এস আলম ও নাফিজ সরাফাতের ৬ ব্যাংকে আটকা চট্টগ্রাম বন্দরের এফডিআরের ১,১৪৪ কোটি টাকা
ঋণ কেলেঙ্কারির শিকার আট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখা এফডিআরের ১ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এই টাকার বড় একটি অংশ—১ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা—বিনিয়োগ করা হয়েছে বিতর্কিত এস আলম গ্রুপ ও আরেক আলোচিত ব্যবসায়ী চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের মালিকানাধীন ছয়টি ব্যাংকে।
গত ২৯ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া একটি চিঠিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ লিখেছে, এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন পাঁচ ব্যাংকে রাখা ৯৬৫ কোটি টাকার এফডিআর ফেরত পাচ্ছে না তারা। এছাড়া নাফিজ সরাফাতের পদ্মা ব্যাংকে আটকে গেছে সংস্থাটির ১৭৯ কোটি টাকা।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্ষদ বদলে দেওয়ার আগে পরিচালনা পর্ষদে এস আলম গ্রুপের প্রতিনিধি থাকা পাঁচ ব্যাংক হচ্ছে—ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক।
নাফিজ সরাফাত আগে পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন, কিন্তু আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে চলতি বছরের শুরুতে পদত্যাগ করেন।
বর্তমানে ব্যাংকটিতে শুধু শেয়ার রয়েছে নাফিজ সরাফাতের।
টিবিএসের হাতে আসা নথি বলছের, ব্যাংকগুলোকে সর্বশেষ গত ২২ জুলাইয়ের মধ্যে এফডিআর নগদায়ন করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করার কথা বলা হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলো তা করেনি।
আমানতের অর্থ ফেরত পেতে গত ২৭ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন।
ওই সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আমানত ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা জানাতে পারেনি। কয়েকটি ব্যাংক জানুয়ারি থেকে, কয়েকটি ব্যাংক নভেম্বর থেকে ধাপে ধাপে টাকা পরিশোধ করার কথা বলেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি চেয়েও পায়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, অর্থাভাবে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, হেভি লিফট জেটি, বে টার্মিনাল প্রকল্পসহ তাদের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ব্যয় নির্বাহ করা দুরূহ হয়ে পড়ছে।
সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, কোনো ব্যাংক এফডিআরর হিসাবে রাখা অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে সেসব ব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রচলিত বিধি-বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল ছাড়াও তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন ও ভবিষ্য তহবিলের অর্থ এসব ব্যাংকে রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সেক্রেটারি মো. ওমর ফারুক টিবিএসকে বলেন, 'ইউনিয়ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ চারটি ব্যাংকে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রায় ৯০০ কোটি টাকা স্থায়ী আমানত রয়েছে।
'আমরা এই ব্যাংকগুলোকে টাকা ফেরত দিতে অনুরোধ করেছি। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছি। ব্যাংকগুলো টাকা পরিশোধের জন্য বাড়তি সময় চেয়েছে। এ বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককেও জানিয়েছি।'
এ অবস্থায় আটকে পড়া এফডিআরের মোট ১ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা দ্রুত ফেরত পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে চিঠি লিখে সহায়তা চেয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান ২৯ আগস্ট পাঠানো চিঠিতে বলেন, এসব ব্যাংকে এফডিআর রাখা ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
চিঠিতে বলা হয়, ইউনিয়ন ব্যাংকে ৪২১ কোটি টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ২১২ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ১৯১.৭৬ কোটি টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ১১৫ কোটি টাকা ও ন্যাশনাল ব্যাংকে ২৫ এফডিআর রেখেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকে ১৩৭ কোটি টাকা ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ-এ (আইসিবি) ৭২ কোটি টাকার বেশি রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের। এসব প্রতিষ্ঠানও টাকা ফেরত দিচ্ছে না।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ও নাফিজ সরাফাতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি বদলে যায়।