী অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারিখাতে বিনিয়োগের প্রাক্কলন করা হয়েছে জিডিপির ২৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং সরকারি বিনিয়োগের প্রাক্কলন করা হয়েছে জিডিপির ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ।
চলতি অর্থবছর বেসরকারিখাতে বিনিয়োগের পরিমাণ জিডিপির ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করছে অর্থমন্ত্রণালয়। গত কয়েক বছর ধরে কৃচ্ছ্রসাধনের কারণে সরকারি বিনিয়োগও কমে গেছে, যার প্রভাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে গেছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে তখনকার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হবে। লজিস্টিকস খাতের উন্নয়ন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার সংস্কারের ফলে বিনিয়োগ ও ব্যবসার সময়, ব্যয় ও জটিলতা হ্রাস পাবে। ফলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে।
সরকারি-বেসরকারিখাতে বিনিয়োগের পরিমাণ জিডিপির ৩৩ দশমিক ৭০ শতাংশে উন্নীত হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত চলতি অর্থবছরের জিডিপির সাময়িক হিসাবের সার-সংক্ষেপ অনুযায়ী চলতি অর্থবছর জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগের হার ৩০ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি মাহবুবুল আলম টিবিএসকে বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ বিশ্বজুড়ে চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা না কমলে, এবং নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে– আগামী অর্থবছর বেসরকারিখাতে কাঙিক্ষত বিনিয়োগ সম্ভব হবে না।