আম নিয়ে টোল-চাঁদাবাজির দুশ্চিন্তা কাটে না পাহাড়ের ব্যবসায়ীদের
পাহাড়ের আমের খ্যাতি সারা দেশে। খাগড়াছড়ি থেকে সুস্বাদু, বিষমুক্ত ও ফরমালিনবিহনী আম্রপালি, রাঙ্গুইসহ নানা জাতের আম যাচ্ছে দেশব্যাপী। তবে তুলনামূলক ফলন ভালো হলেও ফলচাষিদের দুশ্চিন্তা কমছে না।
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে খাগড়াছড়ির আম যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কিন্তু এই আম সরবরাহ করতে গিয়ে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে 'চাঁদাবাজি'। চাষিদের অভিযোগ, আম পরিবহন করতে গিয়ে বিভিন্ন সংস্থা সড়কে টোলের নামে অধিক টাকা আদায় করছে। এক্ষেত্রে টোল ইজারাদারদের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সক্রিয় বলে অভিযোগ করেন তারা।
ফল চাষিরা জানান, খাগড়াছড়ির আম বিষমুক্ত ও ফরমালিনবিহীন হওয়ায় খাগড়াছড়ি আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আম সারা দেশে বেশ সমাদৃত এই কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে আম সংগ্রহ করে নিয়ে যান। কিন্তু প্রতি কেজি আমের যে দাম, সে পরিমাণ চাঁদা দিতে হয় বলে তারা এখান থেকে আম সংগ্রহ করতে চান না। এছাড়াও কাঁঠাল, কলাসহ অন্য ফলের ক্ষেত্রে একই চিত্র বলে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, আম পরিবহনের সময় পার্বত্য জেলা পরিষদ, খাগড়াছড়ি পৌরসভা, রামগড় পৌরসভা ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার টোল ইজারাদাররা অতিরিক্ত হারে ট্যাক্স (টোল) আদায় করছেন। এছাড়া বাজার ফান্ডের বাজার ইজারাদাররাও বাড়তি টোল আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর একাধিক আঞ্চলিক দলের চাঁদা তো আছেই।
খাগড়াছড়ি ফলদ বাগান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তরুণ আলো দেওয়ান বলেন, প্রতি বছর আম কিনতে বাইরে থেকে যে পরিমাণ ব্যবসায়ী আসেন, দিন দিন তা কমে যাচ্ছে। এক কেজি আমের সমপরিমাণ কিংবা তারও বেশি টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে টোল হিসেবে দিতে হয়।
ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুলতান আহম্মেদ বলেন, '২০ কেজি বা এক ক্যারেট আমে ৫ টাকা টোল নির্ধারণ থাকলে রামগড় উপজেলার সোনাইপুল, মানিকছড়ির গাড়িটানা টোল কেন্দ্রে ২০ টাকা করে নিয়ে থাকে। টোল আদায়ের কোনো রশিদও দেওয়া হয় না। অতিরিক্ত টাকা দিতে না চাইলে আম রেখে দেওয়া কিংবা মারধরও করা হয়। এদিকে খাগড়াছড়ি পৌরসভাও ১৫থেকে ২০ টাকা সংগ্রহ করে থাকে।'
ফল বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রতিটি আম বা ফলের ট্রাক খাগড়াছড়ি থেকে ফেনী বা চট্টগ্রামে পৌঁছাতে টোল ও ট্যাক্সের নামে চাঁদা আদায় করা হয় ১৫-১৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি পৌরসভা ছোট ট্রাক ৪-৫ হাজার টাকা, বাজার ফান্ড প্রতি গাড়ি ৩০০ টাকার স্থলে নেওয়া হয় দেড় হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।
রামগড়ের সোনাইপুল ও মানিকছড়ির গাড়িটানায় পার্বত্য জেলা পরিষদের টোলে ফলের বড় গাড়ি থেকে নির্ধারিত ৫০০ টাকার স্থলে ৮ হাজার টাকা, ছোট ট্রাক থেকে ৪০০ টাকার স্থলে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে বিনা রশিদে। এছাড়া টহল পুলিশ, মাটিরাঙ্গা, রামগড় থানা পুলিশ, ফটিকছড়ি থানা পুলিশের নামেও চাঁদা তোলা হয় বলেও অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা।
ফলদ বাগান মালিক সমিতির উপদেষ্টা অনিমেষ চাকমা রিংকু বলেন, 'আমরা বাগান করে নিজেদের অসহায় মনে করছি। সারা বছর এত কষ্ট করে বাগান করি। ঘরে ফল তোলার সময় আমার লাভের প্রায় পুরো টাকা চাঁদার নামে, টোলের নামে নিয়ে নিচ্ছে।'
খাগড়াছড়ি মারমা ফলদ বাগান মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক বাবুর্শি চৌধুরী বলে, 'আমরা টোল দেব না বলছি না। আমরা চাই সব দপ্তর এক হয়ে টোল নির্ধারণ করে দিক। কারা অধিক হারে টাকা নিচ্ছে, প্রশাসনসহ সবাই জানে। কিন্তু কেউ তো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আর একাধিক ভেতর পার্টিকে (আঞ্চলিক দল) তো চাঁদা না দিয়ে ব্যবসার কথা চিন্তাই করা যায় না।'
এদিকে গত ১০ জুন অতিরিক্ত টোল আদায়ের প্রতিবাদে মানবন্ধন করেছেন খাগড়াছড়ির বাগান মালিক ও ফল ব্যবসায়ীরা। পরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, 'আমি সহসা সব দপ্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে বসব। কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।'
এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি টোল ইজারাদার সংশ্লিষ্টরা।