ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় চান ব্যবসায়ীরা, ব্যাংকাররা শঙ্কায়
দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটের মধ্যে ব্যবসায়ীরা সব ধরনের ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় চাইছেন। ব্যবসায়ীদের এমন সুবিধা দেওয়া হলে ব্যাংকগুলোর জন্য তারল্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে মনে করছেন ব্যাংকারা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে কারফিউ ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা থাকায় ব্যবসায়ীদের ব্যাপক আর্থিক লোকসান গুনতে হয়েছে। দেশের এমন পরিস্থিতিতে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে প্রভাব পড়ার কারণে তারা ঋণ পরিশোধে এমন সুবিধা চাইছেন ব্যাংকগুলোর কাছে।
সাম্প্রতি দেশের ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অভ ব্যাংকস-এর (বিএবি) পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় পেতে একটি প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এ বিষয়টি কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিবিএসকে বলেন, 'ব্যাংক চেয়ারম্যানদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় চেয়ে একটি পত্র তৈরি করা হয়েছে। তারা খুব শিগগিরই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এই চিঠি পাঠাবেন।'
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের ব্যাংকগুলোও নানা সমস্যার মুখোমুখি। দীর্ঘদিন ধরে বেশ কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটে রয়েছে, এখন এটা আরও প্রকট হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'গত এক সপ্তাহ ধরে রেমিট্যান্স খুবই কম আসছে। দেশের সহিংসতার পরিপেক্ষিতে প্রবাসীদের বিরাট একটা অংশ বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেটিম্যান্স না পাঠাতে। আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহে এটা ঠিক হয়ে যাবে।'
এই অভিজ্ঞ ব্যাংকার বলেন, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিন ঋণ পরিশোধে ছাড় দিতে হয়েছে। নতুন করে আবার ঋণ পরিশোধে ছাড় দেওয়া হলে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট বাড়বে।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে টানা পাঁচ দিন বন্ধ ছিল ব্যাংকগুলো। ওই সময় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ও অর্থ সংকটের কারণে বেশিরভাগ গ্রাহক এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারেননি।
এর ফলে ব্যাংক খোলার পরপরই নগদ টাকার চাহিদা বেড়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
এমন পরিস্থিতিতে এক দিনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা ধার দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সাম্প্রতিক সময়ের শাটডাউনের বড় প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। এতে নির্ভরযোগ্য ও স্থিতিশীল হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতির যে ভাবমূর্তি, সেটিও ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। রোববার এসব কথা বলেন তারা।
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সভাপতি জাভেদ আখতারের প্রাক্কলন অনুযায়ী, সাম্প্রতিক শাটডাউনের অর্থনৈতিক প্রভাব প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের হতে পারে, যা আরও বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে আনতে সরকারের কাছে বেশ কিছু সহায়তা চেয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। এরমধ্যে ব্যবসা পরিচালনা সহজ করার জন্য সহায়তা বাড়ানো, বন্দরে ক্ষতিপূরণ মাশুল মওকুফ করা, রাজস্ব কর্মকর্তাদের হয়রানি বন্ধ করা এবং বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের আস্থা ফেরাতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন তারা।
রোববার ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যাংকিং ইস্যুতে ঋণ পরিশোধে বাড়তি সময়, ঋণ রিশিডিউল ও কম সুদের হার চান।
জরুরি পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী শাটডাউনের ক্ষেত্রে একটি বিকল্প ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এটি একটি ভালো পরামর্শ বলে মন্তব্য করেন সালমান এফ রহমান।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিবিএসকে বলেন, ব্যাংকগুলো গত দুই বছর ধরে তারল্য সংকেটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, 'বাজারে যে ব্যাংকগুলো প্রধান ঋণদাতা ছিল, তারাও এখন ঋণের ওপরে আছে। এর মধ্যে নতুন করে ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধে ছাড় দেওয়া অযৌক্তিক।'
উল্লেখ্য, দেশের ব্যবসায়ীরা করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ না করেও খেলাপি হননি।
পরে ২০২১ সালে সব ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে কিস্তির মাত্র ১৫ শতাংশ পারিশোধ করে খেলাপি হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন ঋণগ্রহীতারা। ২০২২ সালেও পরিশোধিত মোট কিস্তির মাত্র ৫০ শতাংশ পরিশোধ করার সুযোগ পান ব্যবসায়ীরা।