মোবাইল ফোনে কথা বলার খরচ বাড়ছে, ১০০ টাকা রিচার্জে ৭২ টাকা পাবেন গ্রাহক
মোবাইল ফোনে কথা বলার ওপর বিদ্যমান শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এর অর্থ এখন থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলার খরচ আগের চেয়ে বাড়বে।
আজ বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় এ কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
বর্তমানে প্রতি ১০০ টাকার টকটাইম পেতে হলে ১৩৩ টাকা ২৫ পয়সা রিচার্জ করতে হয়। নতুন প্রস্তাবের কারণে ১০০ টাকার টকটাইম পেতে ১৩৯ টাকা রিচার্জ করতে হবে। আরও সহজভাবে বলা যায়, ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সরকার ২৮ টাকা শুল্ক-কর পাবে। বাকি অর্থের সমপরিমাণ টকটাইম পাবে গ্রাহক।
এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে মুঠোফোনে কথা বলার ওপর প্রথমবারের মতো ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। পরে তা একাধিক দফায় বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়।
কেবল মোবাইল ফোনের টকটাইম বা ইন্টারনেট নয়, ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক সম্পর্কিত যত ধরনের হার কমানো বা বাড়ানোর প্রস্তাব থাকে, তা বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই কার্যকর হয়। যদিও অর্থবছর শুরু হয় ১ জুলাই থেকে।
বিদ্যমান আইনে এটির আইনি বৈধতা থাকলেও বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই শুল্কহার কার্যকরের বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলের।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে টেলিকম সেক্টরে করের হার বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক বেশি। তাই আবারও মোবাইল ফোনের টকটাইম ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বাড়ানো একটি ভুল সিদ্ধান্ত।'
স্টেকহোল্ডাররা বলছেন, টকটাইম ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর কর আবারও বাড়ালে গ্রাহকদের ওপর বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষদের ওপর চাপ তৈরি হবে।
কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস-প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'এগুলো বিলাসবহুল আইটেম নয়। মানুষ প্রয়োজনের জন্য ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে। আবারও এর ও্পর করের হার বাড়ানো উচিত নয়।'
তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে এ খাতে করের হার উচ্চ। দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির শিকার মানুষ। তাই নতুন করে এ খাতে কর আরোপ করা উচিত হবে না।'
দেশের অন্যতম মোবাইল ফোন অপারেটর রবির চিফ কর্পোরেট ও রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম জানান, নতুন করে করের বোঝা এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তিনি বলেন, 'ইতিমধ্যেই এ খাতে করের হার উচ্চ। সার্বিকভাবে আমরা মনে করি যে কারণে করের হার বাড়ানো হচ্ছে, সেটি ফলপ্রসূ হবে না। কারণ কর বাড়ায় গ্রাহক তাদের খরচ কমিয়ে আনবে।'
গত মে মাসে টিবিএসের সাথে আলাপকালে অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মনসুর মোবাইল ফোনের খাতকে রাজস্ব কর্তৃপক্ষের জন্য 'সোনার হাঁস' বলে অভিহিত করেছিলেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, 'এ সিদ্ধান্তের কারণে এ খাতের সম্ভাবনা ও বিনিয়োগ কমতে পারে।'
অন্যদিকে সিমকার্ড বিক্রির সময় এখন ২০০ টাকা মূসক দিতে হয়; এটি বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্রমতে, বর্তমানে দেশে তামাকজাত পণ্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কের হার সবচেয়ে বেশি। এরপরই রয়েছে মোবাইল ফোন খাত।
২০২২-২৩ অর্থবছরে মোবাইল ফোন খাত থেকে ৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছিল এনবিআর।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত তথ্যানুযায়ী, দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যা ১৯ কোটিরও বেশি। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটিরও বেশি।