বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার করে পাওয়ার আশা সরকারের
অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এক বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার মৌখিক সম্মতি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এছাড়া এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকও এক বিলিয়ন ডলার সহায়তার অনুরোধে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বর্তমানে বকেয়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানি বিল পরিশোধের জন্য এ দুই বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পেতে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবনা তৈরির কাজ শুরু করেছেন।
এখন পর্যন্ত মূলত প্রকল্প ঋণের অর্থায়নকারী জাপানও বাজেট সহায়তার জন্য সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়েছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)-এর কাছ থেকে ২.৭ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার জন্য উইশ লিস্ট প্রস্তুত করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-এর ইতোমধ্যেই সম্মত হওয়া ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়াও সরকার সংস্থাটি থেকে আরও তিন বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার চেষ্টা করছে।
এছাড়া এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকসহ (এআইআইবি) অন্যান্য ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকেও ঋণ চাইছে বাংলাদেশ।
অর্থবিভাগের সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাইসারের ঢাকা সফরে মৌখিকভাবে সম্মতি দেওয়া ১ বিলিয়ন ডলার সহায়তার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং নতুন অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভার অন্যান্য উপদেষ্টারা দেশের জরুরি অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করতে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
এসব প্রতিনিধিরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। বিদেশি বকেয়া মেটাতে এবং রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে বিদেশি ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা বেশ আশাবাদী হয়ে উঠছেন। সরকারের প্রস্তাবে সংস্থাগুলোও বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে।'
'প্রত্যাশিত বাজেট সহায়তা পাওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে সরকারি আমদানির বকেয়া বিল পরিশোধ করার পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত করা হবে,' বলে আশা প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানি বিল নিয়ে বিদেশি সরবরাহকারীদের চাপে রয়েছে জ্বালানি বিভাগ। বিলম্বের কারণে ভারত কয়েকবার বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ২১ আগস্ট বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেকের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকের পর কবির সাংবাদিকদের বলেন, 'বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানি খাতে এখনও ২.২ বিলিয়ন ডলার বকেয়া আছে। আমরা এটি মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার সহায়তার অনুরোধ করেছি।'
এর আগে ১৩ আগস্ট অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদও আবদুলায়ে সেকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেখানেও বাজেট সমর্থন নিয়েও আলোচনা হয়েছিল।
বৈঠকের পর সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, 'অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য আমি বিশ্বব্যাংকের কাছে ব্যাপক সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছি। তারা বাংলাদেশের জনগণের জন্য তাদের সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছে।'
১৯ আগস্ট ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরির সঙ্গে সাক্ষাতের পর অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'এতদিন পর্যন্ত জাপান মূলত প্রকল্প সহায়তা দিয়েছে। আমরা এখন তাদের কাছে বাজেট সমর্থন চেয়েছি এবং তারা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।'
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৯ আগস্ট সন্ধ্যায় বাংলাদেশে আইএমএফ মিশন চিফ ক্রিস পাপাজর্জিও এবং আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দের সঙ্গে জুমে বৈঠক করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। সেখানেও আইএমএফ থেকে অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আইএমএফ-এর সঙ্গে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির অধীনে ইতোমধ্যে তিন কিস্তিতে ২.৩ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে সংস্থাটি।
পাকিস্তান সম্প্রতি আইএমএফ থেকে সাত বিলিয়ন ডলারের বেলআউট প্রোগ্রাম পেয়েছে। তাই বাংলাদেশও সংস্থাটি থেকে অতিরিক্ত তিন বিলিয়ন ডলার পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।
বিবিসির সঙ্গে সাম্প্রতিক এক আলাপচারিতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আইএমএফ থেকে আরও তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
অর্থ উপদেষ্টা, ও গভর্নর আগামী অক্টোবরে ওয়াশিংটনে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বোর্ডসভায় আইএমএফ-এর সঙ্গে এ সম্ভাব্য নতুন ঋণ নিয়ে আলোচনা করার পরিকল্পনা করেছেন।
তার আগে অক্টোবরে আইএমএফ-এর একটি পর্যালোচনা মিশনের বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে, সেখানে বিষয়টি আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।