শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ছে ২৭ শতাংশ, যথেষ্ট নয় বলছেন শিক্ষাবিদরা
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে যা ২৭ শতাংশ বেশি।
তবে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এই বরাদ্দকে যথেষ্ট মনে করছেন না শিক্ষাখাতের বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, করোনা মহামারিতে শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার ক্ষতি এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি, তার ওপর মূল্যস্ফীতির কারণে স্টেশনারি পণ্য ও শিক্ষা উপকরণের দামও অনেক বেড়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার শিক্ষাখাতের জন্য ৯৪ হাজার ৭১১ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৭৪ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা।
এই বরাদ্দ প্রস্তাবিত বাজেটের ১১.৯ শতাংশ হলেও, তা জিডিপির মাত্র ১.৭ শতাংশ।
গত দুই দশক ধরে বাজেটে শিক্ষাখাতে জিডিপির ২ শতাংশের কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালে ইউনেস্কো সদস্য দেশগুলোর গৃহীত 'এডুকেশন ২০৩০ ফ্রেমওয়ার্ক ফর অ্যাকশন" এর চেয়ে অনেকটাই কম। ওই রূপকাঠামোয় সরকারগুলোর প্রতি তাদের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির অন্তত ৪ থেকে ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ করার তাগিদ রয়েছে।
শিক্ষাখাতে জিডিপি অনুপাতে বরাদ্দের দিক থেকে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে কেবল শ্রীলঙ্কার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, এই অঞ্চলে বরাদ্দে শীর্ষে রয়েছে ভুটান, ২০২২ সালে দেশটি তার জিডিপির ৮.১৪ শতাংশ বিনিয়োগ করছে শিক্ষায়। এরপরেই রয়েছে মালদ্বীপ (৪.৫৮ শতাংশ), নেপাল (৩.৬৫ শতাংশ) এবং পাকিস্তান (১.৯৭ শতাংশ)।
তবে ২০২১ সালে ভারত শিক্ষাখাতে জিডিপির ৪.৬৪ শতাংশ বরাদ্দ দেয়। আর ২০১৭ সালে আফগানিস্তানের বরাদ্দ ছিল ৪.৩৪ শতাংশ।
এই বাস্তবতায় নতুন অর্থবছরে এমপিও-ভুক্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঞ্চয়ী ও স্থায়ী আমানতে সুদের ওপর করহার বাড়ানোর প্রস্তাবের সমালোচনাও করেছেন শিক্ষাবিদরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ টিবিএসকে বলেন, "দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতো শিক্ষকদেরও জীবন-জীবিকাও চাপে আছে। ঠিক এ সময় যদি আবার সেভিংস থেকে উৎসে কর ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়, তাহলে তা হবে মরার উপর খাড়ার ঘা।"
"অন্যদিকে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ভেতরে শিক্ষকদের ঢোকানোর চেষ্টা চলছে, যার কারণে গণ-অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় আবার সেভিংসের উপর হাত দিলে মানসিক বিরুপ প্রতিক্রিয়া হবে, যার কারণে শিক্ষকরা শ্রেণি কার্যক্রমে শতভাগ মনোযোগ দিতে পারবেন না।"
তিনি আরো বলেন, "জীবনযাত্রার ব্যয় মেটানোর জন্য যদি শিক্ষকতার বাইরেও বেশিরভাগ শিক্ষককে ছোটাছুটি করতে হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের শতভাগ পাবেন না।"