ইসলামী ব্যাংকে ইসলামি মূল্যবোধসম্পন্ন বোর্ড থাকতে হবে: সমাবেশে গ্রাহকরা
ইসলামের সেবা করার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে ইসলামি মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখেন, এমন ব্যক্তিদের দ্বারা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড পরিচালিত হওয়া উচিত বলে দাবি করেছেন ব্যাংকটির গ্রাহকদের একাংশ।
শনিবার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে 'গ্রাহক সমাবেশ'-এ এসব কথা বলেন তারা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, 'ইসলামী ব্যাংকে ইসলাম থাকতে হবে। তাহলেই ইসলামী ব্যাংক ভালো চলবে। ব্যাংকটি যারা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তারা ইসলামের খেদমত করতে চেয়েছিলেন। বিদেশি যেসব বিনিয়োগকারী এসেছিল, তারাও ইসলামের খেদমত করার জন্য এসেছিল। কিন্তু যখন তারা দেখেছে ব্যাংকটি অন্যায়ভাবে দখল হয়েছে, এরপর ব্যাংক থেকে ইসলাম বিদায় নিল, তখন তারাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
'আমি গভর্নরকে অনুরোধ করব, ২০১৭ সালের আগে যারা বোর্ডে ছিলেন অথবা যাদের মধ্যে ইসলাম রয়েছে, এমন যোগ্য ব্যক্তিদেরকে দিয়ে ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করুন।'
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, যারা ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিল, তারা কর্মীদের কম বেতন দিতেন, কম খরচ করতেন। এভাবে তারা অনেক সম্পদ জমা করেছিলেন, যাতে ইসলামি অর্থনীতির শক্ত ভিত্তি গড়ে ওঠে।
'এটিই ইসলামী ব্যাংকের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। লুটেরা গোষ্ঠী যখন দেখল এখানে অনেক সম্পদ জমা আছে, তখন তারা সেটি দখলের পাঁয়তারা শুরু করল। একে একে সবগুলো ইসলামি ব্যাংক দখল হয়ে গেল। একসময় ইসলামী ব্যাংক অন্য ব্যাংককে ধার দিত। এখন ব্যাংকটিকে ধার করে চলতে হচ্ছে,' বলেন তিনি।
আবু আহমেদ আরও বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকটিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। এভাবে বেশি দিন চলতে পারে না। তাই গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে হবে। যদি তারা দেখে আমানতের নিরাপত্তা রয়েছে, তাহলে আবার ইসলামী ব্যাংকে টাকা রাখতে শুরু করবে। তারা দেখবে না কত মুনাফা দেওয়া হলো।'
প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাকদের নিয়ে আয়োজিত গ্রাহক সমাবেশে বক্তব্য দেন ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এ সময় এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, ইসলামী ব্যাংককে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আগের ব্যবস্থাপকদের পুনর্বহাল করতে হবে। কারণ ২০১৬ সালের পরে ইসলামী ব্যাংকের কোন সফলতা নেই, আছে শুধু লুটপাটের ইতিহাস।
তারা আরও বলেন, অ-ইসলামি লোকের কাছে ইসলামী ব্যাংক নিরাপদ নয়—এটি ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। তাই 'ঈমান-আকিদাসম্পন্ন' লোক দিয়ে ব্যাংকটি পরিচালনা করতে হবে।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তিনি প্রথাগত (সুদভিত্তিক) ব্যাংকিংয়ে পটু হলেও তাকে দিয়ে ইসলামি ব্যাংকিংয়ে চলতে পারে না। তিনি বিগত সরকারের সুবিধাভোগী। তিনটি সুদভিত্তিক সরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন। তাকে এস আলমের পেইড এজেন্ট বলেও অভিযুক্ত করেন তারা।
নবগঠিত বোর্ডের সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করে দেওয়া বোর্ড দিয়ে কোনো উন্নতি হবে না।
সভা শেষে গভর্নর বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এতে ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করার দাবি জানানো হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, যারা ইসলামী ব্যাংক তৈরি করেছেন, তাদের কাছেই ব্যাংকটি নিরাপদ।
গ্রাহক সমাবেশ থেকে ইসলামি ব্যাংকিং আইন প্রণয়নের জন্যও দাবি জানিয়ে বলা হয়, 'শুধু গাইডলাইন দিয়ে এত বড় ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা চলতে পারে না।'