এস আলম কত টাকা কর পরিশোধ করেন?
দেশের আর্থিক খাতের সবচেয়ে সমালোচিত প্রতিষ্ঠান এখন এস আলম গ্রুপ। গ্রুপটির চেয়ারমানের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অন্তত ১.৫ লাখ কোটি টাকা ঋণ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এর (এনবিআর) আয়কর ও আমদানি শুল্ক আদায় হয়েছে যথাক্রমে ১.৩১ লাখ কোটি ও ১.০৮ লাখ কোটি টাকা।
কিন্তু এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ আসলে কত টাকা কর পরিশোধ করেন?
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ ব্যবসায়ী দেশের সবচেয়ে সমালোচিত চরিত্রগুলোর একটিতে পরিণত হন। এর পরই তার কর সম্পদ ও পরিশোধ নিয়ে এসব প্রশ্ন উঠছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দাখিল করা ট্যাক্স রিটার্নে এস আলমের নিট সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ রয়েছে ২৭৯.৫২ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে তার করযোগ্য আয়ের পরিমাণ ছিল ১৯.২০ কোটি টাকা; যার বিপরীতে তিনি ৬.২৯ কোটি টাকা আয়কর পরিশোধ করেন।
ওই একই অর্থবছরের আয়কর বিবরণীতে এস আলমের ভাই আব্দুস সামাদ তার সম্পদ উল্লেখ করেছেন ৩০.৩৩ কোটি টাকা। সে বছর তার করযোগ্য আয় দেখানো হয়েছে ৪.৮৬ কোটি টাকা; যার বিপরীতে তিনি কর পরিশোধ করেছেন ১.৪৬ কোটি টাকা।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই অডিট করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অডিটের সঙ্গে যুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, 'এস আলম সিমেন্টের নামে নেওয়া ঋণের অডিট করার সময় আমরা সাইফুল আলম ও আবদুস সামাদের ট্যাক্স রিটার্ন-সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছি।'
কর আইনজীবী প্রিয় দে টিবিএসকে বলেন, দুই বছর আগে যে ব্যক্তির নিট সম্পদের পরিমাণ ২৮০ কোটি টাকা ছিল, বছরে ১৫-২০ শতাংশ বেড়ে বর্তমানে তা হবে সর্বোচ্চ ৪০০-৫০০ কোটি হবে।
'পরিবারের অন্যান্য সদস্য, যেমন সাইফুল আলমের ভাই আব্দুস সামাদের সম্পদ ৩০ কোটি টাকা। সাইফুল আলমের স্ত্রী, সহোদর ও দুই ছেলের সম্পদ মিলে হয়তো আরও ৫০০ কোটি টাকা হবে। অর্থাৎ এস আলম পরিবারের ঘোষিত সম্পদের পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ১ হাজার কোটি টাকা,' বলেন তিনি।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, এই ঋণ উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে অনেকগুলো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এরপরও এসব পদক্ষেপ সফল হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
'কারণ এস আলমের গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম, তার পরিবার, স্বজন ও নামে-বেনামে যে ঋণ নিয়েছে, তার বেশিরভাগই দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে। পাচার হওয়া অর্থগুলো আর দেশে বা ব্যাংকে ফেরত আসবে না—এটাই বাস্তবতা। তবে ব্যাংকগুলোকে কোনোমতে আবার চালু করা বা চলমান সংকট থেকে রক্ষা করাই হবে এই মুহূর্তের প্রধান কাজ,' বলেন তিনি।
ইসলামী ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণের অর্ধেকের বেশিই নিয়েছে এস আলম গ্রুপ ও এর সহযোগী কোম্পানিগুলো।
ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে অন্তত ৭৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে ব্যাংকটির চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে—যার পরিমাণ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা।