গুদামে রাখা ফসলের বিপরীতে এখন ঋণ নিতে পারছেন কৃষকরা
সরকারি গুদামে থাকা ফসলের বিপরীতে এখন ব্যাংক ঋণ নিতে পারছেন কৃষকরা। গুদামে জমা থাকা ফসলের মূল্যের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত এই ঋণ নেওয়া যাচ্ছে।
এতে অর্থের প্রয়োজনের সময় লোকসানে ফসল বিক্রির প্রবণতা থেকে কৃষকরা বেরিয়ে আসতে পারবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বোরো ধান কাটার পরপরই তা বিক্রি করে দেওয়ার একটি প্রবণতা দেখা যায় কৃষকদের মধ্যে। কারণ তাদের ওপর ধান বিক্রি করে সেচ, সার, জামি চাষের বিপরীতে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধের চাপ থাকে।
কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রচুর সরবরাহ থাকার কারণে ধানের দাম পড়ে যায়, তখন উৎপাদন খরচের নিচে গিয়ে শস্য বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষক। শুধু ধান নয়, অন্যান্য মৌসুমি দানাদার ফসলের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি একই।
তবে এখন সেই পরিস্থিতিতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কৃষকদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। তাদের নির্মিত প্রায় ৮১টি গুদামে কৃষকরা ধান রেখে, তার বিপরীতে ব্যাংক ঋণ নিতে পারছেন খুব সহযেই— যা দিয়ে জমি চাষ বা সেচের বকেয়া খরচ সহজেই পরিশোধ করতে পারছেন তারা। এতে করে যখন ধানের পণ্যের ন্যায্য দাম ওঠে, তখন তা বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।
মঙ্গলবার (১১ জুন) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত 'শস্য গুদাম আধুনিকীকরণ ও ডিজিটালাইজেশন প্রকল্পের' আওতায় আয়োজিত এক ওয়ার্কশপ থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্পের পরিচালক ড. ফাতেমা ওয়াদুদ।
জানা গেছে, প্রকল্পটি ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত চলবে। এরমধ্যে গুদামগুলোর আধুনিকায়ন করার কাজ করা হচ্ছে। ২৭ জেলার ৫৬টি উপজেলায় মোট ৮১টি গুদামের মাধ্যমে এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কৃষকরা তাদের শস্যের পরিমাণের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন।
প্রকল্পের পরিচালক ড. ফাতেমা ওয়াদুদ তার উপস্থাপনায় বলেন, "২০১৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মোট ১৮,১৮৯ জন কৃষক ২০,৩৭৭ মেট্রিক টন শস্য জমা রেখেছে এবং এই কৃষকরা ঋণ পেয়েছে ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশি।"
প্রতি বছর গড়ে ৪,১১৬ জন কৃষক পরিবার ৪,০০৩ মেট্রিক টন শস্য জমার বিপরীতে ৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। সোনালী, রুপালী, অগ্রণী, জনতা ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসব ঋণ প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ফাতেমা ওয়াদুদ বলেন, "দানাদার শস্য সংগ্রহের পর কৃষকদের নগদ টাকার প্রয়োজন হয় বিধায় সংগ্রহের সময় শস্য বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। ব্যাংক থেকে শস্য জমার বিপরীতে ঋণ গ্রহণ করার ফলে নগদ টাকার প্রয়োজন মিটবে।"
তিনি বলেন, "শস্য গুদাম ঋণ কার্যক্রম গুদামে দানাদার শস্য সংরক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে খাদ্য মজুদ ও নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। কৃষকদের বিপণন সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং বাজারে সুবিধামত সময়ে দানাদার শস্য বিক্রি করে মূল্য সুবিধা নিতে পারবে।"
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ করিম বলেন, "প্রকল্পটির মাধ্যমে ১৭,৭১০ টন স্টোরেজ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে; এর মধ্যমে নিশ্চিত হবে– প্রতিটি গুদাম এবং এর সঙ্গে জড়িত কৃষকরা ২২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারবেন।"