কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে মেয়াদি ঋণের কিস্তি পরিশোধে সময় বাড়ানোর অনুরোধ ব্যাংক মালিকদের
দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতি সচল রাখার কথা উল্লেখ করে মেয়াদি ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় আরও ৬ মাস বাড়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। যদিও এই অনুরোধের বিরোধিতা করেছেন সংগঠনের একাধিক সদস্য।
সংগঠনটির চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার স্বাক্ষরিত চিঠিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গত ৩১ জুলাই পাঠানো হয়। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন আব্দুর রউফ তালুকদার। সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে পরে তিনি পদত্যাগ করেন।
বিএবি চিঠিতে উল্লেখ করে— 'মেয়াদি ঋণ কিস্তি পরিশোধের নির্ধারিত তারিখ থেকে পরবর্তীতে ৬ মাস পর থেকে ওভারডিউ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তবে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নিয়ম বদল করেছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে, ৩ মাস পর হলে এবং আগামী বছরের ৩১ মার্চ থেকে পরিশোধের নির্ধারিত তারিখের পরদিন থেকেই ওভারডিউ পিরিয়ড ধরা হবে বলে জানানো হয়।'
বিএবি বলছে, 'বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালের পরিবর্তে আগামী বছরের ৩১ মার্চ থেকে কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তা আছে।'
অর্থাৎ বিএবি চাইছে, কার্যকরের দিনটি সেপ্টেম্বরে না করে যেন আরও ৬ মাস বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
ব্যাংক ঋণ খেলাপি হওয়ার আগের ধাপ হলো 'ওভারডিউ'। কোনো ঋণের কিস্তি পরিশোধ অনিয়মিত হয়ে গেলে সেটি মেয়াদোত্তীর্ণ বলে গণ্য হয়। এ ধরনের ঋণই পরবর্তী সময়ে যুক্ত হয় খেলাপির খাতায়।
এছাড়া সব আনক্লাসিফায়েড এবং রিশিডিউল্ড (পুনঃতফসিল) ঋণের কিস্তি চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিফার্ড হিসেবে বিবেচনার অনুরোধও জানিয়েছে বিএবি। মেয়াদপূর্তির শেষ তিন মাসে এসব টাকা তিনভাগে পরিশোধ করা হবে।
তবে, বিএবির বেশ কয়েকজন সদস্য জানিয়েছে, এই চিঠি দেওয়ার আগে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। তারা জানান, "সাধারণত বিএবিতে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। চেয়ারম্যান নিজের ইচ্ছামতো সংগঠনটি চালান।"
দেশের যে ব্যাংকগুলো এখন ভালো করছে, এসব ব্যাংকের অংশগ্রহণ সংগঠনের এক্সিকিউটিভ কমিটিতে খুব বেশি নেই। ফলে এই চিঠির উল্লেখিত দাবিগুলো সব ব্যাংকের দাবি কিনা, এ বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তারা।
চিঠির দাবিগুলো খুব 'রিগ্রেসিভ' মন্তব্য করে একটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, "ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং তার পরবর্তী অস্থিরতার কারণে অবশ্যই ব্যবসায়ের ক্ষতি হয়েছে। তবে এর কারণে এমন কোনো ক্ষতি হয়নি যে ব্যবসায়ীদের এমন সুবিধা দিতে হবে। সুশাসন নিশ্চিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপগুলো খুবই ভাল ছিল, এর বাইরে না গেলেই ভালো।"
প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান তানজিল চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এ ধরনের সুবিধাগুলো ব্যবসায়ীদের টেম্পরারি ব্রিডিং স্পেস দিতে পারে। তবে এটা টেকসই না। টেকসই সমাধানের দিকে যেতে হলে একটা ব্যাংকের পোর্টফলিও অনুযায়ী ওনার্স ক্যাপিটাল ঠিকমতো আছে কিনা, লিকুইডিটি কভারেজ রেশিও (এলসিআর), অ্যাডভান্সেস টু ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) বা ব্যাংকের দায় অনুযায়ী সম্পদ আছে কিনা আমাদের দেখতে হবে। যে ব্যাংকের এসব প্যারামিটারগুলো ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলোতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব না দেখে ঢালাও সুবিধা দিয়ে কোনো লাভ হবে না।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের বুঝতে হবে, ব্যাংকগুলোর পুঁজি খুব বেশি নেই। তারা সাধারণত ডিপোজিটরদের টাকা নিয়ে ব্যবসা করে।"
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব সুবিধা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ আইএমএফের থেকেও এ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নতুন সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করবে।
এ বিষয়ে জানতে বিএবি চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদারকে একাধিকবার মোবাইলে কল ও মেসেজ দেওয়া হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।